SAHA ANTAR

Published:
2022-04-30 19:36:10 BdST

২৫তম বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়


 


অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ
উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
________________________

চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষায় স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়ন ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার প্রথম তিন তারকা শাহবাগ হোটেলের জায়গায় ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন এ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমএন্ডআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও এই প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রী প্রদানের ক্ষমতা ছিল না। ডিগ্রী প্রদান করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আইপিজিএমএন্ডআর কার্যক্রমসহ অনেক চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের এমবিবিএস ডিগ্রী প্রদান করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ২৫তম বছরে পদার্পণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক দেশের জন্ম হতো না। কৃতজ্ঞতা জানাই জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে, যিনি জনগণের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত করার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি অধ্যাপক এম এ কাদেরীর সময় প্রথমে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন), (ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্র্রার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পরে পরিচালক (হাসপাতাল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির ডিনের দায়িত্বও পালন করি। দীর্ঘদিন যাবত সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করি এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম আমি। ২০১৫-২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম। সর্বশেষ গত বছর ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আগামী তিন বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।

দেশের মানুষের রক্তের প্রয়োজনে নিরাপদ রক্ত সরবরাহ ও নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য বঙ্গবন্ধু তৎকালীন আইপিজিএমএন্ডআরে প্রথম ব্লাড ব্যাংক স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে এই ব্লাড ব্যাংকের উদ্বোধন করেন। আজও বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধুই প্রথম দেশের চিকিৎসকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করেন।


বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় এদেশের চিকিৎসক সমাজ চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে তাদের সকল প্রত্যাশা পূরণের ভরসাস্থলের সন্ধান পান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের চিকিৎসক সমাজের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবি যেমন বাস্তবায়ন করছেন, তেমনি এদেশের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রযাত্রার সূচনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান চিকিৎসক সমাজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরদিন স্মরণ করবে। দেশের জনসাধারণের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বারডেম সংলগ্ন বেতার ভবনের জমি ও হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বের ১২ বিঘা জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে কয়েকশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহায়তা ও দিকনির্দেশনায় খুব দ্রুত নতুন কেবিন ব্লক সম্প্রসারণ, অনকোলজি ভবন, নতুন বহিঃবিভাগ, আধুনিক আইসিইউ, ওটি কমপ্লেক্স, মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে দেশরত্ন শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান, চাকরিসহ বিভিন্নক্ষেত্রে কোটা প্রবর্তনসহ নানামুখী কর্মসূচী গ্রহণ করেন। এরই অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেল গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা অল্প খরচে করা এবং আলাদা কেবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে চান্স প্রাপ্ত বেসরকারী ছাত্র/ছাত্রীদের মাসিক সম্মানি দশ হাজার টাকা থেকে বিশ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কোরিয়া সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট কোরিয়া মৈত্রী বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যা এ সরকারের আরও একটি সাফল্য।


গত বছর ২৯ মার্চ যোগদান করার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হাসপাতালের অভ্যন্তর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখা ও রোগীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে, বেতার ভবনে ১০০ শয্যা করোনা ইউনিট এবং ননকোভিড রোগীদের জন্য ১০ বেডের নতুন আইসিইউ ইউনিটের শুভ উদ্বোধন, কোভিড-১৯-এর জেনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফিল্ড হাসপাতাল শুভ উদ্বোধন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিকক্ষ কেবিন-১১৭ উদ্বোধন। এই কক্ষেই কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নন-রেসিডেন্ট ছাত্র-ছাত্রীদের ভাতা প্রদান, বন্ধ থাকা টিএসসি পুনরায় চালু, ২০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন অক্সিজেন প্ল্যান্ট উদ্বোধন, পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রাইনোলজি ক্লিনিক, পেডিয়াট্রিক থাইরয়েড ক্লিনিক ও গ্রোথ ক্লিনিকের শুভ উদ্বোধন, রেটিনোপ্যাথি অব প্রিমেচিউরিটি (আরওপি) ক্লিনিকের শুভ উদ্বোধন, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে ইমারজেন্সি ল্যাব উদ্বোধন, বিশ্ব প্রবীণ দিবসে প্রবীণদের পুষ্টিসহ ৩টি গবেষণার ফল প্রকাশ, রোগীদের সুবিধার্থে বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোর পুনরায় চালু, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে আর্থ্রোস্কোপি ইউনিটে না কেটেই সফলভাবে শোল্ডার জয়েন্ট আর্থ্রোস্কোপির মাধ্যমে ব্যাংকার্ট রিপেয়ার কার্যক্রম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর পর প্রথমবারের মতো হেলথ কার্ডের শুভ উদ্বোধন, সফলভাবে ইনফার্টিলিটির চিকিৎসায় স্টেম সেল প্রয়োগ, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাধারণ জরুরী বিভাগের উদ্বোধন, রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রাইনোলজি এ্যান্ড ইনফার্টিলিটি বিভাগে ডিম্বাশয়ে স্টেম সেল থেরাপি প্রতিস্থাপন, শিশু সার্জারি বিভাগে স্কিল ল্যাব, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও ৩টি ডিভিশন এবং হিজড়া নামে পরিচিত তৃতীয় লিঙ্গের শিশুদের চিকিৎসার জন্য ডিসঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট বহির্বিভাগ ক্লিনিক উদ্বোধন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শতাধিক নন রেসিডেন্ট ছাত্র-ছাত্রীদের (চিকিৎসকদের) বৃত্তি প্রদান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসকদের সম্মাননা প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন, শিশুদের মেরুদন্ডের বাঁকা হাড় সোজাকরণ ইউনিটের শুভ উদ্বোধন, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি ওপিডি স্পেশাল ক্লিনিকের শুভ উদ্বোধন, অতিসম্প্রতি প্রায় ৯০০ অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ, ফরেনসিক মেডিসিন ও টক্সিকোলজি বিভাগ চালু, খাদ্যে ক্ষতিকারক উপাদানের উপস্থিতি (ফুড হ্যাজার্ড) নিয়ে ৩টি গবেষণার ফল প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বটতলায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী সংক্রান্ত ১০০ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও শিশুদের ফটোগ্যালারির উদ্বোধন, পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু ইত্যাদি।

@

https://www.facebook.com/watch/live/?ref=watch_permalink&v=233550482311677

https://www.facebook.com/watch/live/?ref=watch_permalink&v=233550482311677

 

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়