SAHA ANTOR

Published:
2020-10-13 17:28:01 BdST

ঘরের সিনিয়র সিটিজেনদের ভালবাসা দাও, সন্তান তোমাকে ফেরত দেবে ১৬ আনা


 

ডা. সুলতানা আলগিন
সহযোগী অধ্যাপক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ ও
কনসালটেন্ট জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
বিএসএমএমইউ , ঢাকা
_______________________

আপনার পরিবার রয়েছে আপনার সাথে। রয়েছে রক্তের বন্ধন । সম্পর্কের বন্ধন। শিশু,যুবা,পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি বাদে আপনার পরিবারে যে বয়স্ক আত্মীয়স্বন রয়েছেন তাদের দিকেও নজর দিন ।

"পরিবারের সিনিয়র সিটিজেনদের ভালবাসা দাও, তোমার সন্তান তোমাকে ফেরত দেবে ১৬ আনা" । কথাটি আমার নয়। কথাটি প্রবাদ বাক্যপ্রতীম। সবাই আমরা জানি; বুঝি, অনুধাবন করি। করলে কি লাভ , তা জানি। না করলে কি করুণ পরিনতি ; তারও সাক্ষ্য প্রমাণ ঘরে ঘরে। তারপরও ঘর ঘর কি সেই প্রামাণ্য চিত্র থেকে আমরা কি শিক্ষা নিচ্ছি।
শিক্ষা নিতেই হবে। বয়স্ক জনে ভালবাসা দিতেই হবে। মানবিক কারণে দিতে হবে। পরিবারকে আগামীকে সুস্থ রাখতেও পরিবারের জ্যেষ্ঠ জনকে সম্মান ভালবাসা দিতে হবে।

করোনা রোগে যেকোন বয়সেই মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।বয়সের সাথে সাথে মানুষ বিভিন্ন রোগব্যধি দ্বারা আক্রান্ত হন। সমীক্ষায় দেখা গেছে নয় বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কম। আশির উর্ধ্ব যারা এবং যাদের ক্রনিক ডিজিজ আছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেক বেশী। এদের ১৫%মৃত্যুবরণ করে। পঞ্চাশের পর থেকে মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে।



করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হার
<৫০ ০.২% - ০.৪%
৫০-৫৯ ১.৩%
৬০-৬৯ ৩.৬%
৭০-৭৯ ৮%
>৮০ ১৪.৮%

ক্রনিক ডিজিজে যারা ভুগছেন তাদের মৃত্যুর হার
হৃদরোগ ১০.৫%
ডায়াবেটিস ৭.৩%
সিওপিডি(শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত) ৬.৩%
হাইপারটেনশন ৬.০%
ক্যান্সার ৫.৬%



করোনা রোগে এই গ্রুপ কেন বেশী আক্রান্ত হন ?
“সাইটোকাইন স্টর্ম” ঘটে যায় ক্রনিক ডিজিজের পাশাপাশি করনা আক্রান্তব্যক্তির শরীরে। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য বিশেষ করে সাইটোকাইন ইন্টার লিউকিন ৬ কমে যায় । ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় মারাত্মকভাবে। ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার মাত্রাবেড়ে গেলে সংক্রমণের পরিবেশ তৈরী হয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সিওপিডি রোগীদের শ্বাসতন্ত্র এমনিতেই প্রদাহপূর্ণ থাকে আর করোনা সহজেই ফুসফুসকে আক্রমণ করে থাকে।

বৃদ্ধবয়সে কি কি পরির্তন ঘটে : যা কমে
বয়সের সাথে সাথে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ।
বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
ঘুম,খাবার রুচি কমে যায়।
পরিবারের দায়িত্বভার কমে যায়।
মানসিকচাপ মোকাবেলার ক্ষমতা কমে যায়।

যা বাড়তে দেখা যায় :
একাকীত্ব বাড়ে।
পরপারের চিন্তা বাড়ে।
মানুষের অবহেলা বাড়ে।
বিগত দিনের কথা মনে পড়ে।
হাসপাতালে ভর্তি ,অকেজো হয়ে পড়ার ভয় বাড়ে।

করোনা সবার মনোবল নাড়া দিয়ে গেছে। কাল ভোরের আলো আপনি বা আপনার আপনজন দেখতে পাবেন কিনা তা কেউ নিশ্চিত নন। পরিবারের বয়স্ক যারা আছেন তাদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে । নিজের মৃত্যুভয়, সন্তানের মৃত্যুভয়, ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা, আর্থিক অনটন সব মিলিয়ে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অভিজ্ঞজনের প্রয়োজন সর্বযুগে। তাদের মতামত উপদেশ আমাদের চলার পথে পাথেয়।



তাই যা করণীয়:
যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। পারষ্পরিক নিরাপদ দূরত্ব এমনকি বাসার মধ্যেও মেনে চলুন।
ঘর থেতে বের হতে/ ঢুকতে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লিফট ব্যবহার কমিয়ে দিন। বাটন ব্যবহারের সময় ব্লিচিংপাউডারের স্প্রে ব্যবহার করুন।
“ট্যাপ এন্ড পে” পদ্ধতি কেনাকাটার সময় ব্যবহার করুন। টাকা সরাসরি ধরবেন না। বি-ক্যাশ পদ্ধতি এক্ষেত্রে বেশ ভাল।
প্রতিদিন বাজার করা বন্ধ করুন।
আত্মীয়¯^জন আসাকে নিরুৎসাহিত করুন।
রুটিন চেকআপের জন্য ফলোআপ অনলাইনে করতে পারেন।
কাশি জ্বর শ্বাসকষ্ট যে কোন সময় হতেই পারে। আতংকিত হবেন না।
ক্রনিক ডিজিজগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখুন।


মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে:
পুষ্টিকর খাবার খাবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাবেন । ঘুমাবেন।
একাকীত্ব কাটাতে আত্মীয়স্বনের সাথে ভিডিও কলে কথাবার্তা চালাতে পারেন।
প্রার্থণা করুন। হালকা ব্যয়াম করুন। সিনেমা দেখুন । পত্রপত্রিকা বই পড়ুন।
সংসারে বিভিন্ন কাজকর্মে অংশগ্রহণ করবেন। এতে পারষ্পরিক সম্পর্কন্নোয়ন ঘটবে।
মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না । প্রতিদিন নতুন সূর্যের আলোয় আমরা আলোকিত হই। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দুঃসময়কে আমরা পারি দিবই। আমরা করব জয় একদিন। নিজে ভাল থাকুন। অন্যকে ভাল থাকতে সচেতন করুন।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়