ডা শাহাদাত হোসেন
Published:2022-05-26 19:05:31 BdST
সবিশেষ মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিস্তারিত তথ্য ও দরকারি পরামর্শ দিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ
উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা
______________________________
করোনাভাইরাস মহামারীর বিশ্ব থেকে এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যেই বিশ্বে আরও একটি ভাইরাস জেঁকে বসবার উপক্রম করছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ কয়েকটি দেশে ফুঁসকুড়িসহ জ্বরের ঘটনা ঘটেছে, যা মাঙ্কিপক্স হিসেবে নির্ণয় করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাঙ্কিপক্সকে শনাক্তযোগ্য ও বর্ধনশীল ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করেছে। মাঙ্কিপক্স একটি ডিএনএ ভাইরাস। কাউপক্স, ভ্যাকসিনিয়া এবং ভ্যারিওলা (স্মলপক্স) এই গ্রুপের ভাইরাস। এটি একটি জুনোটিক ভাইরাস। যার প্রাথমিক সংক্রমণ সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং সম্ভবত অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে ঘটে বলে ধারণা করা হয়। উদাহরণ- জংলী কুকুর, ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালী, বানর, সজারু ইত্যাদি। ১৯৫৮ সালে ল্যাবরেটরিতে বানরের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম দেখা দিয়েছিল বলে ১৯৭০ সালে এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স। এই ভাইরাসের দুটি স্ট্রেইন আছে। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেইন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই ভাইরাস পশু থেকে প্রাণী এবং পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাধ্যম বলে বিবেচিত। ৯০% রোগী ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। গুটিবসন্তের টিকা বন্ধ করা এর একটি কারণ হতে পারে।
আফ্রিকায় ১-১০% পর্যন্ত মৃত্যুর হার রিপোর্ট করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে প্রাদুর্ভাবে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। জটিলতার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কেরাটাইটিস, কর্নিয়ার আলসারেশন, অন্ধত্ব, সেপ্টিসেমিয়া এবং এনসেফালাইটিস। গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স থেকে ৮৫% সুরক্ষা প্রদান করে। ২ সপ্তাহের মধ্যে, সম্ভব হলে ৪ দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে। ইনকিউবেশন পিরিয়ড গড়ে ১২ দিন, ৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। প্রড্রোম ১ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরজনিত অসুখের সঙ্গে ঠা-া লাগা, ঘাম, প্রচ- মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।
লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি জ্বরের পরে ২-৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে দেখা যায়। ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফুঁসকুড়ি তৈরি হয়। ফুঁসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয়, তারপর ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বাকি অংশে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। এগুলো মুখম-ল, শরীর, হাত-পা এবং মাথার ত্বকে হয়ে থাকে। হাতের তালু এবং পায়ের পাতায়ও ক্ষত দেখা যেতে পারে। এগুলো হয় ব্যথাহীন। যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানিও থাকতে পারে। হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সঙ্গে দেখা যায়, মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায় না। এই রোগ সাধারণত সেল্ফ লিমিটেড।
আক্রান্ত বা সন্দেহযুক্ত প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। প্রাণীর কামড়, আঁচড়, লালা বা প্রস্রাবের স্পর্শ থেকে দূরে থাকা অপরিহার্য। আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সকল ক্ষত শুকানো পর্যন্ত আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন করে চিকিৎসা নেয়া আবশ্যক।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এফডিএ গুটিবসন্ত বা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেয়ার জন্য একটি লাইভ, নন-রিপ্লিকেটিং স্মলপক্স এবং মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। সিডোফোভির- মাঙ্কিপক্সের জন্য এ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ। স্মলপক্স ভ্যাকসিন, মাঙ্কিপক্স ভ্যাকসিন উভয়ই লাইভ এ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিনিয়া স্ট্রেইন থেকে উদ্ভূত।
বাংলাদেশে এখনও এই রোগের কোন রোগী ধরা পড়েনি। করোনা মহামারীকে আমরা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে মোকাবেলা করেছি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে যেমনভাবে বাংলাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে দেইনি, সেরকমভাবে আমরা মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের জন্যও প্রস্তুত রয়েছি। দেশের মানুষকে যে কোন ধরনের গুজব বা আতঙ্ক থেকে এড়িয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো এই রোগ থেকেও আমরা জাতিকে নিরাপদ রাখতে পারব।
#
আপনার মতামত দিন: