Dr.Liakat Ali

Published:
2024-05-06 20:10:25 BdST

প্রয়াত শিব নারায়ণ দাস বেঁচে রইলেন কালাম ও মশিউরের চোখ হয়ে


 

 

ডেস্ক
_____

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস গত ১৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়াত হন । এই মহৎ ব্যক্তি জীবদ্দশায় তাঁর দুইটি চোখ দান করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সোসাইটি কর্তৃক তাঁর চোখ থেকে কর্ণিয়া সংগ্রহ করে রংপুরের মশিউর রহমান এবং চাঁদপুরের আবুল কালাম নামের দুইজন ব্যক্তির চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ফলে এই দুইজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি তাঁদের চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন। এই ক্ষণজন্ম ব্যক্তিটির দানকৃত কর্ণিয়া সফল প্রতিস্থাপনের বিষয়টি দেশের জনসাধারণের মধ্যে প্রচার এবং সকলকে এই বিষয়ে উদ্ধুদ্ধকরণের জন্য আজ ০৬ মে ২০২৪ তারিখ সোমবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হক। উপাচার্য বলেন, দেশের মানুষের চোখের কর্ণিয়া দান করার ব্যাপারে কুসংস্কার কাজ করে। মানুষ মনে করে পুরো চোখ উঠিয়ে ফেলবে, চেহারা বিকৃত হবে, যা আত্মীয়স্বজনরা মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়। চোখের কর্ণিয়া সংগ্রহ করতে চেহারা বিকৃত হয় না। মাত্র ১০ মিনিট সময়ে কর্ণিয়া সংগ্রহ করা হয়। তবে মানুষ এখন আস্তে আস্তে কর্ণিয়া দানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শিবনারায়ণ দাস কর্ণিয়া দান করে গেছেন। তাঁর দেহও দান করে গেছেন। এক চোখের কর্ণিয়া চাঁদপুরের মশিউর রহমানের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অন্য চোখের কর্ণিয়া রংপুরের আবুল কালামের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য বলেন, আমাদের দেশে শ্রীলঙ্কা, নেপাল থেকে কর্নিয়া আসে। তবে অনেকসময় কর্ণিয়া পাওয়া যায় না। তাই আমাদের জন্য একটা শক্তিশালী ব্যাংক প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সন্ধানী খুবই ভালো কাজ করছে।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান খান, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও জেনেটিক্স এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ক অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, অধ্যাপক ডা. মোঃ জাফর খালেদ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ শীষ রহমান, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ, স্বর্গীয় শিব নারায়ণ দাশ-এর সহধর্মিনী গীতশ্রী চৌধুরী, পুত্র অর্ণব আদিত্য দাশ প্রমুখসহ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ এবং সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সোসাইটির সদস্য ও চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, অনেক বড় বড় মানুষ মরণোত্তর চক্ষু দানের জন্য অঙ্গীকার করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এতে করে অসংখ্য মানুষ মরণোত্তর চক্ষু দানে উৎসাহিত হবেন। এমনকি কর্ণিয়া দান কার্যক্রমও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, অনেকেই শুরুতে চক্ষু দানে আগ্রহী হোন, পরে যখন আমরা চক্ষু সংগ্রহ করতে যাই, তখন আর তাদের পরিবার দিতে চান না। কিন্তু শিব নারায়ণ দাসের ছেলে নিজ থেকে আমাদের কাছে এসেছেন এবং চক্ষু দানে সহযোগিতা করেছেন। শিব নারায়ণ দাশেস মতো এমন ক্ষণজন্মা মানুষের আরও অনেক জন্ম হোক।

দানকৃত চোখ থেকে কর্ণিয়া সংগ্রহ করে একজন রোগীর চোখে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করেছেন বিএসএমএমইউর চিকিৎসক রাজশ্রী দাশ। তিনি বলেন, শিবনারায়ণ দাস দেশকে একটি লাল-সবুজের পতাকা দিয়েছেন। মৃত্যুর পর দেহ ও চোখ দুটোও দান করেছেন। মরণোত্তর চক্ষু দানে মহত্ত্ব আছে। ১৯ এপ্রিল মারা যান তিনি। তার কর্ণিয়া সংগ্রহ করা হয় ১৯ এপ্রিল। পরের দিন ২০ এপ্রিল আমরা দুটি কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করি। মৃত্যুর ৬ ঘণ্টার মধ্যে কর্ণিয়া সংগ্রহ করতে হয়। কর্ণিয়া সংগ্রহ করতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগে।

দানকৃত চোখ থেকে কর্ণিয়া সংগ্রহ করে আরেকজন রোগীর চোখে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করেছেন বিএসএমএমইউর সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান। তিনি বলেন, দেশে কর্ণিয়া দান নিয়ে এখনও ধর্মীয় একটা প্রতিবন্ধকতা আছে। ইরান-সৌদি আরবের ৫/৬ হাজার কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ১ থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন হয়। এই সংখ্যাটা খুবই কম।

গীতশ্রী চৌধুরী বলেন, মৃত্যুর পর তার (শিবনারায়ণ দাশ) শেষ ইচ্ছে পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। যদিও আমার আত্মীয়স্বজনরা এটা মেনে নিতে পারেন নি। তারা মনে করেছিলেন হয়তো অর্থকষ্টে দেহ দান করে গেছেন। কিন্তু না, তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন মৃত্যুর পর দেহ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তাই তিনি মানুষের জন্য তাঁর দেহ দান করে গেছেন। তিনি সারাজীবন দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।

অর্ণব আদিত্য দাস বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকবেন মানুষের মাঝে। তার চোখের কর্ণিয়ায় দুজন আলো দেখছেন, তাদের মধ্যে বাবা বেঁচে থাকবেন।
চোখের আলো ফিরে পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন মশিউর রহমান ও আবুল কালাম। মশিউর রহমান বলেন, আগের থেকে ভালো দেখতে পাচ্ছি। আমার চোখে সমস্যা ছিল জন্ম থেকেই। শিবনারায়ণ দাশের পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। দৃষ্টিশক্তি কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।

আবুল কালাম বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে বাম চোখে দেখতাম না। কর্ণিয়া লাগানোর পর এখন দেখতে পাই। আমার ভালো লাগছে খুব। অপারেশনের আগে চোখে নানান সমস্যা ছিল। এখন নেই। সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন হয়েছে আমার।

বিএসএমএমইউ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়