ডেস্ক
Published:2021-08-15 01:02:02 BdST
পরীমনিকে নিয়ে ডাক্তার প্রতিদিন এ প্রকাশিত লেখার ভিন্নমতে লেখক রাজিক হাসান যা বলেন
প্রিয় বন্ধুরা
পরীমনি ইস্যু নিয়ে কেন সময় নষ্ট করছি আমি, এই প্রশ্নটি আমার শুভাকাঙ্খীরা মেসেজে, ফোনে জানতে চেয়েছেন বারবার; পরীমনি এক নষ্ট মেয়ে; সে নানা অপরাধের সাথে যুক্ত, সে মাদকাসক্ত - তাকে নিয়ে লেখারই বা কী আছে আমার। বরং সময়টা দেওয়া যায় গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখতে। তাঁরা সবাই পরীমনি ইস্যু থেকে দূরে থাকছেন, পরামর্শও দিচ্ছেন দূরে থাকতে।
ভিন্ন মতকে আমি স্বাগত জানাই, ভিন্ন মত আমাদের মননকে বিকশিত করে সন্দেহ নাই। আমার উত্তর দিচ্ছি এবার; বন্ধুরা আশাকরি আমার কথাগুলোও তোমরা ভেবে দেখবে।
বোট ক্লাব ঘটনার পর সেই বোটক্লাব নিয়েও কিছু খবরাখবর পত্রিকায় দেখেছিলাম আমরা। ক্লাবটি করা হয়েছে নদীর একাংশ দখল করে। প্রশাসন ও মিডিয়া এগুলো চেপে গেছে। নিশ্চয় রুই কাৎলাদের কারণে! পরী কিন্তু এখন পুলিশের কারাগারে।
র্যাবের বিশাল বাহিনী গিয়ে পরীমণি আটক ঘটনা বেসরকারি চ্যানেলে লাইভ টেলিকাষ্ট করেছে। পরের মুহূর্ত থেকে পরীমণির বিরুদ্ধে অপমানজনক কুৎসামূলক যৌন আক্রমণাত্মক প্রচারণা চলতে থাকলো মিডিয়ায়, ফেসবুকে। সিনেমা কাট দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা চললো। কারা এই কাজটি করল? কেন করল? যারা করেছে তারাই কিন্তু এসব সিনেমা বানায়। সরকারের সেন্সর বোর্ড পাশ করায়! এই সিনেমাগুলিতে যৌন হয়রানি, নারীকে ছোট করা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, অপরাধ এগুলোই তো কমন। বছরের পর বছর সেন্সর বোর্ড এগুলোকেই উৎসাহিত করে যাচ্ছে।
দেশের ‘সম্মানিত নাগরিকদের ব্ল্যাকমেইল করা নিয়ে কয়েকজন নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে তোলা হয়েছে। কাকে কাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা হয়েছে ? সে বিষয়ে প্রশাসন ও মিডিয়া মুখে কুলুপ এঁটেছে।
আত্মহত্যা/খুনের মতো ঘটনায়ও গ্রূপের মালিককে গ্রেফতার তো দূরের কথা কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই আসামী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। খুনের হুমকি দিয়েও শিকদার গ্রুপের বড় ব্যবসায়ীদের ঘন্টায় জামিন হয়ে গেছে। খুন ধর্ষণের বহু অপরাধী বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশটা যেন চোরাই কোটিপতি, খুনী, যৌন সন্ত্রাসী, নদী-বন দখলকারী, ব্যাংক লোপাটকারীদের অভয়ারণ্যতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা ও অর্থের জোরে সবাইকে গোলাম করে রেখেছে। ওদের গোলামী করাই যেন আমাদের অমোঘ নিয়তিত। কিছুই বলা যাবে না, করা যাবে না ওদের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
আইন, বিচার আর শাসন বিভাগের সাথে সংবাদ মাধ্যম এক সূত্রে গ্রথিত হলে কী ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে পারে তার বীভৎস চিত্রায়ণ চলছে আমাদের সমাজে। সবচেয়ে ক্ষতি হল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের ইনস্টিটিউশনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণের গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। এর পরিণতি কী হতে পারে একবার ভাবুন দয়াকরে।
পরীমনিকে শাস্তি দিন। গারদে আটকে রাখুন দিনের পর দিন। প্রচলিত আইনে বিচার করুন। সমস্যা নেই কোন।
কিন্তু একটাও মনে রাখতে হবে পরীমনিকে শাস্তি দিলেই সমাজ রাতারাতি বদলে যাবে না। বরং খুব দ্রুতই পরীমনিদের শুন্যস্থান পূরণ হয়ে যাবে নিশ্চত থাকুন।
পরীমনি সঙ্কট কিন্তু ব্যক্তি পরীমনি নিয়ে নয়; এই সংকট পুরো সিস্টেম নিয়ে। এই সঙ্কট দেশের হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে। সঙ্কট আমাদের নিজের স্বার্থপরতা ও গোলামী নিয়ে। এই সঙ্কট দেশের আইনআদালত নিয়ে। এই সঙ্কট দেশের প্রশাসন নিয়ে। সর্বোপরি আমাদের এই সঙ্কট এই রাষ্ট্রের আইনের শাসন নিয়ে।
মডেল তিন্নি, মুনিয়া,নায়িকা পরীমনি, এরা আসবে যাবে কিন্তু এই পঁচে যাওয়া, অর্ধমৃত সমাজটা আগের মতোই থেকে যাবে। একটা পঁচা, অর্ধমৃত সমাজের জন্য গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখেই বা কী হবে।
রাজিক হাসান 
১৪/০৮/২০২১
ডেস্ক 
__________________
পরীমনিকে নিয়ে ডাক্তার প্রতিদিন এ প্রকাশিত লেখার ভিন্নমতে লেখক রাজিক হাসান যা বলেন
"
প্রিয় সুলতানা আলগিন
আপনার পত্রিকায় আমার লেখা কয়েকবার প্রকাশিত হয়েছে। আপনার পত্রিকা নিয়ে লিখেছিও কয়েকবার ফেসবুকে। সেই কারণে আপনাকে লিখার তাগিদ অনুভব করছি আমি। পরীমনি ইস্যুতে আপনার অবস্থান আমাকে কিছুটা হলেও অবাক করেছে। ভিন্নমত নিয়ে সমস্যা আমার কখনই নেই। ভিন্ন মত আমাদের মননকে বিকশিত করে।
পরিমনি সংকট কিন্তু ব্যক্তি পরীমনি নিয়ে নয়; পুরো সিস্টেম নিয়ে। পরীমনি যাবে আসবে কিন্তু এই পঁচে যাওয়া সমাজ থেকে যাবে। সেই তাগিতেই দুটি কথা বলতে হচ্ছে।
নায়িকা পরীমণি ঢাকা বোট ক্লাবের এক ক্ষমতাবান ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ এনেছিলেন তখন বোট ক্লাব নিয়েও কিছু খবরাখবর পত্রিকায় এসেছিল যেমন ক্লাবটি করা হয়েছে নদীর একাংশ দখল করা স্থানে, নদী দখলমুক্ত করার জন্য আরও কিছু স্থাপনা ভেঙে ফেললেও এই ক্লাব অক্ষত ছিল, নদী আর দখলমুক্ত করা যায়নি। আরও জানা গেল ঐ ক্লাবের সভাপতি পুলিশেরই বড়কর্তা। কিন্তু এগুলো নিয়ে মিডিয়াতে আর কোনো কথাবার্তা এরপর দেখা যায়নি। নদী দখলেই থাকলো পুলিশ কর্তাসহ বড় বড় ভিআইপিদের কারণে! পরী এখন পুলিশের কারাগারে।
র্যাবের বিশাল বাহিনী গিয়ে পরীমণিকে আটক করার পরের মুহূর্ত থেকে পরীমণির বিরুদ্ধে অপমানজনক কুৎসামূলক যৌন আক্রমণাত্মক প্রচারণা চলতে থাকলো মিডিয়ায়, ফেসবুকে। সিনেমা কাট দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা চললো। কিন্তু এসব সিনেমা তো সরকারের সেন্সর বোর্ড পাশ করা! এই সিনেমাগুলিতে যৌন হয়রানি, নারীকে ছোট করা, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, অপরাধ এগুলোই তো কমন। এসব ছবিতে নায়কেরা যা করে নায়িকাকে পটাতে চায়, নায়ক বা মাফিয়াদের খুশি করতে নারীকে দিয়ে যা করানো হয়, যেভাবে মেয়েদের উপস্থাপন করা হয় সেগুলোকেই বলে যৌন হয়রানি, যৌন সন্ত্রাস! সহিংসতার নিত্যনতুন পরিবেশনা চলতে থাকে, যেন নতুনদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বছরের পর বছর সেন্সর বোর্ড এগুলোকেই উৎসাহিত করে যাচ্ছে।
দেশের ‘সম্মানিত ভিআইপি’দের ব্ল্যাকমেইল করাকে কয়েকজন নারীর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ হিসেবে তোলা হয়েছে। কাকে কাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা হয়েছে, কী কারণে তা করা সম্ভব হলো তা জানলেই অনেককিছু খোলাসা হতো। প্রথমে বলা হয়েছিল এদের তালিকা হচ্ছে, এখন যথারীতি বলা হচ্ছে, না তা হবে না। তা তো বটেই!
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক, আত্মহত্যা/খুনের মামলার আসামী, কে গ্রেফতারে বিশাল বাহিনী যাওয়া তো দূরের কথা কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই আসামী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে পুলিশ। খুনের হুমকি দিয়েও শিকদার গ্রুপের বড় ব্যবসায়ীদের ঘন্টায় জামিন হয়ে গেছে। খুন ধর্ষণের বহু অপরাধী বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চোরাই কোটিপতি, খুনী, যৌন সন্ত্রাসী, নদী-বন দখলকারী, ব্যাংক লোপাটকারীরা রাষ্ট্র চালালে সরকারি বাহিনী এরকম উল্টো দিকেই হাঁটে আর আইনআদালতও অকার্যকর হয়ে যায়।
বিখ্যাত একটি চলচ্চিত্রের গল্প দিয়ে শেষ করছি আমি। পিয়ের পাওলো প্যাসোলিনি ১৯৭৫ সালে ‘সালো অর দ্য 120 ডেইজ অব সডম’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণ করেন। ছবিটিকে চলচ্চিত্র ইতিহাসের ভয়াবহতম এবং অসামান্য একটি কাজ হিসেবে গণনা করা হয়। এই ছবিটিই ছিল প্যাসোলিনির শেষ ছবি, এই ছবি বানানোর পর তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয় হয় তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। প্যাসোলিনির ছবিটিকে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার হিসেবেও গণ্য করা হয়। ছবিটির মূল বিষয় হল, আইন, বিচার আর শাসন বিভাগের সাথে সংবাদ মাধ্যম এক সূত্রে গ্রথিত হলে কী ঘটতে পারে তার বীভৎস চিত্রায়ণ। ছবিটি দেখলে পরীমনি বিষয়টি অনেকাংশে স্পষ্ট হবে।
শুভকামনা আপনার জন্যে
রাজিক হাসান
"
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       