Ameen Qudir

Published:
2019-09-29 23:31:27 BdST

রোগী কথন " আগে যুদি জানতাম , তাইলে এইডার লেইগ্যা ৭ লাখ ট্যাকা খরচ করতাম না"


 

লেখকের ছবি

ডা. রুবাইয়াত রহমান

________________________

২০১৬ সালের একটি গবেষনা প্রবন্ধ অনুসারে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮৮৬০০০ মৃত্যু হয় অসংক্রামক জনিত রোগের কারনে যা কিনা আমাদের সামগ্রিক মৃত্যু হারের ৫৯ শতাংশ।নিরাপদ জন্ম নিয়ে আমাদের অর্জন বিশ্ব নন্দিত। কিন্তু আমরা ক'জন নিরাপদ মৃত্যু নিয়ে ভাবি।২০১৪ সালে দি ইকোনমিস্ট জার্নাল, বিস্বের ৮০ টি দেশে মৃত্যু -র গুনগত মান কে পর্যালোচনা করেছে, যেখানে বাংলাদেশের স্থান ৭৯তম।বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিরাময় কেন্দ্রিক। কিন্তু নিরাময় অযোগ্য রোগ নিয়ে আমাদের সহজ অকপট স্বীকারুক্তি " আর কিচ্ছু করার নাই" - কিন্তু আমি বা আপনি চিকিৎসক হয়ে আমার জন্য বা আপনার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টার জন্য এই কথা শুনতে প্রস্তুত। আজ আমি বা আমরা এই নিরাময় অযোগ্য মানুষদের কে যে চোখে দেখছি, মনে রাখতে হবে আমি বা আপনি ও কিন্তু এই প্রক্রিয়ার বাইরে নই। অযথা মৃত্যু কে টেনে হেচড়ে আইসিইউ নামক একটি হিমশীতল ঘরে না নিয়ে তা কি যন্ত্রনা কমিয়ে পরিবারের মাঝে, সেই প্রিয় মানুষ টির সবচেয়ে পরিচিত নিজ বিছানা ও চির চেনা নিজ ঘরে হতে পারে না?বাংলাদেশে যে কোন মুহুর্তে নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ।সত্যি, রোগ নিয়ে আর কিছু করার না থাকলেও, ভোগান্তি ও কষ্ট নিয়ে প্রচুর কিছু করা আছে, যা কিনা বিজ্ঞান সম্মত ও ইভিডেন্স বেইজড।এই লক্ষ্য নিয়ে, নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষ ও তাদের পরিবারের কস্ট, ভোগান্তি কমানোর জন্য বংগবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ব বিদ্যালয় -এ বাংলাদেশের প্রথম প্যালিয়েটিভ কেয়ারের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে।যা কিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে, ২০১১ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জনাব জিল্লুর রহমান উদ্ভোদন করেন।বহিঃ বিভাগ, অন্তঃ বিভাগ ছাড়া ও এই বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এর ২০কিমি ভেতর রেজিস্টার্ড রোগীদের জন্য গৃহ সেবা দিয়ে আসছে যার মুল লক্ষ্য হল, রোগী যদি কোন কারন বসত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে আসতে না পারে সে ক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে যাবে। বাসায় গিয়ে যাতে রোগীরা নিজেদের অবহেলিত মনে না করে তাদের জন্য রয়েছে ২৪ ঘন্টা জরুরী মুঠোফোন সেবা,
সয়ং সম্পুর্ন লিম্ফ ইডিমা ক্লিনিক এবং
ডে কেয়ার
"রোগী যদি সেবা প্রতিষ্ঠানে আসতে না পারে তবে সেবা পৌছে যাবে রোগীর দ্বার প্রান্তে"। এই ব্রত নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গৃহ সেবা কে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ প্রদান করেছে, যা কিনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডাক্তার, নার্স এবং প্যালিয়েটিভ কেয়ার এসিস্ট্যান্ট কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রশিক্ষিত দল বাসায় গিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে।এ পৃথিবীতে অনেক স্থানেই, প্রাতিষ্ঠানিক প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সফলতা নির্ভর করেছে, সমাজ ভিত্তিক সেবা র উপর । এরই ধারা বাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়, এই সেবা কার্যক্রম কে ছড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় বস্তি 'কড়াইল' এবং নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনে।আজ সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার বংগবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিস্ববিদ্যালয়ের একটি সয়ংসম্পুর্ন বিভাগ। প্রায় ৬৪ টি দেশে ইহা একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা । ২০১৪ সালে বিস্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক একটি প্রজ্ঞাপনে এই সেবা কে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি র অন্ত্রভুক্ত করার কথা বলা হলেও অদ্যাবদি আমরা পিছিয়ে আছি অনেক। তাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার আজ সময়ের দাবি। একটি নাগরিক অধিকার।মৃত্যু -র মৃত্যু আছে, জীবনের মৃত্যু নাই।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার মৃত্যু নয়, জীবনের কথা বলে।
প্যালিয়েটিভ কেয়ারে সেবা নিতে আসা, মুখমন্ডলের ক্যান্সারের একজন কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আমরা তার জন্য কি করেছি, কারন তার রোগ ত আমরা ভাল করতে পারি নাই। তার উত্তরটি ছিল - " হ এইডা সত্যি যে আফনারা আমার রুগ ভালা করতে পারেন নাই, তবে আমি যুদি আগে জানতাম এইডা ভালা হওয়ার রুগ না তাইলে এইডার লেইগ্যা ৭ লাক ট্যাকা খরচ করতাম না। এই ট্যাকাডা আমার মাইয়াডা র বিয়াতে কামে লাগত। আর আমার মুখের ঘা দেইখা, গন্ধ আর পোকার ভয়ে গত ৬ মাস যাবত আমার ৩ বছরের বাচ্চাটাও আমার কাছে আইত না কিন্তু গত ৬ দিন যাবত অয় আমার বুকে ঘুমায়। আপনার যা করসেন তা অনেক কিসু"।
_______________________
Dr.Rubayat Rahman
Medical officer,
Palliative Medicine,
Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University,
shahbagh, Dhaka.

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়