ডা শাহাদাত হোসেন
Published:2022-06-30 22:08:31 BdST
দেশের ৭০ লাখ মাদকসেবীর চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে
সংবাদদতা
_____________________
দেশের ৭০ লাখের অধিক মাদকসেবীর চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে সাইকোথেরাপি বড়ই অবহেলিত।
বুধবার (২৯ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিলন হলে অ্যাসোসিয়েশন অব থেরাপেউটিক কাউন্সেলর, বাংলাদেশ (এটিসিবি) এর উদ্যোগে আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভা ও বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে বাংলাদেশের শীর্ষ মানসিক রোগ ও সাইকোথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একজন মানুষের শারীরিক এবং মানসিক দিক দুটোই ঠিক থাকতে হবে। একটি খারাপ হলে অপরটির উপর প্রভাব ফেলবে। তাই শারীরিক রোগের পাশাপাশি মানসিক রোগের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিএসএমএমইউতে সাইকোথেরাপির সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেন উপাচার্য।
সভাপতির বক্তব্যে এটিসিবির প্রেসিডেন্ট ও বিএসএমইউর মনোরোগ বিদ্যার প্রক্তন চেয়ারপারসন অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, ‘এটিসিবি সকল মানসিক স্বাস্থকর্মীদের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা, গবেষণা, জ্ঞানের চর্চাসহ মনোসামাজিক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস থাকে সব সময়ই। করোনাকালীন সময়ে আমরা একবার সীমিত পরিসরে অনলাইনে এটিসিবি-র বার্ষিক সাধারন সভা ও বৈজ্ঞানিক অধিবেশন উদ্যাপন করেছিলাম। বিরতি দিয়ে এবারে আমরা এক সাথে অফলাইনে সরাসরি এই সভা ও অধিবেশন পালন করছি। এটিসিবি-র এ অনুষ্ঠান সকল সদস্যদের জন্য একটা মিলনমেলা।
এটিসিবি সেক্রেটারী জেনারেল এবং বিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সাইকোথেরাপি উইং-এর প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,
সমাজের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে আমরা প্রতিদিন মানসিক চাপের
সম্মুখীন হচ্ছি । বয়সভেদে সংস্কৃতিভেদে,আর্থসামাজিক সীমা ভেদে
নিত্যনতুন মানসিক চাপ মানুষের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে।এর প্রভাব পড়ছে
সমাজের। এর কারণে শারীরিক মানসিক রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে।
মাদকাসক্তির পাশাপাশি বিহেভিয়রাল এডিকশন মোবাইল, নেট, বেড়ে গেছে
ভয়াবহ আকারে। ২৬ শে জুন ছিল মাদকবিরোধী দিবস। এরই জের ধরে আজকের
সায়েন্টিিিফক সেশনের থিম স্থির করা হয়েছে। করোনাকালে আমরা দীর্ঘদিন ধরেকঠিন অবস্থা অতিক্রম করে এসেছি। সাথে সাথে প্রতিটি ঘরে বেড়েছে এই বিহেভিয়রাল আসক্ত
শিশুকিশোর থেকে বয়স্ক প্রবীণদের সংখ্যা।
মানসিক রোগের চিকিৎসায় ফার্মাকোথেরাপীর পাশাপাশি সাইকোথেরাপী
গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এর প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাব
রয়েছে। সাইকোথেরাপী উইং এর অধীনে মনোরোগবিদ্যা বিভাগ থেকে ৬মাসের
সাইকোথেরাপী ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে ২০০৭সাল থেকে। প্রতি বছর ১৫জন স্টুডেন্ট
এই ট্রেনিং নিচ্ছে। প্রয়োজনে সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য
সচেতনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে ।
অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,
গর্ব করে বলতে পারি আজকে
এই এসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ৭০০এর উপরে। মনোরোগদ্যিাবিভাগের একমাত্র
আয়করী সংস্থান হচ্ছে এই সাইকোথেরাপী । আমাদের এই সার্ভিস আরও উন্নত
করতে হবে। রোগীর প্রাইভেসী রক্ষার্থে স্পেসের প্রয়োজন। দু:খের সাথে জানাই
যে আমাদের চাহিদা থাকা সত্বেও আমরা ওপিডি তে কোন রুম পাই নাই। ১২তলার
একই রুমে পাশাপাশি সাইকোথেরাপি দিয়ে চলেছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।
আমাদের সকল আশা ভরসার স্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ স্যার । যে কোন যৌক্তিক চাহিদা ও সঙ্কটের দ্রুত নিরসনে তিনি সদা তৎপর। এর মধ্যেই বিএসএমএমইউকে তিনি উপমহাদেশের একটি সেরা স্বাস্থ্য সেবালয়ে রুপান্তরে বৈপ্লবিক ভুমিকা রেখে চলেছেন। বিএসএমএমইউ প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট এবং উইং স্যারের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় নতুন শক্তিতে জেগে উঠেছে। এক নবজাগরণ বিএসএমএমইউ জুড়ে। স্যারকে সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,
গভীর প্রত্যাশা নিয়ে তাই
মাননীয় উপাচার্য
স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি স্যার যেন এই বিষয়ে তার সহযোগিতার হাত
বাড়িয়ে দেন। আমরা আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো। সাইকিয়াট্রিস্ট,
সাইকোলজিস্ট , সোশালওয়ার্কার ,অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট সবার সম্মিলিত
প্রচেষ্টায় আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলে । আমাদের মনোরোগ বিভাগ
অপ্রতুলতার কারণে উপযুক্ত প্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছে না। মাননীয় উপাচার্য স্যারের সহযোগিতা ও নির্দেশনায় এই এ সবের অচিরেই সমাধান হবে, প্রত্যাশা করি। বিশ্বাস করি।
অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন বলেন,
আরেকটি গৌরবের কথা আত্মগৌরবের সঙ্গে যোগ করতে চাই, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বিজয়ী বাংলাদেশ। অচিরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশাল হাসপাতাল চালু হচ্ছে । গর্বের পদ্মা সেতু চালুর বছরেই সুপার স্পেশাল হাসপাতাল চালু আরেক অনন্য ঘটনা। এর মাধ্যমে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আহমেদ স্যারের হাত ধরেই বিএসএমএমইউ বিশ্বের শীর্ষ ৫ রোগী সেবাদানকারী বৃহৎ হাসপাতালের তালিকায় স্থান নেবে। মাননীয় উপাচার্য স্যারের কর্মতৎপরতায় দ্রুত এই মহাযজ্ঞ বাস্তব রুপ পাচ্ছে। স্যারকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন । একই ভাবে স্যারের নিদের্শনা ও সদাশয় সহযোগিতায় আমাদের ডিপার্টমেন্টের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে , আশা করছি।
অন্য
বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মাদক একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশও এর ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত নয়। দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখেরও বেশি। যা রীতিমত ভীতির সঞ্চার করে। মাদকসেবীর দেহমন, চেতনা, মনন, প্রেষণা, আবেগ, অনুভূতি সব কিছুই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাই মাদকসেবীর চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি (কাউন্সেলিং) একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
মানসিক রোগের বিষয়ে দেশে কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, মানসিক ব্যাধি সম্পর্কে এখনও আমাদের দেশে নানাবিধ কুসংস্কার প্রচলিত। এজন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার পরিবর্তে মানসিক রোগের জন্য চলে নানা অপচিকিৎসা। মানসিক রোগের প্রতি স্টিগমার কারণে মানসিক রোগীদের পরিবারও দূরে ঠেলে দেয়। এমন একটি অবহেলিত ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অংশীদারিত্বেও পাশাপাশি মানসিক রোগের ব্যাপারে জনসচেতনা সৃষ্টিতে এটিসিব-এর ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
মনোরোগ চিকিৎসা মূলত একটি টিম ওয়ার্ক। যাতে মনোচিকিৎসক কাউন্সিলর, সমাজকর্মী, পরিবার প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে। এই সমন্বিত প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এটিসিবি চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সমাজকর্মী এবং সুধীজনকে তাদের সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই সমন্বিত উদ্যোগে মনোরোগের চিকিৎসা আরও বেগবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,
বাংলা একাডেমী পুরস্কার বিজয়ী বরেণ্য কথাসাহিত্যিক এবং জাতীয় মানসিক ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল ,
বিএসএমএমইউর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. নাহিদ মেহজাবিন মোরশেদ , প্রাক্তন অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান, ঢাবি কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেহজাবীন হক প্রমুখ।
অনবদ্য কন্ঠ মাধুর্যে
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন , বিএসএমএমইউর মনোরোগ বিদ্যা ভিাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা মারিয়া ।
আপনার মতামত দিন: