Ameen Qudir
Published:2018-02-28 17:07:54 BdST
শ্রীদেবী; কোন দেবতার দেবী?
ডা. আশীষ দেবনাথ
__________________________-
ফেসবুকে শ্রীদেবী মাতম। একটু কি বেশী বেশী মনে হচ্ছে? ভাবছি এটা কি তার জন্য শুধুই ভাললাগা কিংবা মুগ্ধতা নাকি তার থেকেও বেশী কিছু বলে। সিনেমার নায়িকা মানেই সুন্দরী, আকর্ষনীয়া, আবেদনময়ী, নাচ এবং অভিনয় জানা নারী। সাথে অন্যান্য শারীরিক ও মানবিক বিশেষত্ত্ব'তো থাকছেই।
নায়ক কেন্দ্রিক ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে মোটাদাগে নায়িকাদের নাম নিতে গেলে নিতে হয় নার্গিস, মধুবালা, হেমামালিনী, রেখা, শ্রীদেবী, মাধুরী এবং ঐশ্বরিয়ার নাম। এদের সবাই মেধাবী। তবে কেউ অভিনয়ে বেশ দক্ষ তো নাচে ততটা নয়। কেউ অতি আবেদনময়ী কিন্তু কমনীয়তায় হয়তো রয়ে গেছে ঘাটতি। কেউ এতই সুন্দরী যে শো কেসে সাজিয়ে রাখার মত কিংবা কেউ একদম 'ডল', কিন্তু আবেদনময়ী সে অর্থে হয়তো নয়।
তাই নায়িকা হবার প্রতিটি গুনাবলীকে সামনে রেখে যদি "পূর্নাঙ্গ নায়িকা"র (Complete Heroin) একটা স্ট্যান্ডার্ড সামনে ধারনা করা হয় তাহলে ভারতীয় বলিউডি সিনেমার ইতিহাসে মাত্র দুজনই এটির কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। তারা হলেন শ্রীদেবী এবং মাধুরী দীক্ষিত। যেখানে মাধুরী শ্রীদেবী থেকে একটু এগিয়ে বটে।
তবে শ্রীদেবীই ভারতীয় নায়িকাকূলের ইতিহাসে প্রথম তুলনামূলক কমপ্লিট হিরোইন। প্রথম নায়িকা সুপারস্টার। আর এখানেই শ্রীদেবীর শ্রেষ্টত্ব।
ভাবছেন এত এত নায়িকার নাম নিলাম আসল নামটাই'তো বলি নাই!! শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিতরা হলো ছবির নায়িকা। সিনেমায় নায়কের নায়িকা। যাদের নিয়ে আমজনতা ফ্যান্টাসী করে। এর বেশী কিছু নয়। আর সুচিত্রা সেন? যে নায়িকার বেলায় প্রতিটি বাঙালী নিজেরাই একেকজন নায়ক।।
২.
শ্রীদেবী; কোন দেবতার দেবী?
পত্রিকার হেডিংটা এখনো স্পষ্ট মনে আছে। আশির দশকে এই নায়িকা ছিলেন সবার হৃদয়ের রানী। তামিলে শিশুশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা এই দক্ষিনী দেবী বম্বেতে এসে মধ্য আশিতে প্রেমে পড়লেন বাঙালী নায়ক মিঠুনের। দুজন চুপিসারে মন্দিরে মালাও বদল করলেন। কথা ছিল মিঠুন স্ত্রী যোগীতাবালিকে ডিভোর্স করবেন, তারপর....। কিন্তু মিঠুন কথা রাখলেন না। আসলে মিঠুন কথা রাখতে পারলেন না হিসাবের গরমিলে! ভেবেছিলেন যোগীতা এই বিয়ের খবর জানলে নিজে থেকেই সন্তানসহ গৃহত্যাগ করবেন।
কিন্তু একই ভুলতো জীবনে ২য়বার করা যায় না! যৌবনের উচ্ছলতায় সাময়িক মতিভ্রমে ২০ বছরের যোগীতা হুট করেই বিয়ে করে ফেলেছিলেন ৫০ বছরের কিশোর কুমারকে। আসলে কিশোরের মায়াবী কন্ঠকে! ফল যা হবার তাই হলো। কিশোরের স্বল্প সময়ের সংসার ছেড়ে মিঠুনের ঘরনী হওয়া নায়িকা যোগীতাবালি তাই সতীন বরন করতে প্রস্তুত হলে বিপদে পড়ে যান মিঠুন। শ্রীদেবী তো সতীনের সংসার করবেন না। ফলে মিঠুন-শ্রীদেবীর আর ঘর বাঁধা হলো না।
এদিকে প্রায় একই সময়ে প্রযোজক বনি কাপুরের ছবির নায়িকা হবার সুযোগে বনির দেয়া বিবাহের প্রস্তাব শ্রীদেবী বরাবরে জমা পড়েছিল বছরের পর বছর। মিঠুনের অবিমৃষ্যকারিতায় সবশেষে হতাশ শ্রীদেবী বিবাহিত বনি কাপুরের প্রস্তাব গ্রহন করলেন। অবশ্য তার আগে বনি তার ১ম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন।
দুই কন্যা সন্তানের জননী শ্রীদেবী আমাদের মাঝে আর নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দুবাইয়ে আজ মৃত্যুবরন করলেন অকালেই। শান্তিতে থাকুন "দেবী"।
__________________________--
ডা. আশীষ দেবনাথ
সুলেখক ও নোয়াখালির বিশিষ্ট অবেদনবিদ
আপনার মতামত দিন: