ডেস্ক

Published:
2021-09-28 15:09:54 BdST

উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা:‘আপনিই তো বাংলাদেশ’


 


অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ

উপাচার্য
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

_____________________________

সমগ্র জীবনই তাঁর কেটেছে লড়াই সংগ্রামে সাধারণ আর দশটা মানুষের মতো। তিনি পাননি পরিবারের সান্নিধ্য, ছিল না জীবনের স্বাভাবিক গতিধারাও। সব হারিয়েও যিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায়, বর্ণাঢ্য সেই সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় বিদেশ থাকার কারণে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপোসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং অন্য রাজনৈতিক জোট ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাধীন রয়েছে। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটি। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে চার-তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের ম্যধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বার সরকার গঠিত হয়। এছাড়া তিনি তিনবার বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি বাংলদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ, যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। তাঁর সাহসী এবং গতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর এবং উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। শেখ হাসিনা সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সমুদ্র এবং মহাকাশ বিজয় তো পুরো জাতির সামনে দৃশ্যমান। এমন অনেক কাজ আছে যা মানুষের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে, যার সুযোগ-সুবিধা মানুষ পাচ্ছে। এই সুযোগ-সুবিধার কারণটা মানুষ সঠিকভাবে জানেও না, জানতে চেষ্টাও করে না। তেমনি একটা ক্ষেত্র হলো স্বাস্থ্য খাত।

মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে। সীমাবদ্ধ সম্পদ ও বিপুল জনগোষ্ঠী নিয়ে এ অর্জন যে প্রশংসনীয় ব্যাপার তা জাতীয়সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবাই স্বীকার করেন। স্বাস্থ্য খাতের এই অর্জনের জন্য ৪টি জাতিসংঘ পুরস্কারসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত। এর মধ্যে এমডিজি এ্যাওয়ার্ড, এসডিজি এ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ এ্যাওয়ার্ড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির প্রণয়ন এই সরকারের এক উল্লেখযোগ্য অর্জন। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করা যায়। নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৬০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে।


বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ মোটেও সহজ কথা নয়। অনেকেই বিদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার তুলনা করেন। আমাদের দেশের জনসংখ্যা এবং আমাদের আর্থিক সক্ষমতা তারা মাথায় রাখেন না। ডাক্তার-রোগী, ডাক্তার-সেবিকার আনুপাতিক হারের বিষয়টিও মাথায় রাখেন না। বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম পদক্ষেপ হলো কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন।

১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পটি শেখ হাসিনা সরকার গ্রহণ করে এবং প্রায় দশ হাজার ক্লিনিক স্থাপন করে। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো জনবান্ধব মানবিক উদ্যোগকে শুধু রাজনৈতিক রোষে বন্ধ করে দিয়েছিল। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৮ হাজার ৫ শত কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন জরিপ এবং বিবিএসের তথ্য অনুসারে কমিউনিটি ক্লিনিকের ৯০ শতাংশের বেশি গ্রাহক তাদের পরিষেবা ও সুবিধার ক্ষেত্রে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। স্থাপন করা হয়েছে হৃদরোগ, কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, নিউরো, চক্ষু, বার্ন, নাক-কান-গলাসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। অব্যাহত নার্সের চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউট। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করার কাজ চলছে।



শিশুদের টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতেও শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের উন্নয়ন স্বাস্থ্য খাতকে উন্নত করছে। সব হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে ই-গবর্নেন্স ও ই-টেন্ডারিং চালু করা হয়েছে। সরকারী হাসপাতালগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালকে কেন্দ্র করে অনলাইন সেবা কার্যক্রম চালু করতে ‘ভিশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।



বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ও মৃত্যুরোধে এখন পর্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অনেক দেশ এখনও পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ রোধে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে না পারলেও বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বিনামূল্যে প্রায় চার কোটি মানুষের টিকাদান স¤পন্ন হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় দেশে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হবে। ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘গুড হেলথ এ্যাট লো কস্ট : টোয়েন্টি ফাইভ ইয়ারস অন’ শীর্ষক বইয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অগ্রগতির যে কারণগুলো উল্লেখ করা হয় তার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচী।



স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে মৌলিক চিকিৎসা চাহিদা পূরণ, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল, অসংক্রামক রোগসমূহের ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধে ব্যাপক উদ্যোগ, পুষ্টি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সূচকসমূহের ব্যাপক অগ্রগতিতে স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব অর্জন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে বহুদূর।

বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে, যা মোটেও সহজসাধ্য কাজ নয়। যা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে।



দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নের প্রস্তুতিসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও পরিশ্রমের ফসল। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ দৃশ্যমান। ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কমিউনিটি ক্লিনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে, যা সারা দেশে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও পপুলেশন ল্যাব হিসেবে পরিচালিত হবে। বাংলাদেশে তিনি কেবল একজন ব্যক্তি মাত্র নন, ব্যক্তির উর্ধে গণমানুষের সর্বোচ্চ আশা জাগানিয়া অভিভাবক। আজ তাঁর জন্মদিনে মনে পড়ে অকাল প্রয়াত তরুণ কবি ত্রিদিব দস্তিদারের কবিতার লাইন-‘আপনিই তো বাংলাদেশ।’

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়