Ameen Qudir
Published:2017-10-05 21:16:34 BdST
এভ্রিলের গল্পটা ভিন্ন হতে পারত
ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
______________________________
গল্পটা ভিন্ন হতেই পারত!
এক দুরন্ত উচ্চাকাঙ্খী বা স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণী কিংবা কিশোরী আয়না দেখে আবিষ্কার করল সে রূপসী।
একজন মেধাবী কিশোরী যেমন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখে,একজন ছোট্ট আঁকিয়ে যেমন চিত্রশিল্পী হবার স্বপ্ন দেখে,একজন নতুন কুঁড়ি পুরষ্কার প্রাপ্ত যেমন অভিনেত্রী হবার স্বপ্ন দেখে তেমনি কিশোরী এভ্রিল স্বপ্ন দেখেছে তার সৌন্দর্য দিয়ে জগৎ কে জয় করতে!
এই পর্যন্ত পড়ে যদি ধর্মকে টানতে যান,লেখক নীরব।কারন ধর্মে সুন্দরী প্রতিযোগিতা আছে কিনা,ব্লা ব্লা উত্তর আমি দিব না।আমি জানি এই দেশে শাবানা,ববিতা,কবরী আছেন।মৌসুমী,শাবনূর,অপু বিশ্বাস রা আছেন।সহজ কথায় তুলনামূলক ছোট দেশে প্রচুর টিভি চ্যানেল এবং ফিল্ম ইন্ড্রাষ্ট্রি থাকার কারনে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতায় এখানে বাংলাদেশী ছেলেমেয়েরা ক্যারিয়ার গড়ছে।
শাকিব খান,মোশাররফ করিমের শত শত কোটি টাকার হাতছানি এভ্রিলকেও উদ্যমী করেছে সৌন্দর্যকে পূঁজী করে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল এবং আলো ঝলমলে জীবন যাপনে।
বাংলাদেশে এই পেশা নিষিদ্ধ হলে আলাদা কথা ছিল।যেহেতু নিষিদ্ধ না।এভ্রিলের পরিবার কেন কিশোরী এভ্রিলকে বাল্য বিবাহে বাধ্য করল?
SUPPORT সাপোর্ট খুব ছোট্ট নির্ভরযোগ্য একটি শব্দ।এর দরকার আর পরিমান একমাত্র সেই অনুভব করতে পারবে যার সাপোর্ট দরকার।একটু খানি সত্যিকারের আন্তরিক সাপোর্ট একজন হাউজ ওয়াইফকে করে তুলতে পারে সেলিব্রেটি রন্ধনশিল্পী।আর এই সাপোর্টের অভাব একজন এমবিবিএস বা পি এইচ ডি নারীকেও করে তুলবে হাউজ ওয়াইফ!
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে মেয়েদের পড়াশুনা,বিয়ে,ক্যারিয়ার,সংসার এখনো তার নিজের যোগ্যতা কম,,,বাপের পয়সা,কম্প্রোমাইজ আর ভাগ্যের উপর বেশী নির্ভরশীল!সেখানে ক্লাসের সবথেকে ব্যাকবেঞ্চার মেয়েটি হয়ে যেতে পারে বিশাল সেলিব্রেটি আর সবথেকে ভদ্র,শান্ত,দায়িত্বশীল মেয়েটি সমাজ থেকে বেয়াদবের তকমা পেতে পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
এমন একটি দেশে এভ্রিলের বাবা তাকে বাল্য বিবাহ না দিয়ে তাকে গানের স্কুলে ভর্তি করে দিতে পারত।দিতে পারত অভিনয় প্রশিক্ষন।
আজ এভ্রিল MISS WORLD BANGLADESH এর এই মঞ্চে চোর,চুন্নী,বাটপার,প্রতারক এর খেতাব না পেয়ে,পেতে পারত অতল সম্মাননা।তার কৃষক পিতা তাকে ত্যাজ্য করার ঘোষনা না দিয়ে গর্বিত পিতার আনন্দের অশ্রুজল দেখাতে পারত সারা বিশ্বকে!
আর তা না হবার কারনে আজ শত শত ভুল হলো।এভ্রিলের বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদে আমি একাত্ম।
কিন্তু এভ্রিল!আমার সাথে হওয়া কোন অন্যায় ই আমাকে অন্যায় করবার অধিকার দেয় না।
বাল্য বিবাহ হয়েছে।মেনে নিতে পারোনি।হাই স্পীড বাইক রাইডার হয়েছ!অভিনন্দন মেয়ে!
কিন্তু তাই বলে তুমি অনিয়ন্ত্রিত,অনৈতিক জীবন যাপন করতে পারো না।কারন এক নারীর অনৈতিক জীবন যাপন হাজার পুরুষের সংসারে অনৈতিকতা এনে দেয়।তুমি নিজের কাবিন হওয়া বিয়ে লুকিয়ে কিংবা আয়োজকদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারো না।
কম বয়সে বিয়ে হয়েছে বলে বিয়ে মানি না।এটা খুব ই খোঁড়া যুক্তি।তুমি এস এস সি,এইচ এস সির জাল সার্টিফিকেট নিয়ে যেমন মেডিকেল ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারো না।তেমনি বিবাহিত হয়েছ,মানে তুমি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার অযোগ্য।
এই মিথ্যাচার এবং প্রতারনা করে তুমি শুধু নিজের গ্রহনযোগ্যতাই হারাওনি।তুমি আমার প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ছোট করেছ।
তুমি তোমার ব্যক্তিগত বঞ্চনা থেকে পুরো বাংলাদেশকে সম্মান পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারো না।
আমার দেশকে অপমান করবার অধিকার তোমায় কে দিয়েছে?
আয়োজকদের ও একি প্রশ্ন করতে চাই।এতদিন ধরে প্রতিযোগিতা চলল আর এমন হাই স্পিড এক মেয়ে যার এত বন্ধু সম্বলিত জীবন সেখানে আপনারা জেনেশুনেই সব করেছেন।কি প্রাপ্তিতে বিচারকের রায় কে উপেক্ষা করেছেন জানি না।কিন্তু কোন অধিকার,কোন সাহসে করলেন??
নীতি নৈতিকতার চরম অবক্ষয়,জবাবদিহিতা বিহীন সমাজ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিবাদ বা সোচ্চার জাতির বিবেকের অভাবে আজ যে যেইভাবে পারছে দেশটাকে অসম্মান করছে।
আমি তাই এই ঘটনায় জড়িত সকলের বিচার দাবী করি।
আর এভ্রিলের পিতার এই দায়িত্বহীন শত্রুসুলভ আচরন থেকে দেশের সকল পিতামাতাকে শুধু কন্যা সন্তান নয়,সন্তানের প্রতি সাপোর্টিভ হবার আকুতি জানাই।
সন্তানরা যেন কেবল পিতামাতার ইচ্ছেতে নয়,নিজের ইচ্ছেতেও ডানা মেলে দূর আকাশে!
ছুঁয়ে দেখে স্বপ্নকে!জয় করে স্বপ্নের চূঁড়াকে!!!
_____________________________
Dr.Sherin Sabiha Tonny , বরিশাল।
আপনার মতামত দিন: