Ameen Qudir

Published:
2019-04-04 07:19:03 BdST

কোনটি ক্রনিক আমাশয়: কোনটি নয় , পরামর্শ সহ জানতে হলে পড়ুন এই লেখা


 



অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা
________________________

ক্রনিক আমাশয় বলে একটি সমস্যাকে আমরা বাঙালিরা প্রায়শই ভুল করে থাকি সেটা হলো মলের সাথে অতিরিক্ত মিউকাস যাওয়া।
মলের সাথে নিয়মিত অতিরিক্ত মিউকাস যাওয়া একটি সমস্যা বটে তবে এটি কোন মতেই ক্রোনিক আমাশয় নয়।
আমাশায় একটি জীবাণু সংক্রামক রোগ যা পরজীবি (এ্যমিবা) বা ব্যাকটেরিয়া( সিজেলা) দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে। এতে করেও মলের সাথো মিউকাস যায় ক্ষেত্রবিশেষ রক্তও যেতে পারে।
এবার আসি ক্রনিক আমাশায় বলতে যে রোগটিকে আমরা বুঝি সেটি আসলে কী?
আমাদের অন্ননালী থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত বিস্তৃত পথ ভিতর দিক থেকে একটি মূল্যবান ঝিল্লি দ্বারা আবৃত। এই ঝিল্লির ভেতরে গ্রন্থি আকারে নানান ধরণের কোষ থাকে।এক একটি কোষ একেক ধরণের কাজ করে থাকে। আমরা খাদ্য হিসাবে যেসব খাবার খাই তাকে সমন্বিত করে পরিপাক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মলে রূপান্তর করাই এইসব কোষের কাজ।তার মধ্যে একটি কোষ হচ্ছে মিউকাস নির্গতকারী কোষ বা(Mucous Secretory cell)এই কোষগুলোর কাজ হচ্ছে মলকে পিচ্ছিল করা যাতে মল অন্ত্রের গায়ে লেগে না থেকে নিচের দিকে নিঃস্ক্রান্ত হয়। এই মিউকাসের পরিমিত নিঃসরণের কারণেই মল তার স্বাভাবিক নরম চরিত্র নিয়ে পায়ুপথ দিয়ে নির্গত হয়। যদি আমাদের এই মিউকাস না থাকতো তাহলে মল ইটের মতো শক্ত হয়ে পায়ুপথকে ফাটিয়ে দিতো।এবার ক্রনিক আমাশা নামে ভ্রম করে যে রোগটিতে আমরা ভুগি তার আসল নাম বলি। তার আসল নাম, ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম( Irritable Bowel Syndrome)
এসব রোগিদের এক বা একাধিক বার নরম পায়খানা হয় এবং পায়খানার সাথে কিছুটা অধিক পরিমান মিউকাস নিঃসরণ হয়।
এটি কোন কঠিন বা জটিল রোগ নয় তবে একটি সমস্যা বটে।
আমরা যেসব খাদ্যদ্রব্য গ্রহন করি তার সহনশীলতা সবার এক রকম নয়। কেউ অখাদ্য কুখাদ্য সব কিছু খেয়ে সহজেই হজম করে ফেলি কেউ আবার বাছাই করা সব খাবার দাবার খেয়েও পার পাই না। এটি নির্ভর করছে অন্ত্র বা পরিপাক নালীর গঠনগত চরিত্রের উপর।আবার গঠনগত চরিত্র মোটাদাগে নির্ভর করে ব্যক্তিটির জিনগত বৈশিষ্ঠর উপর।এটা অনেকটাই পারিবারিক সূত্রে পাওয়া।তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা আক্রান্ত না হয়ে পরিবারের যে কোন ব্যক্তিই এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে
মলের সাথে যদি আপনার রক্ত না যায়,যদি জ্বর না আসে, যদি খাবারে অরুচি না থাকে, যদি স্বাস্থ্য না ভাঙে তবে পায়খানা যতো বারই হোক না কেন আর যত মিউকাসই যাক না কেন ধরে নিতে হবে আপনার বড় কোন রোগ হয়নি।
এবার বলছি কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার ইরিটেবল বাউল সিন্ড্রোম হয়েছে!

সময়ে অসময়ে পেটে পায়খানার বেগ অনুভব হওয়া
মিউকাস সহকারে এক বা একাধিকবার পায়খানা হওয়া
পেটে কামড় নিয়ে টয়লেটে যাওয়া
পায়খানায় যেয়ে বসে থাকা মানে পরিমানমত বা তৃপ্তি সহকারে পায়খানা না হওয়া
পেটে ফাঁপা বা পেট ভার হয়ে থাকা
এটি একটি বড় সমস্যা বটে কারণ এর কোন স্থায়ী মিমাংসা নেই, ঔষধপত্র খেয়ে সাময়িক ভালো থাকা চলে মাত্র।
ভালো থাকার জন্য যা যা করতে হবে
১/
কিছু কিছু খাবার পরিহার করতে হবে সাধারণত আমরা তৈলাক্ত চর্বিযুক্ত এবং দুগ্ধজাত খাবার খেতে নিষেধ করি অবশ্য কোন রুগীর কোন ধরণের খাবারে সমস্যা হয় রোগীররাই ভালো বলতে পারে, কারো কারো ক্ষেত্র শাকসব্জীতেও সমস্যা হয় বা হতে পারে
২/
নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হতে
৩/
এবং সবচে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগটিকে পাত্তা না দেয়া এবং এ নিয়ে সংকুচিত না থাকা বা মন খারাপ না করা

বিশেষ পরামর্শ হিসাবে একটি কলোনসকোপী(COLONOSCOPY) করে নিতে পারেন
যাতে গোটা বৃহদান্ত্র পরীক্ষা করা হয়ে যাবে।
___________________________

অধ্যাপক ডা. ভাস্কর সাহা । প্রখ্যাত চিকিৎসক । লেখক। প্রাক্তন অধ্যক্ষ, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ , বরিশাল।

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়