Ameen Qudir

Published:
2017-10-05 21:29:48 BdST

মাশরাফি সারাজীবনই এই পরিবারের ক্যাপ্টেন




 


ডা. রাজীব হোসাইন সরকার

__________________________________

খেলা চলছে। মাঠের মাঝখানে একটা চেয়ার পাতা হয়েছে। স্ট্রাইকার এন্ডের পাশেই। চেয়ারে বসে আছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
.
মাশরাফি এক পায়ের উপর আরেকটা পা তুলে গম্ভীর হয়ে খেলা দেখছেন। মাঝেমাঝে আঙ্গুল তুলে রাজকীয় ভঙ্গিমায় বলছেন, মুশি, একটু কম চিল্লাবা। বেশি বেশি ক্যাচ ধরবা।
মুশফিক হাসছে। কিন্তু কথা শুনছে না। আগের থেকেও বেশি চিল্লাচ্ছে। বাউন্ডারির দিকে গড়ন্ত বলের দিকে তাকিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে বলছে, এক..এক..এক...এক
তাসকিন বল করার পর মন খারাপ করে আছে। তৃতীয় বলে সে উইকেট পেতে পারত। পায়নি। সৌম্য ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছে। চতুর্থ বল না করেই চেয়ারে বসা মাশরাফির কাছে আসল। মাশরাফি ভরাট গলায় বলল,
-কোন ফিল্ডার তোর বোলিং এর সময় ক্যাচ মিস করলে মন খারাপ করবিনা। বলটা শুধু লাইনে রাখবি। তাইলে দেখবি দলটাও লাইনে আছে। পার্সোনাল উইকেটের চাইতে দলীয় পারফর্মমেন্সটা বড় কথা। ঠিক বলছি?
-হ, ম্যাশ ভাই।
-যা বল কর। জোরে জোরে বল করবি। তোর বলের স্পীড দেখার মাঝেও শান্তি আছে।
তাসকিন চলে গেল। বল করল। বাউন্ডারিতে আরেকবার ক্যাচ ফেলল সৌম্য সরকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরেকটা অমূল্য উইকেট হারানোর যন্ত্রনায় তাসকিনের মন খারাপ হলনা। মাশরাফি ভাই মন খারাপ করতে নিষেধ করেছে। লাইনে বল রাখতে বলেছে। তাসকিন ঝড়ের মত ছুটে গেল বোলিং লাইনে। হাত থেকে বেরিয়ে গেল এটমিক গোলা। বজ্রের মত গতিতে গোলা ছুটছে স্ট্রাইকে। স্ট্রাইকে বিভ্রান্ত ব্যাটসম্যান চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। বল দেখা যাচ্ছেনা। পেছনে স্টাম্প ভাঙ্গার শব্দ হল।
মাঠের মাঝখানে এখনো চেয়ারে পায়ের পা তুলে বসে আছে মাশরাফি। পরনে সাদাকালো পাঞ্জাবী, পায়ে চপ্পল। মাশরাফির বিখ্যাত ট্রেডমার্ক ড্রেস-আপ। জার্সি তুলে রেখেছেন দুই বছর আগে। সবধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। এই মুহুর্তে তার ছেলেমেয়ের সাথে বাসায় বসে টিভিতে খেলা দেখার কথা। বাসায় বসতে পারেননি। কুখ্যাত আবাল ফেসবুকার রাজীব হোসাইন সরকার তাকে বাসায় বসে থাকতে দিচ্ছেনা। অবসরের পর প্রত্যেকটা ম্যাচে তাকে মাঠে আসতে বাধ্য করেছে। মাঠের মাঝখানে চেয়ার পেতে বসিয়ে রাখছে। রাজীব ইচ্ছা করলেই তাকে ভিআইপি গ্যালারীতে বসিয়ে খেলা দেখাতে পারত। অথচ দেখাচ্ছেনা। ছেলেটার মতলব কি? মাথা খারাপ নাকি!

 

Image result for mashrafe

 


...আমি ক্রিকেট কম বুঝি। দড়ির ওপারে উড়ে গিয়ে পড়লে ছক্কা আর গড়াতে গড়াতে পার হলে চার হয় এতটুকু বুঝলেই আমার চলে যায়। ক্রিকেট ভালো লাগত। মাশরাফি নামের লোকটা আসার পর থেকে মাথায় গণ্ডগোল হয়েছে। শর্ট সার্কিট হয়ে কিছু নিউরণ পুড়ে গেছে। আমার উচিৎ ছিল 'বিডি-ক্রিকেট টিম' এর 'ঢালাও' সমর্থক হওয়া। অথচ এই সহজ বিষয়টা ঠিকঠাক পারিনি। আমি ভুল করে হয়ে গেছি 'মাশরাফি' সমর্থক।
এই কুখ্যাত আবাল ফেসবুকার চায়- মাশরাফি কোনদিন ক্রিকেটকে বিদায় না দিক। ফর্ম থাকলেও খেলুক, না থাকলেও খেলুক। বিদায় দিলেও যেন সে এই দলটার ক্যাপ্টেন থেকে যায়। বৃদ্ধ হলেও সে ক্যাপ্টেন থাকবে। দাড়াতে না পারলেও সে ক্যাপ্টেন থাকবে। মাঠের মধ্যে চেয়ারে বসে সে ক্যাপ্টেন্সী করবে। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা লাগিয়ে যেদিন কাছের জিনিসও ঠিকঠাক দেখতে পারবেনা সেদিনও সে ক্যাপ্টেন্সী করবে। যেদিন সে চশমা দিয়েও বল দেখতে পারবে না, শুধু বলের ড্রপ খাওয়া শব্দ শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারবে...ঐটাই সম্ভবত বলের শব্দ...সেদিনও সে ক্যাপ্টেন থাকবে। নিজের পায়ের লিগামেন্ট বিসর্জন দিয়ে যে লোকটা একটা দলকে নিজের পরিবারের মত দাড় করিয়ে ফেলেছে, দাড় করিয়ে রেখেছে, সে সারাজীবনই এই পরিবারের ক্যাপ্টেন। হয়তো এই 'দল'টা বিসিবির কিন্তু 'পরিবার'টা মাশরাফির!
কিছুদিন আগে মাশরাফি স্বাক্ষাতকার দিয়েছিল। হাসিমুখে বলেছিল, I am very close to my finish!
প্রিয় মাশরাফি, You aren't very close to your finish...You are getting very close to YOUR 'Family'...
_____________________________

 

 

ডা. রাজীব হোসাইন সরকার
কথাশিল্পী

আপনার মতামত দিন:


খেলা এর জনপ্রিয়