ডেস্ক

Published:
2021-06-15 13:16:08 BdST

এক ফটো সাংবাদিক, বউ নায়িকা : একটি মামুলি স্মৃতিচারণ অথবা নিছক ফিকশন


লেখক এর ছবি 

 

 

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
________________________


১.
আমি তখন ঢাকার একটি সুপরিচিত হাসপাতালে সিএমওর দায়িত্বে। একজন ফটোসাংবাদিক ইঞ্জুরি নিয়ে হাসপাতালে এলেন। রেফারেন্স ছিল একটি নামকরা পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদকের। এমডি সাহেবও বিষয়টিতে ইনভলভ। বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছেন। সুতরাং আমরাও সবাই সদাসচকিত।

আমরা যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে রোগীকে সরাসরি অপারেশন থেটারে পাঠালাম। অপারেশন টেবিলে অজ্ঞান করবার আগে তিনি যন্ত্রণাকাতর অভিব্যক্তি নিয়ে বললেন, তাঁর স্ত্রীর সাথে একবার দেখা করতে চান।

খুবই মানবিক আবেদন।

তাঁর স্ত্রী অপারেশন থিয়েটারের দরজায় হাজির ছিলেন। তাঁকে গাউন পরিয়ে ভেতরে আনা হলো। আমরা সবাই ধাক্কা খেলাম। সাংবাদিকের স্ত্রী একজন অপরূপা তরুনী।

জানতে পারলাম তিনি একজন মডেল ও উঠতি নায়িকা। তরুনী অপারেশন থেটারে প্রবেশের সাথে সাথেই টেবিলে শোয়া কথিত স্বামীকে জড়িয়ে ধরে ওষ্ঠে চুম্বন করলেন। সেই চুম্বন চকিত নয়। দীর্ঘ ও স্থির। আমরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম৷ মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর সিস্টারকে ইশারা করলাম। সিস্টার তাকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন। কিন্তু অনিচ্ছুক তরুনী সিনেমাটিক ভংগিমায় কোনরকমে স্বামীর হাত ছুঁয়ে শেষাবধি বিচ্ছিন্ন হলেন। যেন বলতে চাইলেন ওকে নয় আমাকে কাটাছেঁড়া কর। তরুনী কেঁদে কেঁদে আমাকে বললেন "ডক্টর আমাকে অজ্ঞান করেন, আমাকে অজ্ঞান করেন"। আমি তাকে আশ্বস্ত করতে বললাম "আচ্ছা, আমি বিষয়টা দেখছি"।

২.
মাইনর ইঞ্জুরি। একদিন বা দুদিনেই হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া যায়। কিন্তু তাদের ছুটি নেবার তাড়া নেই। বলল আরো দুই-এক দিন থাকবে তারপর যাবে৷

রোগীর তরুনী স্ত্রী সারাদিন বাইরে থাকে। শুনেছি শ্যুটিং করেন। আসেন রাত দশটায়৷ কেবিনে এসেই বাইরের পোশাক বদলে বিশেষ ঘরোয়া পোশাক পরে স্বামী-স্ত্রীতে বিশ্রাম নেন।

আমাদের নিউরোসার্জন প্রতিদিন রাউন্ডে আসেন রাত সাড়ে দশটায়৷ আমাদের ইয়ং নিউরো সার্জন ছুটি দেওয়া রোগীকেও প্রতিদিন এসে ভিজিট করেন। আর তাঁর কথিত উঠতি নায়িকা স্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। আমাকে নিউরোসার্জন বললেন "উজ্জ্বল ওর তো ছুটি। তবে বাড়িতে গেলে নাকি কেয়ার পাবেনা। ওর ওয়াইফ সারাদিন ব্যাস্ত থাকে। তাই এখানেই থাকতে চাচ্ছে আর কয়েকটা দিন।" আমি বললাম "আচ্ছা বস আমি বিষয়টা দেখছি। "

ইয়ং নিউরোসার্জনের স্ত্রীও ইয়ং। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ঐ হাসপাতালেই কাজ করেন। আমাকে ডেকে বললেন "উজ্জ্বল, তোমার ভাইয়াকে বলবা ঐ কেবিনে রাউন্ড না দিতে আর।"
আমি বললাম "আপা, আমি ব্যাপারটা দেখছি"।

৩.
দুইদিন পর আমার দুইজন অত্যন্ত সিন্সিয়ার ডিউটি ডক্টর ( যাদের একজন নারী) আমাকে আমার অফিস কাম চেম্বারে এসে বললেন " ভাইয়া আমরা পাঁচ তলায় ডিউটি করতে পারবোনা। আপনি একটা একশন নেন, নয়ত আমাদের রেজিগিনেশন এক্সেপ্ট করেন। "

আমি বললাম, কি হয়েছে?

ঐ যে পাঁচতলার পাঁচশ অমুক নাম্বারের পেশেন্ট, যার বউ নায়িকা, মেয়েটা প্রতিদিন রাত দশটায় রুমে আসে। এগারটার পর আপনারা চলে যান। বারটার পর থেকে ওরা ড্রিংক শুরু করে। উদ্ভট চিল্লাচিল্লি, হৈ চৈ করে। কড়া গন্ধ। ফ্লোরে শুয়ে থাকে এলমেলো হয়ে৷ কাল রাত চারটায় বাথ্রুম থেকে বের হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেছিল মনে হয়। আমি আর সিস্টার শব্দ শুনে রুমে গেলাম। রুমে ঢুকে দেখি জঘন্য অবস্থা। মেয়েটা প্রায়...... ভাইয়া বলতে পারছিনা।

আমাদেরকে দেখার পর শুরু করলো অকথ্য গালিগালাজ। হাজব্যন্ড ওয়াইফ দুজন মিলে আমাকে লক্ষ্য করে গালি দিতে থাকলো। একটা মানুষ ফ্লোরে পড়ে গেছে৷ আমি তো অন্তত প্রেসারটা দেখব। মেয়েটা আমাকে...... "

আমি বললাম " তোমরা টেনশন নিওনা, আমি বিষয়টা দেখছি"।

পরদিন এক রকম জোর করে বের করে দেওয়া হলো রোগীকে। বের করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে৷ সেই গল্প থাক।

বছর খানেক পরে দেখি ঐ রোগীর কথিত তরুনী স্ত্রীর চারপাশে ব্যপক নাম ডাক৷ মেয়েটি বিখ্যাত নায়িকা হয়ে গেছে। দেশজুড়ে তার ব্যাপক চর্চা। তবে সেই সাংবাদিকের সাথে আর কখনো আমার দেখা হয়নি।

 

আপনার মতামত দিন:


বিনোদন এর জনপ্রিয়