ডা শাহাদাত হোসেন

Published:
2022-08-24 06:26:30 BdST

বুস্টার ডোজ নিয়ে বিএসএমএমইউ-এর গবেষণায় যে ফল পাওয়া গেল


 

বিএসএমএমইউ সংবাদ সংস্থা
______________________

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোডিড-১৯ ভ্যাক্সিনের বুস্টার ডোজ নিয়ে পরিচালিত ‘Antibody Titre Six Months after Third Dose of Vaccination against SARS-CoV-2’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় (২২ আগস্ট ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এ ফল ঘোষণা করেন গবেষণার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, বুস্টার গ্রহণের ১ মাস পরে শতভাগ অংশগ্রহণকারীদের দেহেই এন্টিবডি পাওয়া গেছে এবং প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এন্টিবডির মাত্রা পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে এন্টিবডির মাত্রা দাঁড়িয়েছে ২০৮৭৮ AU/ml। তবে বুস্টার গ্রহণের ৬ মাস পরেও শতভাগ অংশগ্রহণকারীদের দেহেই এন্টিবডি পাওয়া যায় কিন্তু প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এন্টিবডির মাত্রা কমে গড় এন্টিবডির মাত্রা দাঁড়িয়েছে ১০৬৭৫.৭ AU/ml। এর মধ্যে যাদের কোভিড আক্রান্ত হবার ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রেই এন্টিবডির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। রক্তের প্যারামিটার গুলোতে (হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেট সহ অন্যান্য) উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে জানানো হয়, এন্টিবডির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় বুস্টার ডোজ গ্রহণকারীদের চতুর্থ ডোজ নিতে হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নিবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, বেসিক সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরফদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ডা. মোঃ হারিসুল হক, হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ অভিমানীতে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ৬০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬৪ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি কোভিড-১৯ কেইস শনাক্ত করা হয়েছে এবং এই রোগে ২৯ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। কোভিড-১৯ বিপর্যয় প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারা বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় দেশে বুস্টার ডোজসহ ভ্যাক্সিনেশন কর্মসূচি চলমান আছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট প্রস্তুতকৃত কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিন দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ফাইজার, মডার্না সিনোভ্যাকসহ বিভিন্ন টিকা এ কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি টাকার প্রথম ডোজ এবং ১২ কোটিরও বেশি দ্বিতীয় ডোজ এবং ৪ কোটিরও বেশি মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।
অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করা টিকাদান এর উদ্দেশ্য। টিকা গ্রহীতার দেহে এন্টিবডি তৈরি হয় এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবার এবং আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতার সম্ভাবনা সাধারণত কমে যায়। এ প্রেক্ষিতে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। এ গবেষণায় বুস্টার ডোজ গ্রহণের ৬ মাস পর শরীরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি এন্টিবডি এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়। তিনি জানান, এর আগে পরিচালিত গবেষণায় দেখায় যায়, কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের ১ মাস পরে পরিচালিত গবেষণায় ২২৩ জনের মাঝে ৯৮ শতাংশের শরীরে এন্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। যারা পূর্বেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি এন্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল। টিকা গ্রহণের ৬ মাস অতিবাহিত হবার পরে দেখা দিয়েছিল, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এন্টিবডির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন টিকা গ্রহীতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশের এন্টিবডির মাত্রা হ্রাস পেয়ে গড় এন্টিবডির মাত্রা ৬৭৯২ AU/ml থেকে ৩৯৬৩ AU/ml তে নেমে এসেছিল। এ সময় ২ জন টাকা গ্রহীতার দেহে পর্যাপ্ত এন্টিবডি পাওয়া যায়নি।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা এবং সময়ের সাথে এন্টিবডি কমে যাবার প্রমাণ এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে পাওয়া যায়। যারা বয়স্ক বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী তাদের ক্ষেত্রে এবং সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে পুনরায় ডোজ নেবার প্রয়োজন আছে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে এই ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিধির যথাযথ অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট (পিআইবি)র উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থসমূহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু কর্নারে উপহার হিসেবে দেওয়া বইসমূহ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ মহোদয়ের হাতে তুলে দেন পিআইবির সম্মানিত মহাপরিচালক বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক জনাব জাফর ওয়াজেদ।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়