Ameen Qudir

Published:
2016-12-07 15:35:09 BdST

বাবা, তুমি খুনী :মায়ের শাড়িটা ফিনকি দেয়া রক্তে লাল :সব দেখেছি




ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
_______________________________

প্রিয় বাবা ,,
তুমি কেমন আছ?আমি ভাল নেই।।আসলে আমি কেমন আছি সেকথা জানার ইচ্ছে কি আদৌ তোমার আছে।আমার মনে হয় শুধু নয়,আমি নিশ্চিত জানি তোমার নেই।আচ্ছা বাবা,তুমি আমাকে চিনতে পেরেছ তো??মনে আছে আমার কথা তোমার!আমি বাবুন।


মা আর তুমি আদর করে এক সময় আমাকে এই নামে ডাকতে।যদিও সেই স্বর্ন সময়টা এতই আগের যে আমার একেবারেই মনে নেই বাবা।।


আচ্ছা বাবা,আমার মাকে মনে আছে তো তোমার!সেই যে শ্যামলা রঙা গোলগাল মুখের মিষ্টি চেহারার এক নারী।খুব চুপচাপ থাকত।খানিকটা বোধ হয় মনমরাও।কেবল আমার সাথেই সে প্রান খুলে হাসত কালে ভদ্রে!বাকী সময় বেশ আধাঁর মুখো।মনে আছে বাবা তোমার আমার সেই গোমরামুখী মাকে???


আমার কিন্তু সব মনে আছে বাবা।সবাইকে মনে আছে।দাদা ভাই,,দিদা,,ফুফুনী,,ফুফা,,ছোট কাকা।কি করে ভুলি তোমাদের???তোমরা তো আমার বাল্যকালের রুপকথার বইয়ের রাক্ষস খোক্ষস!!!


আমার সব মনে আছে।।
আমার যখন বয়স মাত্র চার প্লাস,তোমরা একদিন মাকে খুব মারলে।খুব খুব খুব।আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম।মা !!!মাগো বলে ডাকছিলাম।।মাকে বলেছিলেম।মা চলো আমরা চলে যাই।বাবারা তোমাকে মেরে ফেলবে।তোমরা কেউ আমার কথা শুনলে না।আমি খুব ভয় পেয়েছিলেম।জ্বর উঠে গিয়েছিল।জ্বরের ঘোরে আমি অচেতন।মার সারা শরীরে আঘাত।ছোট মামা থানায় গিয়েছিল।তোমাকে পুলিশ ধরে নিল।পত্রিকায় খবর হয়েছিল।।


এর আগেও তোমরা আমার মাকে অনেক বার মেরেছিলে।মারার জন্য তোমাদের বাহানার শেষ ছিল না।আমার নরম মনের ভীরু মা।ডাক্তার ছিলেন পেশায়।নেশা ছিলাম আমি।তোমরা শুধু মারতেই না তাকে খুব বকতে।কুৎসিত ভাষায়!রোজ!!


মায়ের নরম মন।তোমাকে ক্ষমা করল।জেল থেকে ছাড়া পেলে।কদিন আমরা বেশ সুখী ছিলাম।মা কি জানত এটা তোমার অভিনয় ছিল!একবার ও কেন আঁচ করতে পারল না।পালাল না আমাকে নিয়ে!!

 

তোমরা একদিন মিথ্যে করে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করলে।সবাইকে ডাকলে।তারপর এটা ওটা নিয়ে মার সাথে সবাই ঝগড়া করলে।মা দিশেহারা।যেন কিছু মেলাতে পারছে না।জান, বাবা???ঐ প্রথম আমি মায়ের চোখে মুখে একটা প্রচন্ড ভয়ের আভাস দেখতে পেয়েছিলেম।আমি তখন পাঁচ প্লাস।দিদা মার কাছে টাকা চাইল।গয়না চাইল।তুমি ডাক্তার।তোমার সব আয় দিদাকে দাও।মার টাকায় মা আমার শখ আব্দার আর প্রয়োজন মিটাতেন।।তুমি আমার আর মায়ের কোন খরচ কখনও দিতে না!মা তাই কিছুতেই টাকা দেবে না।কি অনুনয় বিনয় তার!এক পর্যায়ে তুমি মাকে মারতে শুরু করলে।

তারপর কাকা,দিদা,ফুফু,ফুফা,দাদা......সবাই মিলে প্রচন্ড মারলে আমার মাকে!আমি চিৎকার করলাম।মাকে বাঁচাতে চাইলাম।এক সময়ে চোখে এলোমেলো দেখতে লাগলাম।একটা মোটা রড দিয়ে তুমি মাকে মারলে!মা বাবুন বলে চিৎকার করল।ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোল ।তারপর সব ঝাপসা বাবা।সব ঝাপসা।

আর কিছু মনে নেই।ঐদিনের আর কিছুই মনে নেই আমার!
মাকে ঐ শেষ দেখেছি।আর দেখা হয় নাই।।
এরপর থেকে হাসপাতালে আমি।নানী থাকত আমার পাশে।নানা আসত।মামা আসত।আর পুলিশ আসত।ওনারা আমাকে অনেক প্রশ্ন করত।আমি শুধু মুখ নড়তে দেখতাম।কিছু বুঝতাম না।।


এরপর আস্তে আস্তে একটু একটু করে আমি কথা বুঝতে শুরু করলাম।নানা নানীর কাছে থাকি।নানা খুব বুড়ো হয়ে গেছেন।নানীর চোখে ছানি।দেখতে পায় না।নিজেকে আমার একটা বোঝার মত লাগে।বুড়ো বুড়ির ঘাড়ে চেপে আছি।আমি তো ছোট।ফাইভে পড়ি।কাছাকাছি স্কুলে।আমাদের বাসার রান্নার খালার ছেলে আর আমি একি স্কুলে।ওর অনেক বন্ধু আছে।আমার নাই।আমি অনেক অমনযোগী।আমি নাকি বিষন্ন।  পেনিক।

 

 

মডেল ছবি ব্যবহার করা হয়েছে বাস্তব এই কাহিনিতে।

___________________________

বাবা,

 

আমার খুব ভয় লাগে বাবা।ভীষন ভয়!!!

বড় মামা দূরে থাকেন।ছোট মামা মামী কাছেই।আসেন মাঝে মাঝে।তোমার গল্প বলে ওরা ,আমাকে লুকিয়ে।তুমি বিয়ে করেছ রোজা আন্টি কে।ঐ যে তোমার বুলু মামার মেয়ে।।তোমাদের নাকী দুটো মেয়ে আছে!তুমি খুব ধনী!!!নানা নানীর চিকিৎসা,আমার মায়ের যৌতুক,কেস - সব মিলিয়ে এরা এখন বিত্তহীন।আমার পছন্দের কোন খেলনা নেই।খাবার নেই।আমার জন্য কেউ টিফিন বানায় না বাবা।আমি একটা পরগাছা।। জান বাবা,আমার আরো একটা সমস্যা আছে সেকথা আমি কাউকে বলি না।আজ তোমাকে বলছি।আমি মাকে দেখতে পাই।মা ধবধবে সাদা শাড়ী পড়ে আসেন।আমার কাছে পিঠে থাকেন।কপালে হাত বুলান।মলিন মুখের মা আমার !!!ধবধবে সাদা শাড়ীটাতে ছোপ ছোপ টকটকে লাল রক্ত বাবা।।টকটকে লাল রক্ত................................!!!!

 

,একটি দশ বছরের শিশুর আত্মহত্যার তদন্তে পুলিশকে সাহায্য করতে এসে সাইকোলজিষ্ট রিতু এই ডায়েরীটা পেয়েছেন।।লেখা শেষে বেশ কিছু হাবিজাবি আঁকা।অশ্রুসজল চোখে রীতু দেখল " বাবা তুমি খুনী "
#পারিবারিক #হিংস্রতাকে #না #বলুন।।


______________________

ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী । মেডিকেল অফিসার , শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল। সুলেখক। দরদী ভাষায় ফুটিয়ে তোলেন জীবনের গল্প।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়