Ameen Qudir

Published:
2018-07-28 17:41:00 BdST

মেডিক্যাল কলেজের খালি পেটে লড়াই করা ছেলে আগামীর রক্তচোষা হয় না




প্রীতম মন্ডল, কলকাতা
_________________________________

সকালে উঠেই একজন জনৈক শিক্ষক দেখলাম মেডিক্যাল কলেজের না খেয়ে লড়ে যাওয়া ছেলে গুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা লম্বা চওড়া লেখা লিখেছেন। অনেক লাইক, কমেন্ট, শেয়ারও হয়েছে দেখছি। উনি বলেছেন এরাই নাকি পরবর্তীকালে টাকার জন্য হিংস্র হয়না হয়ে উঠবে। তাই ওনাকে উদ্দেশ্য করে আমার কিছু কথা।

স্যার, আপনার বেশ কিছু লেখা পড়েছি, পড়িও সময় পেলে, বেশ ভালো লাগে। এটাও লাগলো। পেটে পেরেক পুঁতে নিজেদের অধিকার আদায় করেছি আমরা, এটা নিশ্চয়ই আগামীর পথকে উজ্জ্বল করে। সত্যিই করে। আসে পাশের মানুষ যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটা দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছে।
আপনি হাসপাতালের দুরবস্থার কথা বলেছেন। আপনার পর্যবেক্ষণ একেবারেই সত্যি। ভাঙা বেড, ছেঁড়া বেডশিট, পোকা মাকড় ভর্তি তোশক, বেডের নীচে ময়লা, রক্ত, নোংরা জল, পেচ্ছাপ, সিরিঞ্জ, নিডিল, এসব যেখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে। এদের সব কটাই রুগীর পক্ষে ক্ষতিকর। এটা আমিও জানি আপনিও। কিন্তু কি করবো বলুন, চিৎকার করে করে আমাদের গলা থেকে এখন শুধু রক্ত বেরোয়। হাজার বার বলেও কিছু লাভ হয়নি। আর হবে বলেও মনে হয় না।
স্যার, আপনি অনেক কথাই বলেছেন, অনেক কিছুই জানেন, এবার আমি কিছু বলছি একটু ধৈর্য্য ধরে শুনুন।

একটা হাসপাতালে প্রত্যেকটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট আলাদা আলাদা লোক দরকার হয়। কেউ ঝাঁট দেয়, কেউ ওষুধ আনে, কেউ অক্সিজেন সাপ্লাই দেখে, তো কেউ ট্রলি সাপ্লাই দেখে, ডাক্তার রুগী দেখে, ইন্সট্রাকশন দেয়, নার্স ওষুধ দেয়, ওয়ার্ডে কি জিনিস কোথায় যাচ্ছে কতটা যাচ্ছে, কি জিনিস নেই, কোনটা আনতে হবে, কোন রুগীর ওষুধ পড়েনি, এসবই ওরা দেখে। এবার মজা হচ্ছে প্রত্যেক কাজের জন্য নির্দিষ্ট লোক দরকার তো মানলাম, কিন্তু লোক কই?
আসল খেলাটা এখানে। না আছে পর্যাপ্ত লোকবল, না আছে পর্যাপ্ত ওষুধ, না আছে পর্যাপ্ত বেড, না আছে সাফাই কর্মী, না আছে পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, আয়া, যন্ত্রপাতি, না আছে পরিকাঠামো। আর সিকিউরিটির কথা তো ছেড়েই দিলাম। একটা ইমারজেন্সি রুগীকে পরীক্ষা করার জন্য বেড ও নেই। অক্সিজেন লাইন ঠিক করার জন্য রুগী মরে গেলেও ডেকে ডেকে লোক পাওয়া যায় না। ক্যাপিলারি ব্লাড গ্লুকোজ মাপার মেশিনও নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করে কিনতে হয়। হাই সুগার নিয়ে একটা রুগী এলে একটা কিটো স্টিকও পাওয়া যায় না। আর এমার্জেন্সির কথা তো বলাই বাহুল্য । ওটা নামকে বাস্তে একটা রাখলেই হলো। বিশ্বাস করুন কিচ্ছু নেই, জাস্ট কিচ্ছু নেই। কয়েকটা ব্যথার, বমির ওষুধ, অক্সিজেন, আর টিটেনাস ইনজেকশন ছাড়া কিচ্ছু নেই। একটা রুগীকে দেখতে দেখতে আরো পাঁচটা রুগী লাইনে এসে দাঁড়ায়। ইমারজেন্সি মাইনর ওটি তে একটা রুগীকে সেলাই করে ছাড়ার পর রক্ত, জল, নোংরা গজ কাপড়, তুলো, যন্ত্রপাতি পরিষ্কার, এসবের জন্য দরকারি লোকজনকে পায়ে ধরে ডেকে আনতে হয়। ওই নোংরা জল আর রক্তের পুকুরের উপর দাঁড়িয়েই একটার পর একটা রুগীর কাটা ছেঁড়া সেলাই করে যেতে হয়। চিৎকার করলেও কেউ শোনে না, কারণ আমাদের গলায় দড়ি পরানো আছে, আর সে দড়ি ধরে আছে যারা সিংহাসনে বসে আছেন।আর যারা বসে আছেন তারা কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন, কারণ এত জনসংখ্যা, দু একটা মরলেও ওদের ভোটসংখ্যা খুব একটা কমবে না। অতএব চুপ থাকো। এই হোল পরিস্থিতি। বিশ্বাস করুন, বলে বলে জিভ ছিঁড়ে গেছে, একটা কেউ মুখ থেকে রা টি কাড়ে না।
আসলে সাধারণ মানুষ হাসপাতাল মানেই সেটা ডাক্তারের সম্পত্তি মনে করে। আদতে এটা ভুল, মস্ত বড় ভ্রান্ত ধারণা। হাসপাতলে ডাক্তাররা কর্মচারী মাত্র, এটা চালায় গদিতে বসা মুখোশধারীরা। আমরা ডাক্তাররা শুধু উপর মহলের পা চেটে বুড়ো হচ্ছি। অপনাদের কি মনে হয়, আমাদের খারাপ লাগে না? রোজ রোজ চোখের সামনে একটার পর একটা রুগীকে মরে যেতে দেখে আমাদের বুকে কাঁটা ফোটে না? আমরা কাঁদি না? অনেক দিন ধরে একটা রুগীর পিছনে প্রাণ লড়িয়ে দিয়ে সে যখন আলটিমেটলি বাঁচে না, আমাদের খারাপ লাগে না? বিশ্বাস করুন, লাগে। রাতের পর রাত জেগেছি মানুষ বাঁচাতে, মারতে নয়। যখন তিন মাসের বাচ্চাকে রেখে হেপাটিক এনকেফালোপ্যাথির সাথে লড়াই করা মা অবশেষে শেষবারের মত ঘুমায়, আমাদেরও চোখ থেকে জল পড়ে স্যার। তফাৎ টা একটাই , আমাদের কাঁদার সময়টুকু নেই। কারণ তখনও হয়তো দরজার বাইরে আরো এরকম অনেক রুগী দাঁড়িয়ে আছে।দে নিড আস।

আপনি বলেছেন জাদু মন্ত্র বলে হাসপাতালের রোগ নার্সিংহোমে সেরে যায়। সত্যিই যায়। আপনি প্রশ্ন করেছেন কেন? নোসোকমিয়াল ইনফেকশন বলে একটা জিনিস হয়। যেটাকে সহজ ভাষায় হসপিটাল অ্যকোয়ার্ড ইনফেকশন বলে। অর্থাৎ হাসপাতালে থাকা কালীন যে সংক্রমকন হয়। যে অসুস্থ রুগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয় তাদের ইমিউন সিস্টেম এমনিতেই উইক থাকে, এরপর হাসপাতালের এই জঘন্য নোংরা পরিবেশে আরো কয়েকটা সংক্রমণ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। কারণ সরকারি হাসপাতাল, গায়ে গায়ে বেড, দুটো বেডের মাঝে ফাঁক নেই, ফলে রুগীর সাথে রুগীর ফাঁকও নেই। সুতরাং এক রোগ সারতে সারতে আরেক রোগ দানা বাঁধছে শরীরে। এবার নার্সিংহোমে পরিষ্কার ঝাঁ চকচকে জগৎ, ঘন্টায় ঘন্টায় লোক এসে পরিষ্কার করে যাচ্ছে, প্রত্যেকের জন্য আলাদা ঘর, আলাদা চিকিৎসার সরঞ্জাম, ফলে রোগ সারছেও দ্রুত। এতে আলাদা কোনো জাদু মন্ত্র কাজ করে না।

এবার আসি দামি ওষুধের কথায়। হাসপাতালে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ পাওয়া যায়, তার বাইরে পাওয়া যায় না। এবার মুশকিল হলো এরকম অনেক রোগ আছে যেগুলোর জন্য অন্যরকম ওষুধ দরকার হয় যেগুলো হাসপাতাল সাপ্লাই নেই। কিন্তু আমাদের উপর নির্দেশ সাপ্লাই ওষুধ দিয়েই সব রোগ সারাতে হবে!! একি কথা রে বাবা!! এতো বোলারকে দিয়ে ওপেন করানোর মত হয়ে গেলো ব্যাপারটা। ফলে রুগীর কথা ভেবে যখনই বাইরে থেকে ওষুধ নিতে বলা হচ্ছে তখনই আমরা ডাক্তার থেকে ডাকাত হয়ে উঠছি। বাঃ!! অসাধারণ।

এবার পরীক্ষা নিরীক্ষার কথায় আসি। সত্যি কথা বলতে কলকাতা শহরে এমন হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র ল্যাবরেটরি আছে যাদের রিপোর্টের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। সত্যিই যায়। শিওর হওয়ার জন্য যখন রিপিট ইনভেস্টিগেশন করতে সেখানে যেতে বলা হচ্ছে, তখনই লোকে বলছে ডাক্তাররা প্যাথলজি ল্যাবের জামাই। আর এরকম অনেক টেস্ট আছে যেগুলো সরকারি হাসপাতালে হয় ই না। ফলে বাইরে থেকে করতে হচ্ছে, এবং গালাগালি খাচ্ছে ডাক্তাররা। কারণ পিসিমা বলেছেন সরকারি হাসপাতালে সব ফ্রি!! ডাক্তাররাও ফ্রি কা গুলাম।

হাসপাতালে বাচ্চা চুরির ঘটনা লোকের অজানা নয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিছু অসৎ লোক এর সাথে যুক্ত। তাদের শাস্তির যুক্তি সমর্থন যোগ্য। কিন্তু স্যার, পুত্রসন্তান জন্মানো মায়ের কোলে কন্যা সন্তান কেঁদে ওঠে তো মানলাম, কিন্তু কন্যা সন্তান জন্মালে তাকে ডাস্টবিনে কেন পাওয়া যায় বলতে পারেন?? সরকার ফ্রি তে কন্ডোম দেয়, গর্ভনিরোধক ওষুধও ফ্রিতে পাওয়া যায়, তা সত্ত্বেও একজন মেয়ের ৭-৮ তা ছেলে পুলে কেন হয় বলুন? এই নাকি সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করছে??!! আসলে সবের মূলে শিক্ষা, এটা যতদিন না সমান ভাবে বন্টন হচ্ছে এর সমাধান নেই।

আপনি বলেছেন হাসপাতালে ডাক্তারবাবুরা রুগীদের ছুঁয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। সেই ডাক্তার নার্সিং হোমে দেবদূত হয়ে আবির্ভুত হয়।এবার বলি আমার কথা। এই ধরুন আজ থেকে দশ বছর আগের কথা, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। যে টিচার আমাদের লাইফ সাইন্স পড়াতেন ক্লাসে, তিনি বাড়িতেও চুটিয়ে টিউশন পড়াতেন। বলা বাহুল্য আমাদের ক্লাসের বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে ওনার কাছেই টিউশন পড়তে যেত। তখনকার দিনে 500 টাকা ফি ছিল স্যারের। খুব কাকতলীয় ভাবে যারা টিউশন পড়তে যেত তারাই পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতো, বাকিরা নয়। এটা কেন হত তার উত্তর আজও আমি পাইনি। শিক্ষা তো সব জায়গায় সমান, তাহলে বাড়িতে আর স্কুলে পড়ানোর মধ্যে কি ফারাক আছে আমার অজানাই থেকে গেছে। উনি যেমন প্রাইভেট টিউশন পড়ান, সেটা ওনার অধিকার, একজন ডাক্তার প্রাইভেট প্র্যাকটিসে কতো টাকা নেবেন কি না নেবেন সেটা ওনার নিজের ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে নিজের বউকে ১০০০ টাকা দিয়ে পুজোয় শাড়ী কিনে দিতে গেলে কিস্যু মনে হয় না, কিন্তু সেই বউ যখন অসুস্থ হয় তাকে হাজার টাকা ফি দিয়ে দেখাতে গেলে পকেট ফেটে যায়। এটাই হলো ট্র্যাজেডি।

প্রাইভেট নার্সিংহোম টাকায় চলে। এটা সব্বাই জানে। লুকোনোর কিছু নেই। আরে বাবা, এতই যদি টাকা দিতে অসুবিধা তাহলে সরকারি হাসপাতালে আসুন না, ওখানে তো আছেই বিনা পয়সার গোলাম রা। এই যা, একটু লাইনটা দিতে হবে, কারণ আপনার আগে আরো অনেক অনেক অনেক রুগী বুকে হাত চেপে যন্ত্রনা আটকে রেখেছে, রোদ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
স্যার,অ্যড ডের দিন ওয়ার্ডে একটা সময় পর একটা ডাক্তারকে প্রায় দু'শর বেশি রুগীকে সামলাতে হয়। নার্স ওই হাতে গোনা কয়েকজন, জি ডি এ স্টাফ বেপাত্তা। যন্ত্রপাতি হওয়ায় উড়ছে। দু'শ জন ছাত্র পড়ানো আর দু'শ রুগী সামলানোকে এক করে দেবেন না দয়া করে। বিশ্বাস করুন একটা সাধারণ সরকারি কর্মচারী গড়ে সপ্তাহে যে পরিমান কাজ করে তার থেকে অনেক অনেক অনেক বেশি কাজ করে একজন সরকারি ডাক্তার। এবং নিজের জীবন হাতে নিয়েই সেটা করে হাসি মুখে। কারণ গলায় যে স্টেথোস্কোপটা ঝুলছে সেটার ভার বয়ে নিয়ে যাওয়া আর সকাল বেলা ব্যাগ ভর্তি বাজার বয়ে নিয়ে আসা এক জিনিস নয়। গলা পর্যন্ত পাঁকে ডুবে ডাক্তাররা কাজ করছে। না বলার জো নেই, কারণ আমাদের ঠোঁট সেলাই করে মুখে হ্যাঁ বলার স্ট্যাম্প মেরে দিয়েছে উপরমহলের বড়কর্তারা। আমাদের দাবি আদায় করতে খালি পেটে 335 ঘন্টা কুঁকড়ে থাকতে হয়। পাশে বসে মায়ের চোখ দিয়ে রক্ত পড়ে আর বুক ফেটে হাড় গুঁড়ো হয়ে যায়। মুখ থেকে রক্ত উঠলে তবেই পাওয়া যায় ভিক্ষা।
আমরা মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখি।ফলে জীবনের দামটা অন্যদের থেকে একটু বেশি বুঝি। বিশ্বাস করুন শুধু এই দামি জিনিসটার জন্যেই আমরা মুখ গুঁজে পড়ে আছি। ঘন্টার পর ঘন্টা না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, হেঁটে যাচ্ছি ওয়ার্ড দিয়ে। কারণ আমরা ঘুমোলে অন্য কারুর হয়তো ঘুম আর কোনোদিন ভাঙবে না। কোথাও কোথাও কোনো কোনোদিন টানা 30 ঘন্টার বেশি ডিউটি থাকে। বলতে পারেন টানা 30 ঘন্টার বেশি না খেয়ে না ঘুমিয়ে থাকার পর কার মাথা ঠিক থাকে?? কিন্তু কি করবো! পর্যাপ্ত লোক নেই, ফলে নৌকার হাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, নইলেই নৌকাডুবি।
রোজদিন কোথাও না কোথাও কারুর নিডিল প্রিক হচ্ছে। এই তো সেদিন আমারই এক বন্ধুর এইচ আই ভি পজিটিভ ব্লাড প্রিক হলো, বেচারি পেপ খাচ্ছে এখন। বলতে পারেন ওর জীবনের দাম কে দেবে? নাকি এটাকেও অকূপেসানাল হ্যাজার্ড বলে চালিয়ে দেবেন?? আমরা রোজ নিজেদের জীবন হাতে নিয়ে কাজ করি স্যার। রোজ। সে খবর আপনারা কেউ রাখেন না। কারণ মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতার নীচে আমাদের হাতের লাল রক্ত চাপা পড়ে যায়। আর সরকার মাসের শেষে কয়েক হাজার টাকা মুখে ছুড়ে দিয়ে ভিক্ষার ঝুলি পূরণ করে। চুপ থাকি আমরা।

রেফারের কথা বললেন না!! ধরুন আপনি বাইক চালাতে গিয়ে পড়ে গেছেন, মাথায় রক্ত জমেছে। এবার যেখানে নিউরোসার্জারির ব্যবস্থা আছে সেখানে নিয়ে যেতে বলাটা আমার মনে হয় অপরাধ নয়। রুগীর অবস্থা খারাপ কারণ মাথায় রক্ত জমা ইমারজেন্সি সিচুয়েশন। কিন্তু গ্রামের হাসপাতালে এমনকি সদর হাসপাতালেও স্পেশাল ওটির বেবস্থা নেই। ওটি'ই নেই তো স্পেশাল ওটি!! সুতরাং শহরের বড় হাসপাতালই ভরসা। কিন্তু যখন শহর আসতে আসতে রুগী মারা যাচ্ছে তখনই গিয়ে মার শালাকে, ভাঙ হাসপাতাল। কেন রেফার করলি বল?আসলে গ্রামের হাসপাতালে একটি ডক্টরস রুম পর্যন্ত নেই। দরকারি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কথা তো স্বপ্নের অতীত। নেই যন্ত্রপাতি চালানোর লোক। ফলে সাড়ে পাঁচ বছর খেটে খুটে ডাক্তারি শিখে গ্রামে গিয়ে হাত পা বাঁধা অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। সুতরাং যে রুগীকে সহজেই ভালো করে দেওয়া যায় শুধু মাত্র পরিকাঠামো এবং লোকবলের অভাবে তাকে অন্যত্র পাঠাতে হচ্ছে। তার উপর লোকাল নেতাদের চোখ রাঙানি তো আছেই। ফলে ডাক্তাররা ঝুঁকি নিতেও ভয় পাচ্ছে।

যদি তাড়াতাড়ি কোনো পরিবর্তন না আসে, যদি চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ না হয়, যদি পর্যাপ্ত লোকবল না থাকে তাহলে এই পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। হবেই। যারা আজ না খেয়ে লড়ে নিজেদের দাবি আদায় করে নিলো, তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ সবার আগে নিজের বেঁচে থাকাটাই আসল।
ভালো থাকবেন।
_________________________________

প্রীতম মন্ডল। ইনটার্ন চিকিৎসক। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কলকাতা।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়