Ameen Qudir

Published:
2020-03-22 02:24:03 BdST

করোনা মোকাবেলায় বরাদ্দ হাজার কোটি টাকা দিয়ে যে জরুরি কাজগুলো করা দরকার


ডা. তারিক রেজা আলী
সহযোগী অধ্যাপক, রেটিনা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
____________________

করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখন কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। কেউ হয়তো বলবেন দেরীতে হলেও সরকারের উচ্চ পর্যায় আর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে, যে সমন্বয়হীনতা দেশবাসী দেখছিল গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তা অনেকখানি নিরসন হয়েছে। আবার কেউ হয়তো সব দোষ সরকারের উপরেই চাপিয়ে হাত ধুয়ে দূরে বসে গভীর মনযোগে দেখবেন দেশটা কিভাবে সংকটে তলিয়ে যাচ্ছে। তারা কল্পনায় দেখবেন শুধু লাশ আর লাশ। কোথাও কবর দেওয়ার জায়গা পর্যন্ত নেই।

আমি আশাবাদী মানুষ। আশায় বাঁচতে চাই। আবার বাস্তবতা অস্বীকার করা এখন আত্মহত্যার নামান্তর। দুই এর মিশেলে কিছু প্রস্তাবনা এখানে পেশ করতে চাই, যদি এর সাথে যোগ-বিয়োগ করে ভাল কিছু কার্যক্রম আমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বাস্তবায়িত করতে পারেন। তাঁদের চিন্তায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে আমার ভাবনা গুলো এতটুকু কাজে লাগলে নিজেকে ধন্য মনে করব।

ভালো দিক হলো, দেরীতে হলেও একটি মনিটরিং কমিটি তৈরী হয়েছে, বিদেশ ফেরত দের কোয়ারেন্টাইন এর ভাল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে কাজে নামানো হয়েছে, যথেষ্ট অর্থ করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসার কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। করোনার জন্য বাংলাদেশকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পঞ্চাশ কোটি টাকা এরই মধ্যে দিয়েছে যা তাদের একশত কোটি টাকার কমিটমেন্টের অংশ, ডিএফআইডি সাতশত কোটি টাকার কমিটমেন্ট করেছে, সুইডিস ও কানাডিয়ান সিডা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ইউএসএইড এরই মধ্যে চার মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে, জাপান ও চীন সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এ সবই বিভিন্ন অনলাইন সোর্স থেকে পাওয়া এবং অনেকের ফেসবুক পোষ্ট থেকে আহরণ করা। এগুলোর পুরো সত্যতা যাচাই করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, বিদগ্ধ জনেরা পারবেন। কোথাও তথ্যের কোন ভুল থাকলে দয়া করে সংশোধন করবেন। অনিচ্ছাকৃত ভুল তথ্য প্রদান যদি করে থাকি, আগাম ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি।

১. এই অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় ইত্যাদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে আর কোন ভুল করা চলবে না।

২. ট্যাক্স মওকুফের শর্তে ওষুধ কোম্পানি মাস্ক বানাবে, স্যানিটাইজার বানাবে, সাপ্লাই দেবে। প্রচুর সাবান বিনামূল্যে দেবে।

৩. পিপিই বিদেশ থেকে আনাবে সরকার। বেক্সিমকো এবং অন্যান্য বড়ো শিল্প প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনিয়ে লাখ দশেক পিপিই বানিয়ে দেবে। সরকার তাদের ট্যাক্স মওকুফ বা ভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দিতে পারে।

৪. স্থানীয় সরকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয় সমন্বিত ভাবে কাজ করবে। দেশে ফেরত প্রবাসী দের হাতে সিল লাগিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে যাতে ৩০ দিন তারা জনসমাবেশ এ না যায়। এই লিস্ট এয়ারপোর্ট থেকে ইমিগ্রেশন সরবরাহ করবে। ইতিমধ্যে যারা এসেছে তাদেরকেও সিল দেয়া হবে তারিখ সহ, কতো তারিখ পর্যন্ত তাকে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোনোক্রমেই কোয়ারেন্টাইনের লোকজন প্রকাশ্যে যাতে না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থা, জেল জরিমানা রাখতে হবে। কিছু কিছু এলাকায় প্রবাসীদের আধিক্য বেশী। সেখানে টেম্পোরারি লক ডাউন ইতিমধ্যে করা হয়েছে, আরো করতে হবে। শুধু প্রবাসী নয়, সাধারণ জনগণ ও খাবার ওষুধ কিংবা অতি জরুরি চিকিৎসা ছাড়া বের হবেনা। তিনজন একত্রিত হলেই শাস্তি। লোকাল পুলিশ, র‍্যাব, আর্মি কে এসব কাজে সংযুক্ত করতে হবে।

৫. খাদ্য মজুদ না করে প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করতে হবে। এডমিন ক্যাডার, ম্যাজিস্ট্রেটগণ মূল্যবৃদ্ধি তদারকির দায়িত্বে থাকবেন।

৬. দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব, অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষ এড়াতে এখন থেকেই খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করবে। গ্রামে গ্রামে ধান চাল ভুট্টা আলু রোপন এর জন্যে সরকারি তত্ত্বাবধায়নে কৃষক কাজ করবে। তাহলে ছ'মাস পর দুর্ভিক্ষ হবেনা। রেশনিং করতে হবে।

৭. শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ কেন, সকল সরকারী-বেসরকারী সেবাদান সংস্থা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় প্রশাসন, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য ও কৃষি , বাণিজ্য , প্রবাসী কল্যাণ সকলের একযোগে কাজ করা অত্যন্ত দরকার।সকলেরই ছুটি বাতিল দরকার।

৮. পুরো প্রক্রিয়াটির সুষম সমন্বয় না ঘটালে প্রথমত কোভিড সংক্রান্ত মহামারী ও এর ফলে অবশ্যম্ভাবী অর্থনৈতিক ক্রাইসিস, খাদ্যাভাব, কাজের অভাব, আইন শৃংখলার অবনতি ঠেকানো যাবেনা। ছ' মাস পরের কথা চিন্তা করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে মওসুমের শস্য, সবজি , ফসল উৎপাদনের কথা আগে থেকে ভাবতে হবে। বিদেশ ফেরতরা আর ফিরতে পারবেননা ধরে নিয়ে তাদের অন্য কাজে লাগাতে পারে যুব মন্ত্রণালয়। গার্মেন্টস ও অন্যান্য চীনের ওপর নির্ভরশীল শিল্পের কাঁচামালের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদের তুলো, সুতোর ওপর নির্ভর করতে হবে। বস্ত্র মন্ত্রণালয়কেও বসতে হবে প্ল্যানিং এর জন্য।

আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা কৃষি প্রধান , উষ্ণ জলবায়ু প্রধান দেশের বাসিন্দা। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করলে আমরা এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব ইনশাআল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর কন্যার সেরা উপহার হবে, সবচাইতে কম ক্ষতিতে কোভিড ১৯ সামাল দেয়া। আমার বিশ্বাস জননেত্রী সেটা পারবেন। যদি কেউ এই বিপদের সময়েও অর্থ আত্মসাৎ আর ব্যক্তিগত লাভের দিকে ছোটেন, তাঁর উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। সবার সম্মিলিত প্রতিরোধ হোক শুধুমাত্র দেশের জন্য, একাত্তরে আমাদের আগের প্রজন্ম যে কাজ করে দেখিয়েছে জান-প্রাণ দিয়ে, সেই একতা, দেশপ্রেম আর কর্মনিষ্ঠা আবার ফিরে আসুক। মনে রাখতে হবে এ এক নতুন মুক্তিযুদ্ধ, এ লড়াইয়ে জিততে হবে।

(সংকলিত, সংগৃহীত , সংযোজিত , পরিমার্জিত)

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়