ডেস্ক

Published:
2021-08-20 05:14:56 BdST

ভয়াল সেই ২১ আগস্ট



অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ
উপাচার্য
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

______________________________

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যা করার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিল এদিনে। দিনটি ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট।

২০০৪ সালের সারাদেশে জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যলয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে, একটি ট্রাকের উপর তৈরি মঞ্চে বক্তৃতা শেষে বিক্ষোপ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আসতে থাকেন। ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি শক্তিশালী গ্রেনেড। এতে ঘঠনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২জন নিহত হন। পৈশাচিক সেই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী বেগম আইভি রহমান নিহত হন। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন তাদের প্রধান টার্গেটে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণ বেঁচে গেলেও আহত হন এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার শ্রবণশক্তি।

২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পেছনে ছিলো প্রভাবশালী রাজনৈতিক দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি এবং পাকিস্তান। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে মতোই ২১ শে আগস্টের হামলার নীল নকশা তৈরি করা হয়েছিল। যার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন ঐ সময়ের কিছু সামরিক কর্মকর্তা এবং হাওয়া ভবনে বসে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে তাদের গ্রেনেড সরবরাহও করে দেয় পাকিস্তান। হামলা শেষে পাকিস্তান ঘাতকদের আশ্রয়ও দেয়। মূলত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

ঐ ঘটনায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগ একটি মামলা হয়। যাতে আসামী সংখ্যা ছিল ৫২ জন। একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রবাদি আইনে অপর একটি মামলায় আসামি সংখ্যা ৩৮ জন।

ভয়াবহ সেই ঘটনায় ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবরে এই মামলায় রায় ঘোষিত হয়। রায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টু সহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড দেয় ঢাকার একটি বিশেষ দ্রুত আদালত। রায়ের বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। এছাড়া অন্য মামলায় ফাঁসির কারণে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ, মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এই র্ববরোচিত গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হন তাদের মধ্যে ছিলেন আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব:) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়অরি, আমিনুল আসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া প্রমুখ।

আহত হয়েছিলেন বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু,আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আকতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।

২১ আগস্টের হামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত ঘটনা। রাজনীতি ভয়াবহভাবে দুর্বৃত্তায়িত হলেই এটি সম্ভব। এরুপ ঘটনার পূনরাবৃত্তি রোধে ন্যায় বিচারে পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরও সজাগ হওয়ার প্রয়োজন। আইনগত ব্যবস্থা ছাড়াও দলের ভিতর থেকে প্রতিহিংসার উপাদান দূর করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই রাজনীতি থেকে দূর করতে হবে অপশক্তি ও অপচিন্তা।
১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যাকারীরা তখন দেশে না থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনাকে হত্যা করতে চেয়েও পারেনি। তাই তখনকার খুনী চক্রের উত্তরসুরীরা ২০০৪ এ একুশে আগস্টে ঐ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনের চক্রান্ত করে। এই ঘৃন্য হত্যাকরীদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করে ভবিষ্যতে এধরণের হত্যাকান্ডের পূনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়