Ameen Qudir

Published:
2018-08-19 20:20:01 BdST

ডেংগি ও প্লেইটলেট : কিছু অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা ও আতঙ্ক প্রসঙ্গে


 


ডা.গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
___________________________

 

ডেংগি রোগে প্লেইটলেট কাউন্ট এবং এর ট্রান্সফিউশন নিয়ে রোগীরা আতংক ও নানারকম বিভ্রান্তিতে ভুগতে থাকে।

সমস্যা হচ্ছে শুধু রোগী না বড় বড় ডাক্তাররাও এই প্লেইটলেট কমে যাওয়া নিয়ে বিরাট আতংকে ভুগতে থাকেন। রোগীদেরও আতংকিত করেন। প্লেইটলেট কি, তার কাজ কি, কিভাবে কাজ করে সেটা নিয়ে ঠিক মত মাথা খাটালে এই আতংকটা থাকার কথা ছিলনা।

কেউ কেউ প্রোফাইলেকটিক(আগাম সতর্কতা মূলক) প্লেইটলেট দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। এজন্য তারা কিছু নিজস্ব যুক্তিও তৈরি করেন।

যেমন :
১. রুগী খারাপ হয়ে গেল তারপর প্লেইটলেট দিব?

২. যখন প্রয়োজন পড়বে তখন তো রেডি করতে করতে দেরি হয়ে যাবে। রোগী যদি খারাপ হয়ে যায় ততক্ষণে!

৩. বাড়ায়ে রাখলাম, ক্ষতি তো নাই।

এগুলো মূলত মন গড়া, আতংকপ্রসূত এবং স্যরি টু সে, বিষয়টি অনেক খানি অজ্ঞতা প্রসূত।

ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই এই মাত্র বংগবন্ধুর আউটডোর চেম্বারে একজন এপ্লাস্টিক এনিমিয়ার রোগীকে দেখলাম। তার প্লেইটলেট ৫ হাজার এবং তিন দিন ধরে তার রক্ত ক্ষরন হচ্ছে থেকে থেকে দাতের মাড়ি, প্রস্রাবের পথ দিয়ে।

এটা বলার অর্থ হলে প্লেইটলেট কমে গেলেই রোগী ঠাস করে মরে যাবে এমন ভাবার কারণ নেই। সময় পাবেন।

৩ নম্বর পয়েন্টটা ছিল বাড়ায়ে রাখলাম ক্ষতি তো নাই।
উত্তর, অবশ্যই ক্ষতি আছে। আপনি অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিলেন। একেতো ডেংগি শক সিন্ড্রোমের আশংকা, তার উপর এই ট্রান্সফিউশন দিয়ে আপনি রোগীর কম্পলিমেন্ট সিস্টেমকে আরো উত্তেজিত করে তুললেন।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন খুব প্রয়োজন ছাড়া এই জিনিস দেয়া মূলত বাড়তি কিছু ঝুঁকি নেয়া।

কথা আরো আছে, আপনি এই এক ইউনিট প্লেইটলেইট দিয়ে কি এমন উদ্ধার করবেন?
ভরা পেটের মানুষকে এক বাটি মুড়ি দিলে যেমন কোন কাজে লাগেনা সেরকম হবে বিষয়টা। প্লেইটলেট উৎপাদন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা প্রতি নিয়ত তৈরি হচ্ছে এবং ভাংছে। আপনার এই আগাম পাচ দশ হাজার প্লেইটলেট যোগ করা আর না করা সমান কথা।
ইনফেকশন হতে পারে এই ভেবে আগাম এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেয়াটা যেই মাপের অপচিকিৎসা এটাও সেই মাপের অপচিকিৎসা।

তবে প্লেইটলেট কেন দেই? ভরা পেটে একবাটি মুড়ির মূল্য না থাকলেও সত্যিকারের ক্ষুধার্ত লোকের কাছে এর মূল্য আছে। সত্যিকারের ক্ষুধার্ত রোগিটি কে তা বোঝাই ভাল ডাক্তারের কাজ।

কখন দেবেন?
প্লেইটলেট তখনই দেবেন যখন রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা দেবে শরীরে। র‍্যাশ হবে, রক্তক্ষরণ হবে কেবল তখনই দেবেন প্লেইটলেট। এইটুকু রক্তক্ষরণে কিসসু হবেনা। এগুলা মাইনর ক্যাপিলারি ব্লিডিং। তিন চার দিনেও কিছু হবেনা।

ডেংগিতে তাহলে মানুষ মারা যায় কেন?

ডিয়ার friends, ডেংগিতে প্লেইটলেট কমে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী মারা যায়না।

রোগী মারা যায় ডেংগি শক সিন্ড্রোমে। সেটা ভিন্ন বিষয়। এর ম্যানেজমেন্ট ভিন্ন। বিস্তারিত কথা আছে।
সব বলতে গেলে সেমিনার হয়ে যাবে।

এটা ঠেকাতে রোগীকে ফ্লুইড বা তরল দিতে হবে প্রচুর। মুখে খাওয়ান, শিরাতে দিন। ফ্লুইড, ফ্লুইড এন্ড ফ্লুইড। ঘন ঘন প্লেইটলেট না দেখে ব্লাড প্রেসার কমছে কিনা দেখুন, ডিহাইড্রেশন আছে কিনা দেখুন, রক্তের পিসিভি দেখুন।

হতাশার কথা- এমনকি বড় বড় ডাক্তাররাও এসব গনায় না ধরে ত্রিশ হাজার প্লেইটলেট দেখে ভয়ে আতংকে ছয় ঘন্টা পর পর প্লেইটলেট চেক করে রোগীকে আরো আতংকগ্রস্ত করেন, নিজের চোখখে দেখেছি, প্রেসারের খোজও নেননা।

ভাবটা এমন যেন প্লেইটলেট নিরবে নিভৃতে কমে গিয়ে রোগীর হঠাৎ করে হার্ট বন্ধ হয়ে যাবে।

মোদ্দা কথা: ডেংগিতে প্লেইটলেট এর পেছনে অহেতুক সময় নষ্ট না করে রোগীর ফ্লুইড কারেকশন করুন, প্রেসার দেখুন, প্যারাসিটামল খাওয়ান। অযথা এন্টিবায়োটিক আর প্লেইটলেট দেবেননা।

প্লেইটলেট কাউন্ট কমে গেলে যদি রোগী মারা যেত তাহলে ITP এর রোগীরা সব মরে ভূত হয়ে যেত।
______________________________

ডা.গুলজার হোসেন উজ্জ্বল । সঙ্গীতশিল্পী । কথাশিল্পী। লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়