রাতুল সেন

Published:
2020-06-01 20:21:05 BdST

বিএসএমএমইউর করোনাজয়ী অধ্যাপক চেয়ারম্যান সবাইকে অভয় ও পরামর্শ দিলেন


ছবি ডা. বিপ্লবের ওয়াল থেকে নেয়া।


ডেস্ক
_________________________

করোনা পজেটিভ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে জীবনজয়ী আশা ও মানুষের প্রতি অভয় ভালবাসার কথা জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব । করোনায় আক্রান্ত তার স্ত্রী ও অনলাইন পত্রিকা মনের খবরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাফরুহা খানম সুবর্ণাও এখন সুস্থ। তারা জানান,   ধকল গেছে। শারিরীক দুর্বলতা এখনও সঙ্গী। অধ্যাপক বিপ্লব বলেন,করোনা পরিস্থিতি এই মুহুর্তে বাংলাদেশে বেশ জটিল, ভয়ে থাকার চেয়ে সচেতন থাকা এবং যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুর ভিতর অক্সিজেন সেচুরেশন বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়, সবার জন্য সহজ নয়। তবুও যারা বোঝেন বা যাদের সুযোগ আছে তারা করোনা সন্দেহ হলেই নিজের বা কাছের মানুষটির জন্য অক্সিজেন পরিস্থিতি মাপানোর চেষ্টা করবেন। বিষয়টি টেকনিক্যাল কিন্তু খুব জটিল নয়। ভয় না করে দরকারে কাছাকাছি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন।

সুস্থ থাকুন মনেপ্রাণে!

৩১ মে রাতে তারা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন।

২৮ মে হাসপাতাল থেকেই মানবকল্যাণী পরামর্শ রাখেন ডা. বিপ্লব । সে পরামর্শ প্রকাশ হয় তার সম্পাদিত মনের খবরে। অধ্যাপক ডা. সালাহ্‌উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, আজকে তুলনামূলক ভাবে আমি এবং সুবর্ণা, দুজনই ভালো আছি। গতকাল বেশির ভাগ সময় প্রায় অক্সিজেন ছাড়াই কাটিয়েছি ।
করোনা চিকিৎসা সর্ম্পকে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “ আমার মনে হয় করোনা চিকিৎসা এখন প্রায় ডাক্তারদের হাতে রেডি। কখন কি করতে হবে, কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় এমনি কি প্রশাসন সবাই মোটামুটি জানেন এবং তারা একটা সুন্দর ম্যানেজমেন্ট প্রটোকলও তৈরি করে ফেলেছেন।”
তিনি বলেন,
“কিন্তু টাইমলি চিকিৎসা নেয়া এবং নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেইসাথে যে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে চিকিৎসার পাশাপাশি সাপোর্ট। জ্বর, শ্বাস কষ্ট, টায়ার্ড, ঘুমঘুম, শরীর ব্যাথা, চোখ খোলা রাখাই মুশকিল। সে অবস্থায় নিজে কিচ্ছু করা যায় না। গরম পানি, খাওয়া, ওষুধ, টয়লেট, পরীক্ষানিরীক্ষা, নার্সের সাথে দরকারী আলাপ, ওয়ার্ড বয়, রুম, কোনো কিছুই নিজে করা যায় না। তাই অবশ্যই একজন সাপোর্ট সাথে থাকা জরুরি। অসুখ এবং অসুস্থতার কথা ভাবতে গিয়ে এটা কেউ খেয়াল করে না।”
সাপোর্ট যিনি দিবেন তার ঝুঁকি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত এই চিকিৎসক বলেন, “আল্লাহ কাউকেই এমন অসুখ না দেন সেই কামনা করি। কিন্তু যদি কোন কারণে হাসপাতালে আসতে হয় তবে সাপোর্ট এর বিষয়টা মনে রাখা খুবই জরুরি। যিনি সাপোর্ট দিতে আসবেন তার একদম ভয়ের কিছু নেই। কারণ সবার হাসপাতালে ভর্তির মতো সমস্যা হয় না। ভর্তির প্রয়োজন হয় খুব কম পরিমাণ মানুষের। যারা সাপোর্ট দিতে আসেন, এমনকি তারা যদি পজিটিভও হয়ে যান, ভয়ের কিচ্ছু নাই। তাদের সিম্পটম থাকে কন্ট্রোলে। সেইসাথে তাদের জন্যও সময়মতো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। বাড়িতে থাকলেও একই কথা। যাদের অন্যকোনো অসুখ আছে তারা একটু সাবধানে থাকবেন।”

৩১ মে ২০২০ তে দেয়া সুস্থতাবার্তায় অধ্যাপক বিপ্লব বলেন, দুইদিন যাবত ভালোই আছি। অক্সিজেন লাগছেনা। সেচুরেশনও ভালোই আছে। মনে মনে বাসায় যাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছি। গলায় সামান্য খুশ-খুশ ভাব ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই। টায়ার্ড লাগে, খুব। সুবর্না, আমার স্ত্রী। ও ভালো আছে।

এই কয়দিনে অনেক অনেক মানুষ ফোন দিয়েছেন, মেসেজ করেছেন, ফেইসবুকে- আমার ওয়ালে লিখেছেন, দোয়া করেছেন। তারচেয়েও অনেক বেশি মানুষ নিজেদের মতো করে দোয়া ও শুভকামনা করেছেন। আমি এই কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। অনেকের ভালোবাসার প্রকাশ আমার কল্পনা বা চিন্তারও বাইরে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি স্যার, কনক কান্তি বড়ুয়া স্যার সহ প্রশাসনের অনেকে নিয়মিত খবর নিয়েছেন। চিকিৎসা বিষয়ে যারা খবর নিয়েছেন, তদারকি করেছেন এবং প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিয়েছেন তাঁদের সবার প্রতি আবারও আমার ব্যাক্তিগত, পারিবারিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি জানি কৃতজ্ঞতা প্রকাশই যথেষ্ট নয়, অন্তর থেকে ভালোবাসা জানাই।

আমি জানি অনেকেই আমাদের ছেলে দুজনের জন্য, মা-বাবা-পরিবারের জন্যও দোয়া করেছেন তাঁদের প্রতি অসংখ্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।

বিপদে আমরা অনেকের সাহায্য নেই, বিপদ গেলে মনে রাখিনা। যদি এমন কিছু ঘটে থাকে দয়া করে মাপ করে দিবেন। অনেকের ফোন, মেসেজ রিপ্লাই দেই নাই বা এখনো দিতে পারছিনা তাদের কাছেও ক্ষমা চাইছি। অনেক রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন যোগাযোগ করতে পারেননি তারাও সমস্যায় পড়েছেন তাদের কাছেও এই পরিস্থিতির ক্ষমা চাইছি।

সবশেষে আল্লার কৃপা নিয়ে বাকি জীবন যাতে যথাযথ ও অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারি সেই আশীর্বাদ ও দোয়া চাইছি সবার কাছে।

করোনা পরিস্থিতি এই মুহুর্তে বাংলাদেশে বেশ জটিল, ভয়ে থাকার চেয়ে সচেতন থাকা এবং যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুর ভিতর অক্সিজেন সেচুরেশন বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়, সবার জন্য সহজ নয়। তবুও যারা বোঝেন বা যাদের সুযোগ আছে তারা করোনা সন্দেহ হলেই নিজের বা কাছের মানুষটির জন্য অক্সিজেন পরিস্থিতি মাপানোর চেষ্টা করবেন। বিষয়টি টেকনিক্যাল কিন্তু খুব জটিল নয়। ভয় না করে দরকারে কাছাকাছি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন।

সুস্থ থাকুন মনেপ্রাণে!

________________________________

AD...

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়