Dr.Liakat Ali
Published:2022-11-18 05:16:05 BdST
১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
সংবাদ সংস্থা
________
বিশ্ব শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)' ‘শিশু স্বাস্থ্য, বিকাশ ও সুরক্ষা ' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় (১৭ নভেম্বর ২০২২) বিশ্ববিদ্যালয় বি-ব্লক শহীদ ডা. শহীদ মিলন হলে পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিভাগটির বিগত পাঁচ বছরের শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ষোল বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে মোবাইল দেয়া ঠিক না। ষোল বছরের কম বয়সী শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে অজান্তেই তারা অনেক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে এ বয়সী ছেলে-মেয়েরা কোনটি ভাল কোনটি খারাপ সেটি বুঝার সক্ষমতা থাকে না। তবে যেসব শিশু মোবাইলে আসক্ত তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। তারা হঠাৎ মোবাইল ফোন আসক্তি কমাতে পারবে না। এজন্য তাদেরকে দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা তবে একটানা আধাঘণ্টার বেশী মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বা দেখা যাবে না। এটি করতে পারলে তাদেরকে হয়তো সোস্যাল মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার থেকে রক্ষা পেতে পারি।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বেশী বেশী প্রচার করতে হবে, সোস্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক কোন এ্যাবইউজ করলে তা ধরা যায়, ধরা পড়লে বিচার হবে। এটি প্রচার করতে পারলে শিশুদের ইন্টারনেট তথা সাইবার অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে। শিশুদের সুরক্ষায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে সাবেক তথ্য কমিশনার ও দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। কোনটিতে লাইক , কমেন্ট দেয়া যাবে তার জন্য সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সাইবার অপরাধ দমনে সচেতনতার বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেন্টিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শবনম আজিম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ মারুফ হক খান ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিশু ও সমন্বয় উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
অনুষ্ঠানে দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মকর্তা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিশুস্বাস্থ্য, বিকাশ ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রকল্প এবং একাডেমিক গবেষণা উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ বিগত পাঁচ বছরের ১৮ বছরে নিচের জনগোষ্ঠীর উপর গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
পাঁচটি থিম অনুযায়ী গবেষণার ফলাফলগুলো উপস্থাপন করা হয়। (১) শিশু অধিকার এবং সুরক্ষা বিষয়ে গবেষণা উপস্থাপন করেন ডা. মারিয়াম সাল, (২) অনলাইনে শিশু নির্যাতন শীর্ষক গবেষণা উপস্থাপন করেন মুহাম্মদ ইব্রাহীম ইবনে তৌহিদ, (৩) শৈশবের বিরুপ অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গবেষণা প্রকাশ করেন ডা. নীলিমা বর্মন; (৪) শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা বিষয়ক গবেষণা উপস্থাপন করেন শাবনাম আযীম এবং (৫) অসংক্রামক রোগঃ শিশু বিকাশের অন্তরায় বিষয়ে গবেষণা উপস্থাপন করেন ডা. মো. মারুফ হক খান।
বিশ্বজুড়ে শিশু নির্যাতন অনস্বাস্থ্যের জন্য একটি উদ্বেগজনক ঘটনা এবং শিশু বিকাশের জন্য একটি বড় বাধা হিসাবে স্বীকৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশু নির্যাতন বলতে সব ধরনের শারীরিক এবং / অথবা মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, অবহেলা, বাণিজ্যিক বা অন্যান্য নির্যাতনকে বোঝায় যার ফলে দায়িত্ববোধ, বিশ্বাস বা আত্মমর্যাদার প্রেক্ষাপটে শিশুর স্বাস্থ্য, বেঁচে থাকা এবং বিকাশের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনের কোনো স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। যদিও, বাংলাদেশী আইনি ব্যবস্থায় শিশুদের উপর করা প্রায় প্রতিটি নির্যাতনের শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মানদ-ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য, ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ গ্রহণ করে এবং ১৯৫টি দেশ সনদটি অনুমোদন করে। সনদ এর ১৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রতিটি জাতি সকল ধরণের অত্যাচারের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করতে বাধ্য থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে এবং অন্যান্য সামাজিক নির্দেশকেও অগ্রসর হয়েছে। যদিও ১৯৯০ সালে শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হওয়ার পর থেকে শিশু নির্যাতন রোধে তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি।
ঢাকা শহরের টারশিয়ারী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অটিজমে আক্রান্ত ৪৫ জন শিশুর মায়েদের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখা যায়, ৩ থেকে ৯ বছর শিশুর প্রত্যেকেই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মাঝে ৮.৯% কোনও না কোন সময়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় ১৪১৬ জন ১১-১৭ বছর বয়সী শিশুর উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, (ছেলে/মেয়ে এবং নির্বিশেষে), বাড়িতে, স্কুলে এবং কর্মক্ষেত্রে ১৯% শারীরিক নির্যাতন, ১৭% মানসিক নির্যাতন এবং ৭৮% অবহেলার শিকার হয়। ঢাকা শহরের রতি এলাকা পরিচালিত অন্য একটি গবেষেণায় ৩৮৪ জন বাবা-মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখা যায়, শিশু (৭-১৭ বছর বয়সী) তার শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৮৬.১%, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৪.৭% এবং অবহেলার শিকার হয়েছে ২১.১%। গবেষণায় আরও দেখা যায়, যে কর্মজীবী শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু এবং বছি এলাকায় বসবাসকারী শিশুরা অত্যাচারের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। সিরাজাগঞ্জ জেলার চারটি বাজারের ৩৯৮ জন কর্মজীবী শিশুর উপর পরিচালিত অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিশুরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় ১০০ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় ১০০% এবং অবহেলার শিকার হয় ৮২.৭%।
২০১৭ সালে পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় ১৪১৮ জন বাবা- মায়ের সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, প্রায় ৯২% শিশু গবেষণা পূর্ববর্তী এক বছরে কোনও না কোনভাবে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে এবং ৯৪% শিশু তাদের শৈশবের যেকোন এক সময়ে বাবা-মার কাছে থেকে নিয়ম-কানুন শেখার জন্য নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৪৬০ জন শিশুর উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের মাঝে কমপক্ষে একটি, দুটি বা তিনটি সাইবার অপরাধের প্রবণতা ছিল যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ, ৩৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ। শিশুরা বেশি শিকার হয় এমন বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ছিল উৎপীড়ন, উপহাস, গুজব কিংবা অপমান (৩৫%), অসৎ উদ্দেশ্যে বেনামে যোগাযোগ ( ২৯%), যৌন-নিপীড়নমূলক বার্তা কিংবা মন্তব্য (১১%), এবং যৌনতাপূর্ণ ছবি বা ভিডিও (১৭%)। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের নীতির কারণে, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট সম্পর্কে কম জ্ঞান এবং সঠিকভবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার কারণে, অপরাধীরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদেরকে নির্যাতন করতে সক্ষম হয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের ৪৫৬ জন শিক্ষার্থীর (নবম ও দশম শ্রেণী) উপর পরিচালিত আরেকটি গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, ৫৬% কিশোর এবং ৬৪% কিশোরী ইন্টারনেট মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শহরে শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চাইতে দেড় গুণেরও বেশি। গবেষণাটিতে পাওয়া যায়, যেসকল শিশু ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুম ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী ২৪ জন শিশুর উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, শিশু নির্যাতন সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি গতানুগতিক এবং কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা যার মারাত্মক শারীরিক এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষত কমবয়সী শিশু, মেয়ে-শিশু এবং গরীব শিশু তুলনামূলক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পরিবার, খোলা এবং কর্মক্ষেত্রে তারা নি¤œস্তরে এবং নি¤œ অবস্থানে থাকায় তাদের কথায় গুরত্ব দেওয়া হয়না।
আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, শিশু নির্যাতনের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই শিশু যৌন নির্যাতনের মারাত্মক ঘটনাগুলি এমনভাবে প্রকাশ করে যা নৈতিকতা বিবর্জিত। প্রিন্ট মিডিয়া বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদনের চেয়ে এপিসোডিক প্রতিবেদন বেশি প্রকাশ করে শিশুর বিকাশ, সুরক্ষা এবং সুস্থতার সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করার সুযোগটি হাতছাড়া করছে।
প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতা শিশুর ১৮ বছর বয়সের আগে ঘটে যাওয়া আঘাতমূলক এবং পীড়াদায়ক ঘটনা যা শিশুর উপর মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন, মানসিক এবং শারীরিক অবহেলা, পিতামাতার বিচ্ছেদ, মায়ের প্রতি সহিংসতা, বাড়িতে মাদকের ব্যবহার, পরিবারে মানসিক রোগী থাকা এবং পরিবারের সদস্যদের কারাবাস- এ বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কিত। শৈশবে একটি প্রতিকূল অভিজ্ঞতা, প্রাপ্ত ব্যাক্ত অবস্থায় সামগ্রিক শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে দ্বিগুণ করে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব মায়েরা তিন বা ততোধিক প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন, তাদের মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা সম্পন্ন শিশু জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি। অন্য একটি গবেষণায় প্রাপ্তবয়ষদের বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার সাথে প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার একটি উল্লেখযোগ্য যোগসূত্র পাওয়া গেছে। আমরা আরও দেখেছি যে, বেশি প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। যেসব মহিলা বেশি প্রতিকূল শৈশব অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলো, তাদের মধ্যে স্বামীর দ্বারা সহিংসতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
শিশু নির্যাতন একটি নিত্যনৈমিত্তিক এবং বেদনাদায়ক ঘটনা যা বাংলাদেশী সমাজে সর্বজন স্বীকৃত। কমবাসী শিশু, মেয়ে এবং দরিদ্র শিশুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুদেরকে সবসময় ছোটো এবং বাবা-মার অধীনস্থ মনে করা হয়, তাই পরিবার, স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রে কোথাও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন বাংলাদেশী পিতামাতারা অর্থনৈতিক, শারীরিক এবং মানসিক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন যা তাদেরকে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, এবং শিশু নির্যাতনের সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অধিকার খুবই সামান্য; বন্ধি এলাকায় বসবাসকারী মাত্র ৭% ছেলে শিশু এবং ৪% মেয়েশিশুর তার নিজ এলাকার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। মাত্র ০.৫% শিশুর নিজস্ব টয়লেট রয়েছে, যা বন্ধি এলাকায় মৌলিক চাহিদা মেটানোর অধিকার বিঘিœত হওয়ার ঘটনাকে চিত্রিত করে।
শিশু নির্যাতনের ফলে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়া ছাড়াও, রোগ প্রবণতা তাদের সুস্বাস্থ্যর ব্যাপারে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ ১৬.২ শতাংশ, যার মধ্যে ছেলে, বেশি সময় বসে থাকা, স্থূলতা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করাকে ঝুঁকির কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে। কোভিড মহামারী চলাকালীন ২০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন মাত্রার অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়েছিল, যার মাঝে যথাক্রমে ১৮ শতাংশ, ১৪ শতাংশ এবং ১৬ শতাংশের বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা ছিল।
শিশু নির্যাতনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অসচেতনতা এবং বাড়িতে, স্কুলে এবং কর্মক্ষেত্রে এটি নিষিদ্ধ করার জন্য কঠোর আইনের অভাব, যা সমাজ থেকে শিশু নির্যাতনকে নির্মূল করার অন্যতম বাধা। স্কুলগুলোতে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করার জন্য ২০১১ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আইনে রুপান্তর করা দরকার। বাংলাদেশী শিশুদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারকে অবশ্যই জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশু নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, শিশুদের প্রতিরোধমূলক কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কঠোর নিয়ম-কানুন প্রয়োগের মাধ্যমেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ কে মেনে চলতে পারে। বিএসএমএমইউ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
আপনার মতামত দিন: