Ameen Qudir

Published:
2018-08-28 17:53:17 BdST

আবেগের জলসায় :সাধারণ জনতা থেকে সেলিব্রেটি :সবাই জলসা ম্যানিয়ায় আক্রান্ত


 

 

 

ডা. আশীষ দেবনাথ
______________________________

টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, জি-বাংলা নিয়ে এদেশের পুরুষ কূলে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেখছি গত কয়েক বছর যাবত। সাধারন জনতা থেকে সেলিব্রেটি সবাই এই জলসা ম্যানিয়ায় আক্রান্ত !! এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ, এমনকি পাড়ায় পাড়ায় যুদ্ধ সবই ঘটে চলছে।
এদেশের আবেগি জনতা ৮০'র দশকের শুরুতে বিটিভির সিরিয়াল 'এই সব দিন রাত্রি'র টুনির মৃত্যুতে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে। ৯০ দশকে 'কোথাও কেউ নেই' এর বাকের ভাইয়ের জন্য করেছে মিছিল। দু'জায়গাতেই মানুষের আবেগকে এমন চূড়ান্ত ভাবে উস্কে দিতে পারা যাদুকরটি প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ। তখন কিন্তু কেউ চ্যানেল বন্ধের কথা বলেনি। হুমায়ুন আহমেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিল মানুষ। কথা হোল স্টার জলসার ক্ষেত্রে এমন কেন?

আমি যখন বাসা ভাড়া নিয়ে জীবন শুরু করি, তখন বাসায় সদস্য সংখ্যা দুই। মা, আর আমি- বাসায় টিভিও দুটো। তখন ইটিভি বাংলা ছিল, মা উত্তম-সুচিত্রার ছবি দেখতেন- আর হাসতেন, কাঁদতেন। আমার ক্রিকেট, রাতের ইউরোপীয় ফুটবল কিংবা টক'শো দেখায় সমস্যা হতো বলেই হিজ হিজ হুজ হুজ হিসাব। এখন বাসায় সদস্য বেড়ে হয়েছে পাঁচ। ভারতীয় চ্যানেলও বেড়েছে। এসব সিরিয়াল, ছবি দেখায় মায়ের সঙ্গী এখন আমার মেয়ে। বউ তেমন দেখত না আগে। বছর খানেক আগেও ভারতীয় চ্যানেল এর সিরিয়াল দেখাটা মায়ের টিভিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই এক বছরে ধাপে ধাপে খেয়াল করেছি আমার টিভিটাও জলসার সিরিয়াল দখল করে নিল। শুরুতে আমি রাতে বাসায় ফিরলে তারা আর দেখত না। তখন মায়েরটাই ছিল ভরসা। এখন আমি পুরাই আউট। আমি টিভি দেখতে চাইলে আজকাল দেখি বিরক্তও হচ্ছে মা-মেয়ে। কারন কি? আমি সচেতন ভাবেই সামনে পরলে সিরিয়াল গুলি বুঝার চেষ্টা করেছি গত কয়েক মাসে।

এসব সিরিয়ালের কাহিনী মুলত নারী ও শিশু কেন্দ্রিক। অধিকাংশ সিরিয়ালের কাহিনীকারও নারী। নারীদের যাবতীয় আবেগ অনুভুতি নিয়েই এসব সিরিয়ালের কাহিনী আবর্তিত হয়। সিরিয়ালের কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে নারী [নারীবাদীতা]। সিরিয়ালের অভিনয় করা চরিত্রের ৮০ ভাগই নারী। পুরুষ আছে বটে, সাপোর্টিং রোল। অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ চরিত্র বোকাসোকা, আবাল টাইপের বটে !! আদতে নারী মনস্তত্বের আবেগি নাড়াচাড়াই এইসব সিরিয়ালের মুল উপজীব্য। এই আবেগের সামনে আপনি কেমন করে দাঁড়াবেন? এই কাঠগড়ায় পুরুষতো আদতে আসামীই। তাই বুঝি এতো জটিলতা।

টিভি চ্যানেল এর দিক বিবেচনায় এটা তাদের ব্যাবসা। তাদের দর্শক চাই। প্রাইম আওয়ারে পুরুষরা ঘরের বাহিরেই থাকে। সে সময় টিভিতো দেখে মুলত মহিলারাই। সেই বিবেচনায় এটা তাদের সফল পলিসি। পরকীয়া, কুটিলতা'সহ কাহিনীর বিভিন্ন দিকের যে সমালোচনা তা এখানে অভিযোগ হিসেবেই বিবেচ্য নয় বুঝি!! আপনি বাইরে অন্য নারীর সাথে পিটিস-পাটিস করবেন, সুতরাং তার পরকীয়ায় দোষ কোথায়? তাছাড়া তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবই উন্মুক্ত। অনলাইনে গেলেই হাতের কাছে পর্ণো সাইটসহ সবই নাগালে। আপনি কোন দিক ঠেকাবেন?

তারপরেও কিছু কথা থেকেই যায়। যার যার সমাজ/ পরিবারের প্রেক্ষাপট বিবেচনায়। অস্বীকার করার উপায় নেই, এসব সিরিয়ালের অতি আবেগের কচকচালি, কাহিনীর ধারাবাহিকতাহীনতা বিরক্তই লাগে। তাই নিয়ন্ত্রন করতে হলে ব্যক্তি বিশেষের জায়গা থেকেই করতে হবে। স্রেফ ভারত বিরোধিতা থেকে টিভি চ্যানেল বন্ধের চিন্তা হাস্যকর মনে হয়।

এসব চ্যানেলের কাহিনী আদতে নারীবাদী ভাবনার ভিস্যুয়াল প্রকাশ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রেক্ষাপটে ভাবলে এটা তাদের মানসিক নির্ভরতার জায়গা। তাদের মনস্তাত্বিক আন্দোলনের মিছিল বটে। আর তাই স্ত্রীর সাথে লেগে যায় স্বামীর, সিলেটে শিশু কন্যার সাথে লেগে যায় অন্য কারো। হয়ে যায় ভয়ানক মারামারি, কিংবা অনাকাঙ্খিত স্বামী- স্ত্রীর তালাক। কারন এ যে আদতে অস্তিত্বের লড়াই। আর এ লড়াইয়ে সবাই বিপ্লবী। কেউ কাউরে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।।

________________________

ডা. আশীষ দেবনাথ । বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ। নোয়াখালি। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


বিনোদন এর জনপ্রিয়