Dr.Liakat Ali

Published:
2024-03-10 17:39:51 BdST

বিএসএমএমইউ’র অনকোলোজি বিভাগকে দেশে ক্যান্সার রোগীদের স্ক্রিনিং করার দায়িত্ব নিতে হবে: উপাচার্য


 

ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ বাংলাদেশের ক্যান্সারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে (সেমিনার অন : ক্যান্সার সিচুয়েশন অব বাংলাদেশ)’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১০ মার্চ ২০২৪ খ্রী.) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়াম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাউদ্দিন শাহ ও অনকোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদিয়া শারমিন একটি করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে বলা হয়, এক বিংশ শতাব্দীতে অসংক্রমক রোগের মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। বিশ্বের ক্যান্সার রোগ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশেও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপী, ইমিউনোথেরাপী এবং রেডিও থেরাপীর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল অনকোলোজি বিভাগের মাধ্যমে গত বছর (২০২৩) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৪ হাজার রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার নতুনভাবে শনাক্তকৃত রোগীর চিকিৎসা গ্রহণ করেন। বাকি প্রায় সাড়ে ৮ হাজার রোগী বিভিন্নভাবে এখানকার চিকিৎসা এবং পর্যবেক্ষণের আওতায় রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডে-কেয়ার সেন্টারে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৪ জন ক্যান্সার রোগী প্রতিনিয়ত কেমোথেরাপী, ইমিউনোথেরাপী ও টার্গেটেড থেরাপী গ্রহণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তঃবিভাগে সর্ব মোট নারী পুরুষ বিছানা সংখ্যা ৬০টি। এখানেও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর জন্য কেমোথেরাপী, ইমিউনোথেরাপী এবং টার্গেটেড থেরাপী প্রদান করার জন্য ক্যান্সার আক্রান্ত বিভিন্ন রোগীকে রোগের বর্তমান অবস্থা, পর্যায় অনুযায়ী অত্যাধুনিক মানের চিকিৎসা সেবা হিসেবে রেডিও থেরাপী প্রদান করা হয়। রেডিও থেরাপীর মধ্যে থ্রিডিসিআরটি, ভিএমএটি পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে জরায়ু মুখের আক্রান্ত রোগীকে ব্রাকি থেরাপী প্রদান করা হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার বিভাগকে আরও অত্যাধুনিক উন্নতমানের ক্যান্সার সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলার নিমিত্তে আরও উন্নত প্রযুক্তির ক্যান্সার /রেডিও থেরাপীর মেশিন হিসেবে টমোথেরাপী, সাইবার নাইফ, গামা নাইফ উল্লেখযোগ্য। সেমিনারে বলা হয়, বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেবার পর গত তিন বছর জনগুরুত্বপূর্ণ ৩৪টি সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেন্ট্রাল সেমিনার বর্তমান প্রশাসনে উপাচার্য হিসেবে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ তা পুনরুদ্ধার করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে ক্যান্সার রোগীর কোন ডাটা নেই। আমাদের দেশে ক্যান্সারের কোন স্ক্রিনিং করা হয় না। আজকের সেমিনার থেকে আমার একটাই চাওয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগকে ক্যান্সার বিভাগসহ, অকুলার অনকোলজি, আই, ইএনটি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিসহ সকল বিভাগে ক্যান্সার রোগীদের রেজিস্ট্রি করার দায়িত্ব নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সার চিকিৎসার সর্বাধুনিক লিনিয়াক মেশিন, পেট স্ক্যান মেশিন ক্রয় করার ফান্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে ক্যান্সার চিকিৎসায় সাইবার নাইফ, গামা নাইফ, গামা সার্জারি, রেডিও সার্জারি করা যায় এসব বিষয় তরুণ ক্যান্সার চিকিৎসকদের মাথায় রাখতে হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এফ-ব্লকে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জায়গা পড়েছিল। সে জায়গায় হেমাটোলিজ বিভাগকে দিয়ে ইতিমধ্যে তিনি বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে। এখানে মাত্র তিন লক্ষ টাকায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়। বাংলাদেশে অন্য হাসপাতালে ২০ লক্ষ টাকা বাইরে যা ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। হেমাটোলোজি বিভাগ দিয়ে আমরা এ টাকা বাঁচাতে পেরেছি ক্যান্সারের জন্য টার্গেটেড থেরাপী করতেই হবে। কারণ অনেকেই এক সঙ্গে ১২টি থেরাপী দেয় তাতে কোনটায় রোগী ভাল হয়, কোনটিতে রোগী মারা যায় তা বুঝা যায় না।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশে সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাকে বার বার বলেছেন, দেশের রোগীরা যাতে বিদেশে চিকিৎসার জন্য না যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এনেছি ও তা প্রয়োগ করেছি। সাম্প্রতিক পর পর দুটি সফল কাডাভারিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট, প্রতিনিয়ত কিডনি প্রতিস্থাপন, শিশু কিডনি প্রতিস্থাপন, জোড়া শিশু আলাদা, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ও টেস্ট টিউব বেবি’র জন্ম দেয়ার মত সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এতে রোগীদের বিদেশ নির্ভরতা অনেকটা কমেছে।

অনুষ্ঠানে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, অনকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ নাজির উদ্দিন মোল্লাহ্সহ বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়সাল ইবনে কবির। সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টগণ উপস্থিত ছিলেন। বিএসএমএমইউ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়