Desk

Published:
2022-07-30 06:47:16 BdST

বিএসএমএমইউ ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়ে যেসব তথ্য জানালেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ


বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

 


ডেস্ক
___________________


বিএসএমএমইউ ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নিয়ে সাধারণ মানুষের জানতে চাওয়া নানা প্রশ্নের জবাব-তথ্য সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)র উপাচার্য অধ্যাপক
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। ঢাকার বাংলা কাগজ আমাদের সময়ের রিপোর্টার
ভূইয়া আশিক রহমানের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এসব তথ্য জানান।
উপাচার্য বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএসএমএমইউ একের পর এক চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও গবেষণায় আগের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা এখন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা দিই। তার প্রমাণ করোনায় চিকিৎসার জন্য কোনো রোগীকে দেশের বাইরে যেতে হয়নি। বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় পোস্ট গ্রাজুয়েশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই দিই আমরা।
উপাচার্য বলেন,
চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিএসএমএমইউতে প্রতিদিন আউটডোরে ৮ থেকে ৯ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য আসেন। আমাদের হাসপাতালের সেবা মানুষের কাছে পছন্দ হয়। আমাদের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীরা উপকার পাচ্ছেন। স্বল্পমূল্যে রোগের ইনভেস্টিগেশন করতে পারছেন। অন্য হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক মূল্যে ইনভেস্টিগেশন করাচ্ছেন রোগীরা। কম খরচে অপারেশন, অর্ধেক খরচে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন। রোগের ইনভেস্টিগেশন সহজলভ্য করে দিয়েছি।

২৪ বছর ধরে বিএসএমইউতে কোনো ইমার্জেন্সি ছিলো না। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেই ইমার্জেন্সি চালু করেছি। জার্নাল রেগুলারাইজড করেছি। রেগুলার সায়েন্টিফিক সেমিনার হচ্ছে। বিএসএমএমইউতে হাজার হাজার রোগী আসেন, তাদের চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি এবং রোগের ইনভেস্টিগেশনও সুলভমূল্যে করছি।
উপাচার্য বলেন,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রোগীদের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এই হাসপাতালকে রোগীরা ভরসা করেন। ফলে এই হাসপাতালকে ঘিরে রোগীদের প্রত্যাশা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে রোগীদের সব প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারি না। আল্ট্রাসনো, এক্সরে ও সিটি স্ক্যান করার জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যতোটুকু সম্ভব আমরা রোগীদের সেবা দিচ্ছি। কেউ কেউ হয়তো একদিনে সেবাটি গ্রহণ করতে পারেন না। কারণ রোগীর পরিমাণ এতো বেশি যে, কুলিয়ে ওঠা যায় না। যেকোনো রোগের ইনভেস্টিগেশনে বিএসএমএমইউর সুনাম আছে, অথেনটিসিটি আছে যে, এখানকার রিপোর্ট বিশ্বসযোগ্য। সঠিক হয়। রোগীদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। হয়তো সব পারছি না। তবে রোগীদের ৯০ শতাংশ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি বলে মনে হয় আমার।
উপাচার্য বলেন,
প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসাসেবা নিতে বিদেশে যান। মেডিকেল পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে এক নম্বর স্থানে আছে প্রতিবেশী ভারত। তারপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও দুবাই। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালে মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়ে খরচের পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে কমতে দেখা গেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ‘অতি-বিশেষায়িত’ হাসপাতাল নেই। বিএসএমএমইউই দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুবিধা প্রদানকারী কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে থাকবে ১০০ শয্যার অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি সুবিধা; একটি লিভার, গল ব্লাডার ও প্যানক্রিয়াস সেন্টার; অঙ্গ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র; ক্যান্সার সেন্টার; মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং ডেন্টাল সেন্টার। এছাড়াও থাকবে কার্ডিওভাসকুলার সেন্টার, জেরিয়্যাট্রিক সেন্টার, স্পাইনাল কর্ড সেন্টার, বার্ন ইনজুরি সেন্টার, একটি হেলথ স্ক্রিনিং সেন্টার এবং একটি জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্র।

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি রোগী আসেন বিএসএমএমইউতে ;এমন তথ্য জানিয়ে ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ধরে নিচ্ছি, রোগীরা এই হাসপাতালে এসে সেবা পান। বিএসএমএমইউর এক্সটেনশন ‘সুপার স্পেশালিস্ট’ হাসপাতাল সম্পন্ন হওয়ার পথে। হাসপাতালের ৮৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্রায় ১ হাজার বেডের এই হাসপাতাল আগামী মার্চ মাসে উদ্বোধনের চেষ্টা করছি। কোরিয়ান অর্থায়নে। স্বল্প সুদের ঋণে। ৪০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। লোকবল নিয়োগ প্রায় সম্পন্ন।
উপাচার্য বলেন,
তিনি বলেন, গত দুই বছরে বিএসএমএমইউ প্রমাণ করেছে চিকিৎসার জন্য কোনো রোগীকে দেশের বাইরে যেতে হয়নি, আমরা আশা করছি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হলে এদেশের কোনো রোগীকে আর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে না। এই হাসপাতালেই সব ধরনের রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে পারবো। যারা মনে করেন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেবো, ভালো কেবিন নেবো, ভালো ধরনের ইনভেস্টিগেশন করবো, সে সমস্ত রোগীদের থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুরের পরিবেশে চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম হবো।
উপাচার্য বলেন,
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে সব ধরনের ফ্যাসিলিটি থাকবে। ট্রান্সপ্ল্যান্ট, ক্যান্সার চিকিৎসা বা চোখের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়। সব ধরনের লেটেস্ট অপারেশন হবে। রোবোটিক সার্জারি ব্যবস্থার পরিকল্পনাও আমাদের আছে। যে সমস্ত চিকিৎসা, ইনভেস্টিগেশন বিদেশে গিয়ে করতে হয়, তা আমাদের দেশে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালেই করতে পারবো। এই হাসপাতালে দেশি চিকিৎসকের সঙ্গে প্রয়োজনে বিদেশি চিকিৎসকও রাখবো।
উপাচার্য বলেন,
বিএসএমএমইউকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হলো গবেষণা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় বলেছেন যে, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের গবেষণার পরিমাণ খুব কম। গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য টাকার পরিমাণ, ইনসেনটিভসহ সব সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রত্যেক বিভাগীয় চেয়ারম্যান যেন রিসার্চওয়ার্ক করেন, এজন্য আমরা উৎসাহিত করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি গবেষণার কাজ বাড়াবো। ভবিষ্যতে কনভেনশন সেন্টারকে লাইব্রেরি, সেমি ল্যাব করে আরও উন্নত করার চেষ্টা করবো। আশা করি শিক্ষা, সেবা ও গবেষণায় বিএসএমএমইউকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আমরা সক্ষম হবো।
উপাচার্য বলেন,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্নোয়নে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইমার্জেন্সি না থাকলে পূর্ণাঙ্গ হয় না, আমি ইমার্জেন্সি চালু করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়ালেখা বন্ধ ছিলো, এটা ওপেন করেছি। সব ধরনের অপারেশন বন্ধ ছিলো করোনার সময়, তা আবারও চালু করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অনিয়মিত ছিলো, সেটাও রেগুলার করেছি। গবেষণা ডে পালন করে গবেষণায় উন্নতি করার ব্যবস্থা চালু করেছি।
উপাচার্য বলেন,
কেবিন ব্লকগুলোতে রোগীরা যাতে আরও বেশি সেবা পান, সেজন্য চিকিৎসকদের ও নার্সদের উপস্থিতির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। সব ধরনের রোগের ইনভেস্টিগেশন যাতে একটা জায়গায় করা যায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করেছি। ইমার্জেন্সি ল্যাবরেটরি সার্ভিসে এলে সমস্ত চিকিৎসাসেবা বা ইনভেস্টিগেশন করা যাবে। এ সমস্ত কিছুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।
উপাচার্য বলেন,
চিকিৎসাসেবা নিতে এসে অনেকেই ভাবেন যে, আরও বেশি সেবা পেলে ভালো হতো। একজন চিকিৎসক যেন সারাক্ষণ রোগীর পাশে বসে থাকেন, যা আসলে বাস্তবতার নিরিখে সম্ভব নয়। একেক রোগীর একেক রকম প্রত্যাশা। অন্য অনেক হাসপাতালের চেয়ে আমাদের চিকিৎসক, নার্স বা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোগীর সেবায় আরও অনেক বেশি সক্রিয়। রোগীর সেবায় তারা আত্মনিয়োগ করছেন। আমি বিশ্বাস করি, সকলে যদি আরও যত্নবান হন, তাহলে রোগীরা আরও অনেক বেশি সন্তুষ্ট হবেন।

করোনাকালে মাত্র ১৫ দিনে একটি ফিল্ড হাসপাতাল আমরা তৈরি করেছি। এই ফিল্ড হাসপাতাল সেবার ক্ষেত্রে রোগীদের অনেক উপকারে এসেছিলো। এখনো ওমিক্রনের কারণে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। কেবিন ও বঙ্গমাতা ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছি। ওমিক্রনে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে উপায় নেই। একজন আক্রান্ত হলে চারগুণ সংক্রমিত হচ্ছে। একই ঘরের একজন ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। যদি কেউ ভাবেন যে ওমিক্রনে কোনো সমস্যা হবে না, তিনি ভুল করবেন। কারণ যাদের ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস আছে, লাংসের সমস্যা আছে, ক্যান্সার আছে, তাদের অনেকেই ওমিক্রনে মারা যান। যাদের কো-মরবিডিটি আছে, তারা ঘরের বাইরে যাবেন না।
উপাচার্য বলেন,
করোনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্কতার অংশ হিসেবে ভিড় বা জনসমাবেশে যাবেন না। মাস্ক পরবেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন। ভ্যাকসিন নেবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছেন। এই ভ্যাকসিন মানুষ বিনামূল্যে পাচ্ছেন। বিনামূল্যে ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগটা যদি মানুষ নেয়, তাহলে করোনা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারবো। করোনা ব্যবস্থাপনায় সারাবিশে^ ২৬ তম আর দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা এক নম্বর হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। করোনা হয়ে গেলে ১৪ দিন যদি কেউ কাজ না করেন, তাহলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ পঙ্গু হয়ে যায়। ফলে করোনা যাতে না হয়, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে।

কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলছেন যে, ওমিক্রন মানে ইমিউনিটি গ্রো করবে। এর মধ্যে ওমিক্রন হয়তো আশি বা একশো শতাংশ লোকের হয়ে যাবে। ইসরায়েল বা ফ্রান্সের মতো আমরা বলি না, অর্ধেক লোক আক্রান্ত হবে, বাকি অর্ধেক আক্রান্ত হবে না। ওমিক্রনের ভ্যারিয়েন্টকে কেউ কেউ ভ্যাকসিন হিসেবে মনে করেন। ইমিউনিটি ভোগ করবে। কিন্তু আমরা মনে করি, ডেল্টা, ওমিক্রন কিংবা করোনা সবই কো-মরবিটি যাদের আছে তাদের জন্য ক্ষতিকর। ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
উপাচার্য বলেন,
করোনার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ। একটি থেকে আটশো আরটিপিসিআর স্থাপিত হয়েছে। এখন সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা আছে। ফিল্ড হাসপাতাল করা হচ্ছে। আরও চিকিৎসক প্রস্তুত আছেন। দশ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দশ হাজার নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। চার হাজার টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে করোনা ব্যবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সফল হয়েছেন। যারা বিদেশ থেকে দেশে আসছেন, তাদেরও যদি সাথে সাথে ইনভেস্টিগেশন করা যায়, তাদের আইসোলেশন বা করোনা পজেটিভ হলে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা যাবে। যারা বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসবেন, তাদের র‌্যাপিড আরটিপিসিআর টেস্ট যেন করা হয়, সেই আহ্বান আমি জানাবো।
সৌজন্যে আমাদের সময়

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়