Ameen Qudir

Published:
2019-01-21 05:12:54 BdST

বিশেষ ডা. নুজহাত চৌধুরী সাংসদ হচ্ছেন !


 



ডা. স্বীকৃতি সাহা
_____________________

মেধাবী তরুণ চিকিৎসক, সুবক্তা ডা. নুজহাত চৌধুরী জাতীয় সংসদে যাচ্ছেন। সংরক্ষিত নারী আসনে তিনি সাংসদ হবেন , তার শুভাকাঙ্খীরা খুবই আশাবাদী। তাকে সংসদে চান দেশের চিকিৎসক সমাজ।
অসাধারণ বাগ্মী ও তার্কিক তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের অনন্য অগ্রসর ব্যাক্তিত্ব।
একাত্তরের ঘাতক গোলাম আজম, কসাই কাদের মোল্লা , আলবদর কমান্ডার নিজামী , মুজাহিদ , সাকা চৌধুরীসহ ইতিহাস ঘৃনিত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদৈর মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা।

একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে তিনি । বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
তার মা শিক্ষাবিদ ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ সাভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। ডা. নুজহাত চৌধুরীর স্বামী লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. মামুন আল মাহতাব ।
বাংলাদেশের অগ্নিমুখর আন্দোলনের দিনে
১৯৬৯ সালের ২৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নুজহাত। জন্মের পর অবুঝ জীবনেই ঘটে জীবনেতিহাসের শোকাবহ ঘটনা। আলবদর আলশামসদের হাতে শহিদ হন তার পিতা ডা. আলিম চৌধুরী।
তিনি বেড়ে ওঠেছেন ঢাকায়। রাজধানীর উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন।

পরবর্তীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস (অপথালমোলজি) করেছেন। রেটিনার ওপর ভারতের এলভিপিএল থেকে ফেলোশিপ করেছেন এ প্রখ্যাত চিকিৎসক।

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে কর্মজীবন শুরু । নয় বছর কাজ করেছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে। এরপর সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দেন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিভাগে।

ডা. নুজহাত চৌধুরী ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং প্রজন্ম একাত্তরের প্রতিষ্ঠাতা সাংস্কৃতিক সম্পাদক।

এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অপথালমোলজি সোসাইটির বিনোদন সম্পাদক এবং একাডেমি অব অপথালমোলজির কোষাধ্যক্ষ। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ইংরেজি ও বাংলায় নিয়মিত কলাম লিখেন। একজন ভালো বক্তা ও উপস্থাপক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। টেলিভিশনেও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও রাজনীতি বিষয়ক টকশোতে নিয়মিত অংশ নেন।

এবারের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্স অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন ডা. নুজহাত চৌধুরী।

তার লেখা ‘এ লড়াই অনিবার্য ছিল’ মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি অনবদ্য বই।

 

__________________________

 

 

বঙ্গবন্ধু কন্যাকে নিয়ে নুজহাত চৌধুরীর লেখা ।

এখন তিনিই বাংলাদেশ

ছেলের স্কুল থেকে ফোন এল, শরীর খারাপ লাগছে তার, যেন আমি গিয়ে নিয়ে আসি। ছুটতে ছুটতে গেলাম। ফ্রন্ট অফিসে বসে আছি। ছেলের আসতে একটু দেরি হবে, এই ক্লাসটা শেষ হলে ছাড়বে।

একটু দূরে অন্য একটি সোফায় ছোট্ট একটি ছেলে হাপুস নয়নে কাঁদছে। খুব ছোট, প্লে গ্রুপের বাচ্চা, তার মানে ৩ কি ৪ হবে বয়স। সঙ্গে যে আয়া দাঁড়ানো তার কথায় কোনো কাজ হচ্ছে না। ফ্রন্ট ডেস্কের লোক দুটোকে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। বলল বাচ্চাটার খুব জ্বর এসেছে, মাকে জানানো হয়েছে, আসতে দেরি হচ্ছে মায়ের, তাই এই ব্যাকুল কান্না।

আমিও মা, বাচ্চাটার কান্না দেখে অস্থির লাগছিল। কী অসহায়ের মতো কাঁদছে। ভাবলাম আজকের বাচ্চারা মোবাইল তো খুব পছন্দ করে, আমার মোবাইলটা দিয়ে একটু ভুলিয়ে রাখি। কাছে ডাকলাম। বললাম, “আমার মোবাইলটা নিবে?”

একটু থামল কান্না। ভ্রু কুঁচকে বলল, “তোমার মোবাইলে গেইম আছে?”

ভাবলাম মাথা খারাপ। তাহলে আর আমার কোনো মোবাইলই এক মাসও টিকবে না আমার ছেলের যন্ত্রণায়।বললাম, “না, কিন্তু একটা দুষ্টু ভাইয়ার ছবি আছে। দেখবে?”

“হু।”

আমার কোল ঘেঁষে দাঁড়াল। আমি ফটো গ্যালারি খুলে এক এক করে ছবি দেখাতে শুরু করলাম। যাক, কান্না থেমেছে। শুরু হল প্রশ্ন। “এতা কে”, “ওতা কী”, “তাইলে অতা কী?”

উচ্চারণ এখনও অস্পষ্ট, আধো আধো বোলে কত জিজ্ঞাসা! আলতো করে গালটা ছুঁয়ে দেখলাম। ও মা! গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে! আমি তার সীমাহীন প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলাম, আর দোয়া করতে থাকলাম ওর মা যেন তাড়াতাড়ি এসে পড়ে।

আমার খুব সৌভাগ্য হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটা সেলফি তোলার। ওটা আমি কখনও মুছি না, আমার মোবাইলেই থাকে। অন্য সব ছবি ফোনে তুলে পরে কম্পিউটারে ডাউনলোড করে মুছে ফেলি, শুধু ওটা ছাড়া। বঙ্গবন্ধুর মেয়ের সঙ্গে ওই ছবি তোলার সুযোগ ছিল আমার অনেক বড় একটি আনন্দের স্মৃতি। পরে ছোট আপার সঙ্ওগে ছবি তোলার সুযোগ হয়েছে। এখন দুটোই থাকে ফোনে আমার আনন্দের স্মৃতি হয়ে।

ফোনে এক এক করে ছবি আসছে, সে দুনিয়ার প্রশ্ন করছে, আমি উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সেলফিটা এল। এবার আমার কৌতূহল হল দেখতে বাচ্চাটা কী বলে। আমি প্রশ্ন করলাম তাকে, “বল তো উনি কে?”

খুব ক্যাজুয়াল ভঙ্গিতে ভাঙ্গা উচ্চারণে উত্তর দিল, “এতা? এতা তো বাংলাদেশ।”


ভাবখানা এমন যে, এটা কোনো প্রশ্ন হল!

“কী? কী বললে তুমি?”

আবার জিজ্ঞেস করলাম। ভাবলাম বেচারা প্রধানমন্ত্রী শব্দটা উচ্চারণ করতে পারছে না, ধরিয়ে দিই। বললাম, “উনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তাই না?”

ছেলেটা নাছোড়বান্দা, “এতা বাংলাদেশ।”

আমার মুখের হাসি আমার বুকের গর্ব ছাপিয়ে গেল। আমি খুব নিম্নস্বরে নিজেকেই নিজে বললাম, “হ্যাঁ, এখন আমাদের কাছে তিনিই বাংলাদেশ।”

জানি বাচ্চাটা কিছুই হয়তো বুঝে বলেনি। কিন্তু আমার মতো ‘৭১এর স্বজনহারার কাছে কথাটার অনেক বড় অর্থ আছে। বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজকের এই বাংলাদেশে এসে পৌঁছানোর যে কণ্টকাকীর্ণ দীর্ঘ যাত্রা, তাকে যারা বুকের রক্তক্ষরণ আর চোখের জলে ভেসে অনুভব করেছেন শুধু তাঁরা বুঝবেন, এই শিশুর কথাটা আমার মতো শহীদ পরিবারের কাছে আজ কতটা সত্য। ‘৭৫এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পড়ে এদেশ পরিণত হল এক মিনি পাকিস্তানে। সেই মিনি পাকিস্তান থেকে, আজকে আবার সোনার বাংলায় ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে আমরা আজ শুরু করেছি– এই অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানোর যে গল্প– সেই গল্পের রূপকার তো তিনিই– আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

আসলে, অন্য একটি কারণে আমি এতটা চমকে গিয়েছিলাম শিশুটির কথা শুনে। মনে পড়ে গেল, গত ১৪ ডিসেম্বর এই একই কথা আমাকে বলেছিলেন একাত্তরে স্বামীহারা এক শহীদজায়া– আমার মা। তাঁর দীর্ঘ ঘাত-প্রতিঘাতপূর্ণ, সংগ্রামময় জীবনের শেষে এসে সকল শোক ও অভিজ্ঞতার পরে তিনিও একদিন আমাকে এই একই কথা বলেছিলেন।

গত ১৪ ডিসেম্বের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগের আয়োজিত সভায় বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হবার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। এই প্রথম জননেত্রী শেখ হাসিনার সামনে কথা বলার সুযোগ হল। এ যে কী পাওয়া, কীভাবে বুঝাই! ৪৩ বছরের কত কথা! বাবার হত্যাকারীকে দেখেছি মন্ত্রী হতে। এমন বাংলাদেশে বড় হয়েছি যেখানে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হতে দেওয়া হয়নি। কত অভিমান, কত কান্না, কত যন্ত্রণা এই বুকে!

সব একসঙ্গে উথলে উঠছে। এত আবেগ বুকে নিয়ে তাঁর সামনে আমি কী বলব? তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সামনে কথা বলার আমন্ত্রণটাও পেয়েছি হঠাৎ করে, সে দিন সকালেই। কিছু যে গুছিয়ে নেব সেই সময়ও নেই, মনের আবেগে মাথা ঠিক ঠাণ্ডাও রাখতে পারছি না।

আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি তাদের কাছে দেশ নিয়ে সমস্ত চাওয়া-পাওয়ার স্থল, সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা মান-অভিমান, হতাশা-ক্ষোভ প্রকাশের একমাত্র জায়গাও বঙ্গবন্ধু-সম্পর্কিত যা কিছু আছে তা ঘিরেই। আর সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। আমাদের মতো ‘৭১এ স্বজনহারা পরিবারগুলোর দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার তো বঙ্গবন্ধুর ডাকেই। তাই ফিরে ফিরে তাঁর দলের কাছেই ফেরত যাই, তাঁর মেয়ের কাছেই ফেরত যাই।

অথচ দীর্ঘ পথচলা আমাদের অনেক কঠিন শিক্ষা দিয়েছে। আজ জাতীয় রাজনীতির বক্রপথের এই মোড়ে দাঁড়িয়ে, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার তাঁর মেয়েরা ছাড়া সত্যি কি আর কাউকে তেমন বিশ্বাস করতে পারি? দল বলুন, দলের বড় বড় নেতা বলুন, পুলিশ বলুন, শিক্ষক বলুন, সাংবাদিক বলুন– স্বার্থের কাছে আদর্শ বিক্রি না করতে দেখেছি কজনকে? কাকে সত্যি বিশ্বাস করতে পারি জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে?

অনেক ঘা খেয়ে, বহু খেলা দেখে তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সকল আশা-ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছেন আজ একজনই– বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সন্তান আজকের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যাত্রার বাতিঘর শেখ হাসিনা। তাঁর একার স্কন্ধে তিনি বহন করে চলেছেন সমগ্র দেশের আশা, ভরসা, স্বপ্ন, শ্রমের ভার।

আমাদের পক্ষের লোক জন বার বার আপন-পর চিনতে ভুল করলেও, আমাদের যারা শত্রু, যারা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, তারা কিন্তু শেখ হাসিনাকে ঠিকই চিনেছে, তারা কিন্তু জানে সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য এই মানুষটি কতটা অপরিহার্য। তাই বার বার তাঁর উপর আঘাত এসেছে। আর তাই আমার সব ভয় তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে। ভয় হয়, এমন নিঃস্বার্থ, আদর্শের প্রতি অবিচল, নির্ভীক, সাহসী, নিখাদ জাতীয়তাবাদী নেতাকে ঘরে ও বাইরে বাংলাদেশের শত্রুরা চিনতে কি ভুল করবে? ওরা তো বঙ্গবন্ধুকে চিনতে ভুল করেনি, তাঁকে এতটুকু ছাড় দেয়নি, এতটুকু রাসেলকে পর্যন্ত রেহাই দেয়নি। আমাদের শত্রুরা এমনই নিষ্ঠুর!

আজ এই একজন মানুষের জন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বারবার ভেস্তে যাচ্ছে। শত্রুরা কি এই বসে থাকবে? ভয় হয় সারাক্ষণ– হয়তো ষড়যন্ত্র চলছে, ঘরে-বাইরে। শঙ্কায় আমার বুকটা কেঁপে কেঁপে ওঠে বারবার।

সেদিনের অনুষ্ঠানের আগে, কী বলব যখন ভাবছি, নিজের মনের আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, আজ তাঁকে আমার আর কিছু বলার নেই। আমি না চাইতেই তিনি তো আমাদের সকলের হয়েই সব কাজ করছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। শুধু তিনি যদি আল্লাহর রহমতে বেঁচে থাকেন, সুস্থ থাকেন– আমার মন বলে– আমাদের আর কোনো ভয় নেই।

 

১৪ তারিখের অনুষ্ঠানটা ছিল বিকেল তিনটায়। যখন বের হব, আমার মা তখন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে এসে গোসল করে নামাজ পরে মাত্র খেতে বসেছেন ক্লান্ত শরীরে। আমার অসহায়ত্ব, অস্থিরতা খেয়াল করেছেন। আমি বের হবার ঠিক আগে মা খাওয়া থেকে মুখ তুলে শুধু বললেন, “মা, তুমি তাঁকে বল, আমাদের কাছে এখন তিনিই বাংলাদেশ।”

আহ! কী চমৎকার কথা! কী যথার্থ এ বাক্য! কী করুণ! সব হারিয়ে আজ এটুকুই আছে আমাদের। এত শোক, এত কান্না, এত দীর্ঘ সংগ্রামের পরে আজ সব আশা-ভরসা তুলে দিয়েছি তাঁরই হাতে, তিনি আমাদের ভালোবাসার আপা, শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অনেক ত্যাগ স্বীকার করে, অনেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শেখ হাসিনা এই বিশ্বাস, এই সম্মান, এই ভালবাসা অর্জন করেছেন। নিজের ছেলেমেয়েকে দূরে ঠেলে দেশের মানুষকে বুকে তুলে নিয়েছেন– আমি নিজে মা হয়ে বুঝি সেটা কত বড় ত্যাগ। বিশ্বাসঘাতকতা, ভুল পরামর্শ, স্বার্থান্বেষীদের চাটুরাকিতা– সব মোকাবেলা করে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি তাঁর পিতার যোগ্য সন্তান।

যখন দাঁড়ালাম তাঁর সামনে, সমস্ত পৃথিবী মুছে গেল আমার চোখের সামনে থেকে। শুধু মনে হতে থাকল তিনি আমার বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, ‘শেখের বেটি’। তাঁর অফিসিয়াল সব বিশেষণ আমার মাথা থেকে মুছে গেল। তাঁকে আমি অন্তরের সব শ্রদ্ধা দিয়ে ‘শেখের বেটি’ বলেই সম্বোধন করলাম। পিতা-হারানো মেয়ে হিসেবে জানি, বাবার যোগ্য মেয়ে বলার চেয়ে বড় কোনো প্রশংসা পিতৃহারা মেয়ের হতে পারে না। আর বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরী হওয়া কি যে-সে কথা? শেখ হাসিনার জন্যও কি তা সহজ ছিল?

না, ছিল না। তিনি সেটা অর্জন করেছেন রক্তে, শ্রমে, ঘামে, ঘাতকের গ্রেনেড পরাস্ত করে। তাই তাঁকে স্যালুট দিয়ে বলি, ‘শেখের বেটি’!

তাঁকে বললাম আমার মায়ের কথা। মাত্র ২৮ বছর বয়সে দুটি ছোট বাচ্চা নিয়ে মা হারিয়েছিলেন তাঁর প্রথিতযশা স্বামীকে, ‘৭১ এর যুদ্ধে। সমাজের উচ্চ আসন থেকে হঠাৎ পতন কঠিন বাস্তবতায়। তারপর থেকে শুধু সংগ্রাম। দেখেছেন স্বামীর হত্যাকারীকে মন্ত্রী হয়ে স্বামীর রক্তে-রাঙানো পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে অর্থে, বিত্তে, দম্ভে বলিয়ান হতে। তবু আদর্শের সংগ্রামে অচল থেকেছেন।

আমার দুখিনী মা, আমার সংগ্রামী মা। তাঁর দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথচলার অভিজ্ঞতার পর, অনেক বুঝে অনেক অনুভব করে সেই শহীদজায়াও বলেছেন সেই একই কথা, “আমাদের কাছে আজ তিনিই বাংলাদেশ।”

আমার বক্তব্যের সময় কেঁদেছি আমি, অঝোর ধারায় কেঁদেছেন তিনিও। আমার শুধু মনে হল, বাপহারা মেয়ে তো! বয়স যতই হোক, যে অবস্থানেই থাকুন, বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা কি কখনও ভুলে থাকতে পারেন? ছোট্ট অসহায় রাসেলের কথা? বাচ্চা ছেলেটা কী ভয়টাই না পেয়েছিল সে রাতে। আহা রে!

এই কষ্ট বুকে নিয়েই চলছেন অথচ তাঁকেও মেরে ফেলার কত না ষড়যন্ত্র। আমার বুকের ভিতর শিউরে ওঠে। তাহলে কী হবে বাংলাদেশের? কী হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার? কে গড়ে দেবে সোনার বাংলা? তাঁকে হারালে তো সব শেষ হয়ে যাবে। সব।

তাই আজ দেশ নিয়ে আমাদের সকল দোয়া এখন তাঁকে ঘিরেই। অন্তর থেকে দোয়া করি তিনি বেঁচে থাকুন, সুস্থ থাকুন। সকল শহীদ পরিবার তাঁর জন্য দোয়া করে, বিধবারা তাঁর জন্য দোয়া করে, এতিমরা করি। তিনি বেঁচে থাকলে তিনি নিজের গতিতে, নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের কাজ করে যাবেন। সোনার বাংলা গড়ার কথা যে প্রতিশ্রুতি তাঁর পিতা আমাদের দিয়েছিলেন, সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করবেন সর্বান্তকরণে, সৎভাবে– এই বিশ্বাস তিনি অর্জন করেছেন।

সেদিন আমার বক্তৃতা শেষ হলে তিনি আমায় জড়িয়ে ধরেন বুকের মাঝে। আমি তাঁকে তখন শুধু এটুকুই বললাম, “আপনি বেঁচে থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুধু এটুকুই চাই।”

তিনি বেঁচে থাকলেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মশাল প্রজ্জ্বলিত থাকবে, এ দেশ সোনার বাংলা হবে। তাঁর হাতেই সব শোক, সব আশা সমর্পণ করেছি। তাঁকে ঘিরেই এ দেশের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। তিনিই আমাদের কাছে বাংলাদেশ।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়