DESK
Published:2024-03-30 20:52:19 BdST
যে কাজগুলোকে অগ্রাধিকার ,জানালেন বিএসএমএমইউ র নতুন উপাচার্য
ডেস্ক
_____________________________
বাংলাদেশের বরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়(বিএসএমএমইউ)র উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মসূচির রোডম্যাপ নিয়ে কথা বলেছেন। এ সব বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের কাছে প্রকাশ করা হল।
অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন,
বিএসএমএমইউ হলো চিকিৎসক তৈরির কারখানা। আমার চাওয়া হলো আদর্শ শিক্ষক তৈরি করা। স্বাস্থ্যসেবা গুরুত্ব দেওয়া। কেউ যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হয়। এছাড়া মানসম্পন্ন গবেষণার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক কথায় চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা এ তিন বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হবে।
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইজড একটি বিশ্বমানের হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি কেন এর কারণগুলো আমাকে প্রথমে জানতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেবো। আমার ইচ্ছে আছে ‘ফি ফর ওয়ার্ক সিস্টেম’ চালু করা। অর্থাৎ কাজের বিনিময়ে পয়সা। যারা সরকারি চাকরি থেকে সম্প্রতি অবসরে গেছেন, কিন্তু কাজ করতে চান তাদের থেকে সেবা নেওয়া। আরেকটি হলো, ‘টেকনোলজি ট্রান্সফার’। অর্থাৎ চিকিৎসকদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিশ্বমানের ফ্যাকাল্টিদের স্বল্পমেয়াদে ট্রেনর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সুপার সব কাজ হওয়া উচিত। উন্নততর সব স্বাস্থ্যসেবা সেখানে থাকা উচিত। সেখানে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হবে বিশ্বমানের। সেখানে মস্তিষ্কের জটিল সব সার্জারি সম্পন্ন হবে। হাসপাতালে উন্নততর প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত থাকবে। রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনসিস প্রক্রিয়া হবে বিশ্বমানের; যাতে সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে গিয়ে তা করতে না হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য যেন আর বিদেশমুখো হতে না হয় এবং জটিল হৃদরোগের সার্জারিগুলো এখানে সম্পন্ন করা যায়, সে সক্ষমতা থাকবে। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালকে কীভাবে সে সক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া যায় সে পরিকল্পনা আমার রয়েছে।
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন ,
বিএসএমএমইউতে গবেষণা বৃদ্ধির জন্য আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে, একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সেখানে দেশী-বিদেশী কনসালট্যান্টরা যাতে যুক্ত হতে পারে সে সুযোগ তৈরি করতে হবে। গবেষণার খাত চিহ্নিত করে প্রয়োজনে বিদেশী গবেষকদের নিয়ে এসে ক্ষেত্রগুলো প্রস্তুত করব। গবেষণা তদারকির জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি তৈরি করে দেব।
তিনি বলেন, দুর্নীতি হতে দেবো না। আমার টাকা দরকার নেই। আমি মনে করি, একটা প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি সৎ থাকে তাহলে অর্ধেক কাজ এমনিতে হয়ে যায়। তাহলে অন্যরা অসৎ হওয়ার সাহসেই পাবেন না।
বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবো। এখানে একটা ভালো একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে, সিন্ডিকেট রয়েছে। সুতরাং এখানে হাত-পা বাঁধা, আইনের বাইরে কিছু করতে পারবো না।
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন ,
কিছু লোক ভারতে যাচ্ছে, ভারতের কিছু লোক সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে, সিঙ্গাপুরের লোক যুক্তরাষ্ট্রে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে সবাই বিদেশ যেতে পারে না; তারা এখানেই চিকিৎসা নেয়। করোনাকালীনও সবাই দেশেই চিকিৎসা নিয়েছে। দেশের যারা চাইলেই বিদেশ যেতে পারে তারাও আমার কাছে, এখানেই চিকিৎসা নেয়। সুতরাং এটি মূলত আস্থার ব্যাপার। দেশীয় চিকিৎসা খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। চিকিৎসা খাতের কোন কোন জায়গায় গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে সে ইস্যুগুলো চিহ্নিত করতে হবে। চিকিৎসকদের দক্ষতা কম, এমনটা আমার মনে হয় না। কেননা অনেক ভালো ভালো চিকিৎসক আমাদের দেশে রয়েছেন। এ আস্থাটা আমাদের আনতে হবে। আমাদের ওপর অনেক চাপও থাকে। কীভাবে অতিরিক্ত চাপ কমানো যায়, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কীভাবে রেফারেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে প্রকৃত রোগীরা বড় কনসালট্যান্টের কাছে যেতে পারবে, এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শহরভিত্তিক প্রাইমারি হেলথকেয়ারের অভাব রয়েছে। ফলে যেসব রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করা যেত, যেমন জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা ইত্যাদি। এসব রোগের কারণেও মানুষ বিএসএমএমইউ কিংবা ঢাকা মেডিকেলে যায়। কিন্তু এসব কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে গেলেই হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাইমারি হেলথকেয়ার হিসেবে যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মডেল দিয়েছেন, তা তার চিন্তাপ্রসূত। কারণ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রদান করতে পারে। এখানে যাওয়ার পর যদি কোনো উচ্চতর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তাহলে কমিউনিটি ক্লিনিক রোগীকে উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেবে অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেবে। অর্থাৎ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক ধরনের শৃঙ্খলা রয়েছে, অবকাঠামোও রয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ঢাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে বড় বড় হাসপাতালের ওপর থেকে রোগীর চাপ কমবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা রোগীদের অনেক সময় দিতে পারবেন এবং চিকিৎসকদের ওপরও এ রোগী দেখার চাপ কমবে বলে আমি মনে করি।
এজন্য জেলা হাসপাতালগুলোকে সর্বজনীন চিকিৎসাসেবার মূল কেন্দ্র করতে হবে। এখানে সব ধরনের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করতে হবে।
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন
শুধু বিএসএমএমইউ নয়, সারা বাংলাদেশেই নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আমি মনে করি, তারা যেন স্বাস্থ্য খাতে আরো ভালো করতে পারে এজন্য তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। উন্নত দেশে স্বাস্থ্য খাতের মূল চালিকাশক্তি হলো নার্স বা সেবিকারা। আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে এ খাত উন্নত হবে বলে আশা রাখি। নার্স সেবাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। নার্সরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা। এটি একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমি এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাব।
ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন , বড় হাসপাতালগুলোর চারপাশে নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দিতে হবে যেন সেই সীমার মধ্যে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মেসি গড়ে না ওঠে। সরকার, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে এবং এ নিয়ম সবার জন্য প্রযোজ্য করতে হবে।
আপনার মতামত দিন: