Ameen Qudir
Published:2018-10-11 23:27:47 BdST
খাদ্যনালীর ক্যান্সার: ভয়ঙ্কর এক নি:শব্দ আততায়ী
ডাঃ নাহিদ ফারজানা
__________________________________
এক ভয়ংকর,নীরব ঘাতকের নাম ।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগ যখন ধরা পড়ে, তখন নদীর পানি বহুূদূর গড়িয়ে গেছে।
লক্ষণ: প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণগুলো প্রকট হলে তো ভালই হত। দুর্ভাগ্যবশতঃ তা হয়না।
প্রাথমিক অবস্থার লক্ষণ: ১. খাবার গিলতে একটু অস্বস্তিবোধ হওয়া, বিশেষ করে সলিড ফুড।
২. Non specific dyspepsia অর্থাৎ কোন কারণ ছাড়াই পেটে অস্বস্তি।
অ্যাডভান্স্ড অবস্থার লক্ষণঃ ৯০-৯৫% রোগির এই ভয়াল রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হতে থাকে যখন রোগ অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে, রোগির জন্য বিশেষ কিছু করার থাকে না।
১. খাবার গিলতে কষ্ট
২. খাবার গিলতে গেলে ব্যথা হওয়া,
৩.খাদ্যনালি বা ইসোফেগাস (oesophagus)থেকে খাবার মুখে চলে অাসা,বিশেষত: শোয়া অবস্হায়।
৪.বমি
৫. ওজন দ্রুত এবং অস্বাভাবিক কমে যাওয়া
ক: রুগি খাবার গিলতে কষ্ট বোধ করে
খ: খাবার গিলতে ভারি কষ্ট,ফলে ভয় থেকেও রুগি খেতে চায় না
গ. তীব্র অরুচির জন্য কিছুই খেতে ইচ্ছা না করা
ঘ. যত অল্পই খাক,বমি হয়ে যাওয়া
৬:রক্তশূন্যতা, ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিশূন্যতা, প্রচন্ড দুর্বলতা, অবসাদ
৭. প্রায়শঃই শ্বাসনালির সংক্রমণ হওয়া,ফলে কাশি,জ্বর,বুকে ব্যথা
৮. গলার লিম্ফনোডগুলি(গ্ল্যান্ডগুলি)ফুলে যাওয়া
৯.গলার স্বর খসখসে হতে থাকা (husky voice)
১০. কখনো চোখের উপরের পাতা কিছুটা নিচের দিকে চলে অাসা, (partial ptosis), চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া(enopthalmos) , চোখের মনির ছিদ্র সরু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
১১. রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
ক. কাশি,কাশির সাথে রক্ত যাওয়া,বুকে ব্যথা,শ্বাসকষ্ট
খ. পেটে পানি চলে অাসা
গ.জন্ডিস
ঘ.হাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া
ভয়ংকর রোগটির কারণ:
১. সিগারেট,বিড়ি,তামাক
২.মদ্যপান
৩. পাকস্থলির খাবার প্রায়ই খাদ্যনালিতে চলে অাসা (স্বাভাবিক হল, খাদ্যনালি থেকে খাবার পাকস্থলিতে যাবে,পাকস্থলি থেকে খাদ্যনালিতে নয়)
৪.গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GORD)
৫.ব্যারেটস ইসোফেগাস (Barrett's oesophagus)
(৪ ও ৫ এই দুইটি অসুখেই প্রায় সময় পাকস্থলির খাবার খাদ্যনালিতে চলে অাসে)
৬. অ্যাকালাসিয়া কার্ডিয়া (Achalasia cardia):এই রোগে খাদ্যনালির খাবার পাকস্থলিতে সহজে প্রবেশ করতে পারে না,ফলে খাবার দিনের পর দিন খাদ্যনালিতে জমা থাকে, প্রদাহ করে,ইনফেকশন করে,
৭. শরীরে পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব দীর্ঘদিন ধরে থাকা, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন হল ভিটামিন এ,ই,সি।
৮.সাধারণত এটা মধ্যবয়সের রোগ। নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়।
৯. ফাস্টফুড ,জাংক ফুড, কারবোনেটেড ড্রিংকস, অতি খাওয়া,শুয়ে-বসে থাকার (sedentary life style) সাথে ওবেসিটি বা মোটা হওয়ার সম্পর্ক অাছে, ওবেসিটির সাথে GORD র সম্পর্ক অাছে, আর GORD র সাথে সম্পর্ক অাছে খাদ্যনালির ক্যান্সারের।
১০.প্লামার ভিনসন সিন্ড্রম(Plummer Vinson syndrome): মহিলাদের মাঝে এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। খাবার গিলতে তারা অস্বস্তিবোধ করে যা অনেক সময় মানসিক রোগ মনে করা হয়। অাসলে তা নয়। এই রুগিদের আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া, লিউকোপ্লাকিয়া(ওরোফ্যারিন্জিয়াল), ক্লাবিং থাকে সাধারণত।
১১.একটি অটোসোমাল ডমিনেন্ট ডিজিজ যার নাম টাইলোসিস. ছোট বেলায় হাত ও পায়ের তালুতে হলুদ প্লাকের মতো হয়। অবহেলা না করে তখনই চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়।
আমি লিখি জনগণের সচেতনতার জন্য। কাজেই পরীক্ষা-নিরিক্ষা,চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত অালোচনায় অামি যাব না।
মূল পরীক্ষা: Endoscopy of upper GIT and taking adequate biopsy
চিকিৎসা: যতটুকু সম্ভব
রোগির রক্তশূন্যতা কমানো
পানিশূন্যতা কমানো,
রক্তে ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখার চেস্টা
পুস্টিহীনতা দূরিকরণের চেস্টা
রোগির অবস্হা,বয়স ,আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করে
অপারেশন/ কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি/আরও বিভিন্ন ব্যবস্থা যেগুলো রুগিকে অসহনীয় যন্ত্রনা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
উপদেশ: সিগারেট,বিড়ি,তামাক বর্জন করুন।
মদ্যপান করবেন না।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, হাঁটাচলার মধ্য দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ফাস্টফুড,জাংক ফুড, কোক-পেপসি, তৈলাক্ত-চর্বি জাতীয় খাদ্য বর্জন করুন।
ভারি জিনিস খাবার পরপরই শুয়ে পরবেন না। কমপক্ষে ১-২ ঘন্টা পরে শুবেন।
ভারি খাবার খাওয়ার সাথে সাথে পানি খাবেন না।
শাক -সব্জি,ফল বেশি খান।
কোন সমস্যাকে তুচ্ছ মনে হলেও অবহেলা করবেন না।
____________________________________
ডাঃ নাহিদ ফারজানা
২৫ তম ব্যাচ,
শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল।
আপনার মতামত দিন: