Ameen Qudir

Published:
2017-05-15 20:36:05 BdST

শেবাচিমহার অায়া-ডাকাত সিন্ডিকেট: ১৫ লাখ টাকার ওষুধসহ নার্স গ্রেফতার



ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
__________________________

আর কত?
৫০০ বেডের হাসপাতালে আজ ও ভর্তিকৃত রুগীর সংখ্যা ১৬৮০ জন।সারা দেশের নারীদের প্রতি অবহেলার চিত্র প্রতীয়মান সরকারী হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড এ।
শেবাচিমহা র মেডিসিন বিভাগকে চারটি ভাগে ভাগ করে রুগী চিকিৎসা দেয়া হলেও চার ইউনিট এর মহিলা রুগীরাই থাকেন এক ওয়ার্ডে এ।
রুগীর আধিক্যের কারনে সেখানে নাক দেয়ার জায়গা নেই।ফ্লোরে হাঁটু গেরে বসে ডাক্তার গন মহিলা রুগী দেখেন।আর এই রুগীদের দায়িত্বে আছে স্টাফ নার্স বিলকিস বেগম।
রুগী আধিক্যের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি তার একান্ত সহযোগী আয়া শেফালী এবং শেফালীর ছেলে মামুনকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল সিন্ডিকেট।
কাহিনীটা পত্র পত্রিকা এবং টিভি নিউজের বদৌলতে সকলের জানা।

আয়া শেফালীর ছেলে মাদকাসক্ত মামুন উত্তেজিত হয়ে শেফালীর হাসপাতালের মহিলা মেডিসন ওয়ার্ড থেকে লক্ষ টাকার চুরি করা ঔষধ পুকুরে ফেলে দিলে এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়।

পরিচালক স্যারের গঠন করা তদন্ত কমিটি নার্স বিলকিস বেগমের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে পনের লক্ষ টাকার ঔষধ।

প্রতিদিনকার ঔষধের চাহিদাপত্র নিয়ে বিলকিস বেগম অফিস টাইমের পরে স্টোরে আসত।ডাক্তার ফাইলে দুই গ্রাম ঔষধ দিলেও রোগী পেত এক গ্রাম।তিন ডোজ লিখলেও রুগী পেত দুই ডোজ।সরকারী সরবরাহ থাকা স্বত্বেও রুগীকে দিয়ে ঔষধ কেনানো হতো।

ডাক্তারদের নির্দেশ না মানা,দায়িত্বে অবহেলাতে স্টুডেন্ট নার্সকেও কিছু বললে নার্স ব্রাদারের সম্মিলিত আন্দোলন,অনলাইনে কিছু অতি ফাজিল দের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্যের জের ধরে বার বার জিজ্ঞাসা করেও যখন বিলকিস ঔদ্ধত আচরন করত,ডাক্তাররা ওকে ঘাটাত না।

ওয়ার্ড মাষ্টাররা শেফালী আর মামুনের ভয়ে ঐ ওয়ার্ডে কম ঢুকে।এই সুযোগে অপরাধের অভয়ারন্য গড়ে ওরা তিন জন।

নার্সিং সুপার ভাইজার এবং মেট্রনকে যখন আমি জিজ্ঞাসাবাদ করলাম জানলাম আরো তথ্য।
বার বার চাহিদাপত্র দেখতে চাইলেও বিলকিস দেখায়নি।নানা অযুহতে এড়িয়ে যেত।অব্যবহৃত ওয়াশরুমে গরীব রুগীকে ঠকিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঔষধ জমা হয়েছে যা চলছে হয়ত অনেক দিন যাবৎ।
নেপথ্যে আছে হয়ত আরো অনেকে।স্টোরে আজ হাওয়া ভবন।একাধিক স্টাফ নার্সের অভিযোগে পর দেখা গেল দেড় মাস আগে সাপ্লাই শেষ হয়েছে এমন সব ঔষধ ও নার্সদের গামলায় দিয়েছে ষ্টোরের কর্মচারীরা।
হাসপাতালে ডাক্তাররা ধারন ক্ষমতার তিন/চার গুন রুগী দেখবে না চোর ধরবে???
তাই দক্ষ চিকিৎসক প্রশাসক পদ সৃষ্টি এবং নিয়োগ এখন সময়ের দাবী।
সবথেকে এলার্মিং দুটি বিষয়।
স্টাফ নার্স বিলকিস এবং আয়া শেফালী এই অপরাধে জামিন পেলে এবং বরখাস্ত না হলে এই অপরাধ আরো বাড়বে।অপরাধীদের সাহস আরো বেড়ে যাবে।
নার্স আয়াদের ডিউটি মনিটরিং এবং চাকুরীতে ভূমিকা রাখতে পারে এমন মনিটর চিকিৎসক না নিয়োগ দিলে ভবিষ্যতে ওয়ার্ড এ রুগী চিকিৎসা দান চরম ব্যহত হবে।

আরো চমক !
শেফালীর ছেলে মামুন ওরফে গাল কাটা মামুন একজন মাদকাসক্ত এবং সন্ত্রাসী। ইতিমধ্যে বাতিলকৃত চতুর্থ শ্রেনী নিয়োগ প্রাপ্ত।ঐ নিয়োগটি পূনর্বহাল প্রক্রিয়া চলছে।মামুনের নিয়োগ রুগী,চিকিৎসক এবং কর্মচারীদের জন্য চরম ক্ষতির কারন হবে।তাই ওর নিয়োগ বাতিলের আবেদন সকলের।

পরিচালক মহোদয় ইতিমধ্যে ডিজি মহোদয়কে চিঠি দিয়েছেন।আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে এই অপরাধের দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালনে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।।

----------------------------------------------

 

 

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । সুলেখক। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়