Ameen Qudir

Published:
2017-03-07 17:02:42 BdST

একটি ধর্মঘট ভাঙার সেই বহুল পঠিত কাহিনি




ডা. তারিক রেজা আলী
__________________________________

বহুবছর আগে পড়া এক গল্প বলবো আজ। লেখকের নাম মনে নেই, গল্পের শিরোনাম মনে নেই। গল্পের নায়কের নামও স্মরণে আসে না। তাতে কি? মনে করুন নায়কের নাম তারিক রেজা।

তারিক সাহেব তুখোড় ছাত্র নেতা ছিলেন। সমাজ পাল্টানোর দৃপ্ত শপথ নিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে আর উত্তরসূরিদের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে আর কোন পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিলেন না। কাজ খুঁজে নিলেন এক পাট কলে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী আদায়ে সর্বক্ষণ সোচ্চার ছিলেন তিনি, মিছিলে-মিটিং এ থাকতেন সামনের কাতারে। ধীরে ধীরে দায়িত্ব নিলেন শ্রমিক সংগঠনের সর্বোচ্চ পদের, অর্থাৎ সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হলেন আর পরিণত হলেন পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সবার প্রিয় পাত্র হিসাবে, সবার কাছে তিনি ছিলেন এক নিরাপদ আশ্রয় স্থল।

 

একবার কয়েকজন শ্রমিক কে অন্যায় ভাবে চাকুরীচ্যুত করা হলো, কয়েকজনের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা হলো। সব শ্রমিক কে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললেন তারিক সাহেব। আন্দোলন দিনে দিন ব্যাপকতা পেলো। চার ঘন্টা, ছয় ঘন্টা কর্মবিরতি পালনের পরেও দাবী আদায় না হওয়ায় এক পর্যায়ে লাগাতার ধর্মঘট আহবান করা হলো আর কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দেওয়া হলো। ৭২ ঘন্টার পরের দিন সর্বস্তরের শ্রমিকদের সাথে নিয়ে সাধারন সভা আয়োজনের ব্যবস্থা করলেন তারিক।

শ্রমিকরা সব দিন আনি দিন খাই টাইপের। একদিন কাজ না করলে বাড়ীতে উনুন জ্বলে না। সেই শ্রমিকেরা পেটে পাথর বেঁধে মিছিলে নিয়মিত যোগ দিতেন। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতেন। দিন শেষে ক্লান্ত সবাই নোংরা বিছানায় শুয়ে সুদিনের স্বপ্ন দেখতেন।

৭২ ঘন্টা শেষ হয়ে গেল। দাবী মানা হলো না। পরদিন কারখানার মাঠে বিশাল শ্রমিক সমাবেশ। সন্ধ্যায় মন্চ নির্মাণের তদারকি করলেন তারিক। ঘরে ফিরতেই দেখেন কারখানার ম্যানেজার তার জন্য অপেক্ষা করছে। কোন ভনিতা না করে সরাসরি কাজের কথায় গেল ম্যানেজার। এ আন্দোলন ভাঙতে হবে। আগামীকালের সভায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষনা দিতে হবে। রাগে, উত্তেজনায় ফেটে পড়লেন তারিক সাহেব। কী মনে করে তাকে এই মালিকের পা চাটা ম্যানেজার? নোংরা, হলুদ দাঁত বের করে হাসলেন ম্যানেজার।

বাকী সব পাতি নেতাদের পন্চাশ হাজার করে দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে। তারিক সাহেব বড় নেতা, তাই তার জন্য নগদ এক লাখ। প্রয়োজনে আরো দেওয়া হবে। কিন্তু আগামীকাল ঘধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষনা দিতেই হবে।

সারা রাত ছটফট করলেন তারিক সাহেব। ঘুম এলো না। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতে তাই একটু দেরী হলো। মাঠে গিয়ে দেখেন সভা শুরু হয়ে গেছে। অবাক বিস্ময়ে শুনতে পেলেন তার নেতা দের পাল্টে যাওয়া বক্তৃতা। সবাই বলছেন দুধের অভাবে শিশুদের কষ্টের কথা। কর্তৃপক্ষ যেহেতু নমনীয় হয়েছে, আগামীকাল থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা যেতে পারে।

সবশেষে মঞ্চে উঠবেন তারিক সাহেব। ভিড়ের মধ্যে দেখতে পেলেন ম্যানেজার কে, হলুদ দাঁত বের করে হাসছে। মাইক্রোফোনের দিকে যেতে যেতে বহুদিনের অভ্যাস মত পকেট থেকে ছোট আয়না বের করে নিজেকে দেখে নিলেন এক ঝলক।

অন্য বক্তাদের থেকে কোন রকম আলাদা করতে পারলেন না তিনি নিজেকে, একই কথা বলার জন্য মাইক্রোফোনের স্ট্যান্ড নিজের দিকে টেনে নিলেন তারিক সাহেব!

_______________________________

লেখক ডা. তারিক রেজা আলী Assistant Professor, Retina. at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়