Ameen Qudir

Published:
2018-02-11 16:07:06 BdST

র‌্যাগিং আতঙ্কে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল জাবির নবীন শিক্ষার্থী




 


সংবাদদাতা

____________________

 

কাউকে চিনতে পারছে না জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্র মিজান। আতঙ্কের চোখে সবাইকে বলছে, ‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, শেষবারের মতো তোরা আমার আব্বার সাথে দেখা করতে দে।’

সম্প্রতি র‌্যাগিংএর শিকার হয়ে মিজানের এই করুণ অবস্থা।


র‌্যাগিং অামাদের সংস্কৃতি নয়। অামাদের ঐতিহ্যবাহী নবীনবরণ হয় শিল্পকলার আসর। সঙ্গীতের সমধুর আহবানে বরণ করে নেয়া হয় নবীনদের । কিন্তু নানা অপসংস্কৃতির কবলে দেশীয় ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। র্যাগিং নামক কুসংস্কৃতির কুফল কতটা ভয়ানক হতে পারে, প্রমাণ মিলল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়ে এক নবীন শিক্ষার্থীর মানসিক ভারসাম্য হারানোর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা শুনে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আত্মীয় স্বজনজনসহ তার বাবা দেখা করতে এলে তাদের কাউকেই চিনতে পারেননি তিনি।

র‌্যাগিংয়ের শিকার মিজান কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষে সদ্য ভর্তি হয়েছে।

মিজানুরের বন্ধুরা জানান, ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিভাগের ৪৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা তাদের (৪৭তম আবর্তন) সঙ্গে পরিচিত হওয়ার নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। মিজান সহজ-সরল হওয়ায় তাকে আলাদাভাবে অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়াসহ শারীরিক নির্যাতন করে সিনিয়ররা। এ ছাড়া তার বরাদ্দকৃত শহীদ সালাম বরকত হল ছেড়ে আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হলে আসতেও সিনিয়ররা চাপ প্রয়োগ করে তাকে। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আবারও বিভাগের সিনিয়ররা তাকে ধমক দেয়।

এ ঘটনার পর রাত থেকে হলে বন্ধুদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন মিজানুর। হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাকে দেখতে এলে ‘তুই আমার জীবন শেষ করেছিস, তোরা আমাকে মেরে ফেলবি’ এমন অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকেন তিনি।

এমনকি শুক্রবার দুপুরে তিনি তার বন্ধুদের বলেছেন, ‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, শেষবারের মতো তোরা আমার আব্বার সাথে দেখা করতে দে।’

পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে আসেন তার বাবা ও চাচা। সাক্ষাতে স্বজনদের চিনতে পারেননি মিজানুর, এমনকি বাবাকেও না।

ঘটনা শুনে হলের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় তাকে। ছেলেকে এ অবস্থায় দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিজানুরের বাবা। ডাক্তারের কাছে যেতে অস্বীকার করে মিজানুর বলেন, ‘মায়ের সাথে দেখা করব, তোরা আমার মায়ের কাছে নিয়ে চল।’

এমতাবস্থায় ডাক্তারের রুমের দরজার সামনে বসিয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত ডাক্তার। পরে বিশ্রামের জন্য সাভারে চাচার বাসায় নেওয়া হয় তাকে।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়