Ameen Qudir
Published:2017-05-31 21:12:04 BdST
ডাক্তারদের দাবি একটাই : নিরাপদ কর্মস্থল চাই
ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
_________________________________
আন্দোলন চলছে।
কর্মক্ষেত্রে কালো ব্যাজ ধারন করে চিকিৎসকগন দিন রাত বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।
প্রানপ্রিয় বাংলাদেশীগন,আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগে না?লজ্জা লাগে না?
বিশ্বাস করুন,আমার লজ্জা লাগে।
ভূত প্রেত শয়তান কিংবা জ্বীন পরীর ভয়ে নয়।এই আপনারা,যাদের রোগে শোকে ডাক্তাররা আপনাদের সুস্থ করে তুলতে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করে,ঠিক তারাই আপনাদের ভয়ে তটস্থ হয়ে হাসপাতালে রোগী সুস্থ করে।
এইদেশে সবথেকে মেধাবী ছেলে মেয়ে গুলো জীবন পণ পরিশ্রম করে ডাক্তার হবার পর যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে,তখন পিতামাতা বুকে কাঁপন নিয়ে জায়নামাজে বসে কখন খবর আসবে,শত শত মানুষ রূপী দু পেয়ে জানোয়ার তার আদরের সন্তানটিকে রক্তাক্ত করবে।
এই দেশে অনেক পেশার লোক আছে, যাদের কে সরকার অসাধারন প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করছে,চলাচলের গাড়ীর ব্যবস্থা করছে,চাল ডাল দুধ তেল এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু সরকার প্রদান করছে,চলাচলে গাড়ী প্রদান করছে,অসুস্থ হলে তাদের জন্য হাসপাতাল আছে।শুধু তারা নয় পিতা মাতা সন্তানদের ও চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।
আমি জানতে চাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিবর্গের কাছে।এই দেশে ডাক্তার অসুস্থ হলে কোন হাসপাতাল আছে তাকে সুস্থ করবার জন্য?ডাক্তারের সন্তানদের জন্য কোন বিশেষায়িত স্কুল,কলেজ,মেডিকেল কলেজ আছে?
কারো কাছে খবর আছে,যে সকল বড় বড় হাসপাতাল সমূহে বাংলাদেশের ডাক্তাররা দিন রাত পরিশ্রম করে আর গালি শোনে আর লভ্যংশ ঐ সকল হাসপাতাল গোনে ,সে সকল হাসপাতালের আইসি ইউ তে কোন চিকিৎসক মরনাপন্ন হয়ে রোগী হয়ে ভর্তি হলে,চিকিৎসক বলে মিনিমাম কোন ইকনোমিক ফেসিলিটি তারা পায় না।তাদের জন্য কোন ত্রান তহবিল থাকে না।কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে না।
অন্য চিকিৎসকগন তাদের সহকর্মীর করুন মৃত্যুকে ঝাপসা চোখে মঞ্চস্থ হতে দেয়।
এভাবে আর কত?
আগামী দিনের চিকিৎসকদের ব্যাপারে সচেতন হউন।আমি আমাকে চিনি।ওদের সকলকে চিনি।
আমাদের আলাদা বেতন ভাতা চাই,সুপারনিউমেরারী পদসোপান চাই,গ্রেড ওয়ান পদ চাই,রেশন চাই,পুলিশ দের মত মিশন চাই,থাকার জন্য বাংলো চাই,উপজেলাতে থাকার বাড়ী এবং চলাচলে গাড়ী চাই,আবাস স্থলে নিরাপত্তা চাই,ঝুঁকি ভাতা চাই,আমাদের জন্য হাসপাতাল চাই,আমাদের বাচ্চাদের স্কুল চাই,কলেজ চাই!
প্রতিটি রোগীর জন্য একটা বিছানা চাই।বিছানা ছাড়া একটা রোগী দেখতেও আমি বাধ্য নই।আমার ধারন ক্ষমতার বেশী রোগী আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে আমাকে অস্থির করার অধিকার রাষ্ট্র রাখে??
আমার কর্মস্থলে নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র বাধ্য।আমি নিরাপদ অনুভব না করলে রোগী সুস্থ কিভাবে করব?নিরাপদ কর্মস্থল চাই।
আমার সব চাওয়া যদি গুরুত্বহীন হয়,ভোট বানিজ্যের গুটি হিসেবে রাষ্ট্র আমাকে আর কতদিন ব্যবহার করবে??
আমরা জ্বলে উঠবই।
বিএমএ র প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে প্রতিটি বিষয় উঠে আসবে বলে অংশগ্রহনকারীদের প্রতি অনুরোধ।
নতুবা এই রোজার ঈদ ই হবে ডাক্তারদের লাগাতর কর্মবিরতির অনন্য উদাহরন।
আমরাও মানুষ।আমাদের সেহরী আছে।ইফতার আছে।রোজা আছে।ঈদ আছে।
আমার ত্যাগ যখন আমার ভাইকে রক্তাক্ত করা থেকে এই সমাজকে বিরত করতে পারে না।
আমি তবে কেন কঠোর হবো না??
আমাদের কর্মস্থল নিরাপদ করতে হবে।কিভাবে হবে,কি ব্যবস্থা নিতে হবে,জানি না।
শুধু জানি কর্মস্থল নিরাপদ না হলে,ডাক্তারদের রক্ত ঝরার এই বর্বর কালচার রোধ না হলে কর্মক্ষেত্রে আর কোন ডাক্তার থাকবে না।
দাবি একটাই নিরাপদ কর্মস্থল চাই ।
_________________________________
ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
বরিশাল
আপনার মতামত দিন: