DR. AMINUL ISLAM
Published:2025-04-07 21:09:00 BdST
কার্ডিয়াক এরেষ্টে সিপিআর: মৃত্যুর দরোজা থেকে বেঁচে আসা বরেণ্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞের লেখা
অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা
প্রাক্তন অধ্যক্ষ, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল
____________
২০১৬ জুনে হার্ট এ্যাটাকের পর হাসপাতালে চিকিৎসার এক পর্যায়ে আমার কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়।তখন বরিশালে তেমন কোন আধুনিক ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও চিকৎসকরা সিপিআর দিয়ে আমাকে বাঁচান।
সিপিআর সম্পর্কিত এই লেখাটি পড়ুন এবং বেশি বেশি শেয়ার করুন
কার্ডিয়াক এরেষ্টে সিপিআর, ঘরে ঘরে হোক ট্রেনিং সেন্টার।
**************************
অধ্যাপক ডাঃ মহসীন আহমদ
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
প্রতিষ্ঠাতা, হেলো - আইপিডিআই ফাউন্ডেশন
কার্ডিয়াক এরেষ্ট কি?
***************************
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল হঠাৎ করেই জীবন-হুমকিস্বরূপ একটি অবস্থা যেখানে হৃদস্পন্দন কার্যকরভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্তপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে চেতনা হারানো এবং অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যুও হতে পারে।
কার্ডিয়াক এরেষ্ট যেকোনো কারণেই হোক না কেনো হার্ট বন্ধ হয়ে (Asystole) অথবা অনিয়ন্ত্রীত হৃৎস্পন্দন ( Ventricular Fibrillation) হয়ে রুগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
১০ মিনিটের মধ্যে সিপিআর অথবা শক না দিলে রুগীর মৃত্যু নিশ্চিত।
ক্রিকেটার তানিমের ঘটনা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তানিম অজ্ঞান হয়ে গেলে তার ট্রেনার ডালিম সাথে সাথে সিপিআর শুরু করেন। সিপিআর দিতে দিতে হাসপাতালে নিয়ে যান সেখানে চিকিৎসকগণ সিপিআর দিতে থাকেন এবং ইসিজি মনিটরে অনিয়ন্ত্রিত অনিয়ন্ত্রীত হৃৎস্পন্দন (Ventricular Fibrillation) দেখে ৩ বার শক দিয়ে বাচিঁয়ে তুলেন।
কার্ডিয়াক এরেষ্ট কিভাবে বুঝবেন?
**************************
কার্ডিয়াক এরেষ্ট বুঝা খুবই সহজ। এর জন্য চিকিৎসক হবার প্রয়োজন নেই শুধু প্রয়োজন প্রচার, প্রশিক্ষণ ও স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিকরণ।
১৷ No Response - রুগী ডাকলে অথবা ঝাকুনী দিলে কোনো উত্তর অথবা নাড়াচাড়া করবে না।
২। No Respiration - শ্বাস প্রশ্বাস নিবে না। রুগীর নাকের কাছে কান নিলে নিঃশ্বাসের কোনো শব্দ পাওয়া যাবে না কিংবা শ্বাসের সাথে পেটের মাংস উঠানামা করবে না।
৩। No Pulse : রুগীর কোথাও পালস পাওয়া যাবে না৷ এটা সাধারণ মানুষের দেখার প্রয়োজন নাই।
৪। Unconsciousness - একেবারেই অজ্ঞান হয়ে যাবে৷
উপরের ৪ টি উপসর্গ শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায়। আর কোনো রোগেই এই লক্ষণ দেখা যায় না৷
যেমন ধরুন, ডায়াবেটিস রুগী ডায়াবেটিস কমে গেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় কিন্তু এটা কার্ডিয়াক এরেষ্ট নয় কারন ডাকলে চোখের পাতা নড়ে অথবা অস্পষ্ট শব্দ করে, রুগীর শ্বাস - প্রশ্বাস নিচ্ছে এটা বুঝা যায়। এছাড়া ষ্ট্রোকের রুগী অজ্ঞান অবস্থায় কোনো রেসপন্স না করলে শ্বাস- প্রশ্বাস নেয় এবং পালস পাওয়া যায় তাই রুগীকে কার্ডিয়াক এরেষ্ট বলা যাবে না।
কার্ডিয়াক এরেষ্ট এর চিকিৎসা কেনো এতোটা জরুরি
***************************
কার্ডিয়াক এরেষ্ট এমন একটা অবস্থা যার ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালের বাইরে নিজের ঘরে, অফিসে, রাস্তায়, ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে, খেলার মাঠে, মসজিদ - মন্দিরে যে কোনো জায়গায় হতে পারে।হাসপাতালের ভিতরে মাত্র ১০ ভাগ ক্ষেত্রে রুগীদের কার্ডিয়াক এরেষ্ট হয়।
কার্ডিয়াক এরেষ্ট এর চিকিৎসা শুরু করতে হয় ১০ মিনিটের মধ্যেই, ১০ মিনিটের বেশি দেরী হলে ব্রেইনের ১০০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়।
তাই পৃথিবীর কোনো দেশেই হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসক দিয়ে কার্ডিয়াক এরেষ্টের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে নিকটজন, দারোয়ান, ড্রাইভার, সিকিউরিটি গার্ড, ট্রাফিক পুলিশ, সহকর্মী বৃন্দ সবাইকে এর চিকিৎসা দেয়ার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রচার, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও স্কলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিকরণে মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষিত করা সম্ভব।
কিভাবে কার্ডিয়াক এরেষ্ট চিকিৎসা দিবেন
***************************
১৷ Early Diagnosis : উপরের ৪ টি উপসর্গ দেখেই কার্ডিয়াক এরেষ্ট ডায়াগনোসিস করতে হবে৷ রুগীকে ডাকলে রেসপন্স করবে না, কোনো শ্বাস - প্রশ্বাস নিবে না, কোথাও পালস থাকবে না এবং একেবারেই অজ্ঞান অবস্থায় থাকবে।
২। Call for help : সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকতে হবে এবং 999 এ ফোন অথবা স্থানীয় সিকিউরিটি গার্ডকে জানাতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি৷ কারন মৃত প্রায় রুগীকে চিকিৎসা দিয়ে মারা গেলে আপনি ঝামেলায় পড়তে পারেন৷ এছাড়া কার্ডিয়াক এরেষ্ট এর চিকিৎসা একার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। রুগী সুস্থ হলেও হাসপাতালে নেয়া জরুরি তাই এম্বুলেন্স ডাকতে হবে।
৩৷ High Quality CPR :
২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে সিপিআর শুরু করতে হবে। সিপিআর দিতে হবে কোয়ালিটি সম্পন্ন যাতে বাইরে থেকে হার্টের উপর চাপ দিয়ে ব্রেইন ও অন্যান্য অংগে পর্যাপ্ত রক্তসঞ্চালন হতে পারে৷ এজন্য প্রয়োজন যথার্থ প্রশিক্ষণ এবং ২/৩ জনের পালাক্রমে একটানা সিপিআর। ১ জনের পক্ষে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অথবা ৩০ মিনিট একটানা সিপিআর দেয়া প্রায় একটানা সিপিআর দেয়া অসম্ভব।
৪। AED Device ( Automated External Defibrillator) এটা এমন একটা যন্ত্র যা দিয়ে সাধারণ মানুষ অনিয়ন্ত্রীত হৃৎস্পন্দন ( Ventricular Fibrillation) ডায়াগনোসিস করে শক দিতে পারে। বাংলাদেশে বেসিক লাইফ সাপোর্ট ও সিপিআর সম্পর্কে মাত্র ২ ℅ মানুষের ধারণা আছে সেখানে AED Device নিয়ে আলোচনা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটা বুঝতে পারছি না। কিন্তু জীবন রক্ষাকারী এই ডিভাইসটির খুব একটা দামী বেশি নয়, ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। বিদেশের মতো এয়ারপোর্ট, রেলষ্টেশন, বাস টার্মিনাল, পার্ক , সচিবালয়, আদালত সহ বিভিন্ন অফিসে বৈদ্যুতিক নির্বাপণ যন্ত্রের মতো AED ডিভাইস সিড়ি অথবা লিফটে পাশে রেখে দেয়া যায়। এটার ব্যবহার খুব সহজ। সিপিআর দেয়ার সময় সাহায্যকারী একজন অথবা সিকিউরিটি গার্ড AED Device নিয়ে এসে AED ডিভাইসের দুটা PAD এর একটা বুকের উপরে ও আরেকটা বাম পাশে ধরলে ডিভাইস অটোমেটিক্যালী ইসিজি দেখে অনিয়ন্ত্রীত হৃৎস্পন্দন ( Ventricular Fibrillation) ডায়াগনোসিস করে শক দিতে বলবে। তখন PAD এর সুইচ চাপ দিলেই ডিভাইস নিজেই শক দিবে এবং রুগীর জ্ঞান ফিরে আসে।
সিপিআর হলো কার্ডিয়াক এরেষ্ট এ মৃত্যু থেকে বাঁচানোর সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা কিন্তু মনে রাখবেন সিপিআর দিয়ে আপনি শুধু রুগীকে সাময়িক ভাবে হার্টের কাজ করে ব্রেইন সহ অন্যান্য অংগে রক্ত সরবরাহ করে সময় দিচ্ছেন যাতে এই সময়ে এম্বুলেন্স আসতে পারে এবং এম্বুলেন্স হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকের সাহায্যে তার কারন খুজে রুগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারে৷ যেটা ক্রিকেটার তামিমের ক্ষেত্রে হয়েছে। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক এঞ্জিওগ্রাম করে রক্তনালীর ১০০% ব্লক খুলে দিয়ে তামিমকে বাচিঁয়ে দিয়েছে।
এক্ষেত্রে সিপিআর দ্রুত শুরু না করলে চিকিৎসক চিকিৎসা দেয়ার সময় পেতেন না আবার সিপিআর একটানা দিয়েও ১০০% ব্লক না খুলতে না পারলে রুগীকে বাঁচানো যেতো না।
হেলো- আইপিডিআই ফাউন্ডেশন সিপিআর প্রশিক্ষণে নিয়মিত কাজ করে আসছে। আপনারা ৩০ - ১৫০ জন গ্রুপে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে হাতে কলমে ট্রেনিং নিতে পারেন।
যোগাযোগ: ডা: শিবলী শাহেদ, পরিচালক, আইপিডিআই ফাউন্ডেশন৷ +8801834610028
ঈদ মোবারক। সবাই সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন।
আপনার মতামত দিন: