DR. RAZ MAHAJAN

Published:
2024-05-21 10:11:48 BdST

তাহলে এ সব অসুখের চিকিৎসা কি নেইই কিছু ?


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

 


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

__________________________

ইদানীং কার গবেষণা বলছে যে আপনি কি খাচ্ছেন সেটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখনকার মেটাবলিজম সম্পর্কিত অসুখ গুলি, যেমন ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, স্থূলতা, হাই ব্লাড প্রেসার বা হাইপারটেনশন, টাইপ টু ডায়বেটিস, ফ্যাটি লিভার, ডিসলিপিডিমিয়া, হার্টের অসুখ, সেরিব্রো ভাসকুলার অসুখ, এই শেষ দুটির পরিণতি হলো অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন, অথবা সেরিব্রো ভাসকুলার জটিলতা বা হয় সেরিব্রাল স্ট্রোক , যা আবার দুরকম, ১.সেরিব্রাল হেমারেজ, ২. সেরিব্রাল ইনফার্কসন।
এর সঙ্গে যোগ করুন, হাই ইউরিক অ্যাসিড লেভেল, রক্তে, বিভিন্ন রকম ক্যানসার, মূলতঃ কোলন ক্যানসার এবং প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার এবং শেষ পর্যন্ত অথবা শেষে আলঝাইমার্স ডিমেনশিয়া বা যাকে ইদানীং টাইপ থ্রি ডায়বেটিস ও বলা হচ্ছে। এই অসুখগুলি র প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো মাইটোকন্ড্রিয়াল ম্যালফাংশন এবং রক্তে হাই ইনসুলিন লেভেল।

এইগুলি বিভিন্ন নামের অসুখ হলেও আদতে এইগুলো উপসর্গ বা সিম্পটম মাত্র, এই গুলির চিকিৎসা মানে এই উপসর্গ গুলির চিকিৎসা, কিন্তু মূল অসুখের চিকিৎসার আজো তেমন কার্যকর ওষুধ বের ই হয় নি।

অনেকটা নিউমোনিয়া হলে জ্বর হয় বটে কিন্তু জ্বরের চিকিৎসা করলে জ্বর কমবে বটে কিন্তু সারবে না নিউমোনিয়া। এটি শুধুই একটি উদাহরণ মাত্র।

তাহলে চিকিৎসা কি নেইই কিছু? আজ্ঞে আছে তবে অধিকাংশ ই ওষুধ দিয়ে নয়, খাদ্যাভ্যাস ঠিক করে এবং প্রতিদিন অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট খোলা আকাশের নীচে ব্যায়াম বা পরিশ্রম করে।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ড্যামেজ কে অনেকদূর অবধি আটকানো সম্ভব অটোফেজির সাহায্যে, যে অটোফেজি দ্রুত হবে আউটডোর একসারসাইজ বা ব্যায়াম করলে।
আমাদের শরীর এখনকার কৃত্রিম আলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারেনি এখনো কারণ অভিযোজন একটি অতি ধীর প্রক্রিয়া। আমাদের শরীরের বিপাকীয় কাজ সূর্যের আলোয় যেমনটি সুচারুভাবে হয়, রাতের কৃত্রিম আলোয় কিন্তু তেমন ভাবে হয়না। তাই ইদানীং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং গবেষণারত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন আমাদের খাদ্যগ্রহণ চব্বিশ ঘন্টায় দুবারের বেশি না করতে এবং দিনের আলোতেই খাওয়ার পাট টি সেরে ফেলতে।

প্রসঙ্গত, আমাদের জৈন ঋষিরা এই সত্য টি অনেক পূর্বেই আবিষ্কার করেছিলেন এবং জৈনরা সন্ধ্যার পরে আর খাদ্যগ্রহণ করেন না। হয়তো বা তাঁরা এর পিছনের বৈজ্ঞানিক কারণ টি জানতেন বা জানতেন না, এই বিতর্কে আমি যাবো না, কারণ তাতে লাভের লাভ কিছুই হবে না।

এবারে আসুন খাদ্যে, যা থেকেই এই শরীর টি পুষ্টিলাভ করে। যথাসম্ভব কম করুন কার্বোহাইড্রেট, বাড়ান স্বাভাবিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য। হ্যাঁ এর সঙ্গে দরকার অবশ্যই বেশ অনেকখানি ফাইবারের যা আমাদের অন্ত্রে থাকা, অতি উপকারী ও অতি প্রয়োজনীয় প্রায় তিন কিলো ওজনের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীর যাদের ভালো নাম মাইক্রোবিয়োম। এরা আবার এই ফাইবার কে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরী করে যা রক্তে বাহিত হয়ে ব্রেন বা মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং ব্রেন কে কিটোন বডিজ তো তৈরী করতে সাহায্য করে তো বটেই, এমন অনেক রাসায়নিক বা কেমিক্যাল তৈরী তে সাহায্য করে যা আবার অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশন বা বিষাদ কমাতে সাহায্য করে এমনকি ডিমেনশিয়া ও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। দেখা গেছে হবু মায়েদের মস্তিষ্কে এই সব শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড এমনকি ADHD এবং Schizophrenia, Downs Syndrome পর্যন্ত হওয়া আটকাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও অবশ্য আমাদের খাদ্যে Omega 3 এবং Omega 6 ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত টি ১:১ হলেই আরো ভালো।
এটি বরং প্রকারান্তরে আলোচনা করা যাবে।
আসুন খাদ্যে। সারা দিনে দুবার খাওয়াই উত্তম, ছ ঘন্টার অনুপাতে এবং উভয়ই দিনের বেলায়। ধরুন সকাল ৯ টা এবং বিকেল ৩ টেয়। বাকি সময় টুকু জলপান নিশ্চয় করা যাবে দুধ বা চিনি বিহীন কফি বা চা পানেও আপত্তি নেই কোন।
ধূমপান, তামাক জাত পদার্থ গ্রহণ এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলাটিই কাম্য।

এইবারে আসি খাদ্যগ্রহণে। এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এবং চিকিৎসকেরা দেখেছেন যে যদি আমরা খাদ্যগ্রহণের স্বাভাবিক ক্রম পালটে এইভাবে খাই তাহলেই আরো ভালো।
১.প্রথমেই খেয়ে নেওয়া উচিৎ শাক সবজী জাতীয় খাদ্য, তা আপনি যে যে শাক সবজি ই খান না কেন।
২. এবারে খান প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য।
৩. একেবারে শেষে স্টার্চ বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য ই খাওয়া উচিৎ। যেমন ভাত বা রুটি, এটিও যতো কম খাওয়া যায় ততোই ভালো।
দেখা গেছে এই ক্রমানুসারে খাদ্যগ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজ এর স্পাইক টি সবচেয়ে কম হবে, কম হবে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা টিও, যা অতি অবশ্যই সর্বদা কাম্য। রক্তে অধিক ইনসুলিন দীর্ঘকাল থাকা মানেই অসুখ দের প্রায় নেমন্তন্ন করে ডেকে আনা।

এই কারণেই আমি বাইরে থেকে ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে রক্তে ইনসুলিন এর মাত্রাটি বা Glimepiride ব্যবহার করে রক্তে ইনসুলিন এর মাত্রাটি বাড়ানোর বিরোধিতা করেছি এবং এখনো করছি, ভবিষ্যৎ এ নতুনতর কিছু আবিষ্কার এবং প্রতিষ্ঠা না পাওয়া পর্যন্ত ই করবো।।

সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
এই অভ্যাস প্রথম টা একটু কঠিন বলে মনে হলেও আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি অচিরেই অভ্যাস হয়ে যাবে।

শরীরের কাছে আমাদের চাহিদা অনেক, তাই শরীরের প্রতি যত্ন ও তো নিতেই হবে তাই নয়কি?

এখুনি অনেক উচ্চ শিক্ষিত চিকিৎসক রা বিরোধিতা করতে নামবেন,কিন্তু তাঁরাও অনেক সুখের ঘুম বাদ দিয়ে, রাতের পর রাত জেগে, দিনেরাতে প্রায় ১৬ ঘন্টা অবধি পড়াশোনা করেই কিন্তু উচ্চশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে পেরেছেন, এই টিও খেয়াল রাখবেন কিন্তু।।

সবশেষে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যোগ করি, তা হলো ঘুম বা নিদ্রা। অন্তত ২৪ ঘন্টায় ৭-৮ ঘন্টা। প্রতিদিন এবং নিয়মিত। এই সময়েই ক্ষরণ হয় অতি প্রয়োজনীয় গ্রোথ হরমোন যা শরীরের নানা ক্ষয়ক্ষতি মিটিয়ে দিতে পারে চমৎকার ভাবে৷ আবারো বলি যেহেতু আমরা অভিযোজনের দাস, এই নিদ্রা টি রাতে হওয়াটিই কাম্য।
এ ভিন্ন ভালো নিদ্রা, স্ট্রেস বা অ্যাংজাইটি নিরোধক ও বটে।।
নমস্কার।।

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়