SAHA ANTAR

Published:
2021-05-18 16:09:41 BdST

LDL cholesterol লো কার্ব ডায়েটের প্রথম দিকে বাড়ে, তবে কিনা, এতে চিন্তার কিছু নেই


 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

__________________

LDL cholesterol কিন্তু লো কার্ব ডায়েটের প্রথম দিকে বাড়ে। তবে কিনা, এতে চিন্তার কিছু নেই।

চারটি জিনিস হয় এতদ্বারা, ১/HDL cholesterol বাড়ে, ২/ ট্রাইগ্লিসারাইড স কমে, ৩/ সেরাম ইনসুলিন কমে, ৪/ LDL cholesterol বাড়ে।
আমাদের শরীরের বেশির ভাগ কোষ কিন্তু সোজাসুজি কোলেস্টেরলের ওপর নির্ভরশীল, প্রতিদিন, নিশিদিন।
এবং সব কোষের ই অনুভূতি বা নির্দেশ পরিবহনের জন্য ও কোলেস্টেরলের প্রয়োজন।
কোলেস্টেরল কে একদা কালিমালিপ্ত লিপ্ত করার চেষ্টা আগেও হয়েছে, এখনো কোন কোন মহলে তা জারি আছে।
আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য যে কোলেস্টেরল প্রয়োজন তার ব্যবস্থা, মস্তিষ্ক নিজেই করে, অন্য কোন অঙ্গের ওপর এই দায়িত্ব দেওয়া নেই।
যে LDL cholesterol কে একদা কার্ডিওলজিস্ট রা প্রায় ভিলেন বানিয়ে পৃথিবীর মুখ থেকে মুছে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, সেই LDL ই কিন্তু ডিম্বাশয়ে ও শুক্রাশয়ে কোলেস্টেরল সরবরাহ করে নারীদের আরো সুন্দরী ও লাবণ্যময়ী করে , পুরুষদের আরো দীপ্ত ও পুরুষালী করে তোলে।
হটাৎ কোন অসুবিধায় পড়লে বা বিড়ম্বনায় পড়লে মানুষকে Stress হরমোন তৈরী করে তার সঙ্গে লড়ার জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্রেস হরমোন, ও LDL ই আদ্রেনাল কর্টেক্স থেকে ক্ষরণ করাতে সাহায্য করে।
Bile acid, Bile salt এবং ভিটামিন ডি সরাসরি কোলেস্টেরলের থেকে উদ্ভূত। এদের প্রতিটিই প্রতিদিন প্রয়োজনীয়। কোলেস্টেরল নিজে কিন্তু শরীরের ইন্ধন বা fuel হিসাবে কাজে লাগে না। তবে এটি কিন্তু ভারি প্রয়োজনীয় বটে।

কোলেস্টেরল আদতে ফ্যাট জাতীয় হওয়ায়, রক্তে ( যা জলীয় তরল) তা দ্রবীভূত হয় না। প্রকৃতি র এক অপূর্ব দানে এই কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড ( উভয়ই ফ্যাট জাতীয়) এর ওপরে ফসফোলিপিডের এক আস্তরণ পড়ে এবং এই মিশ্রণ টি কিন্তু রক্তে দ্রবীভূত হয়ে শরীরের সর্বত্র রক্তে মিশে বাহিত হতে পারে। এই ফসফোলিপিড টি সাধারণতঃ Apo -B 100 হয়ে থাকে।

মূলে ফিরি। দেখা গেছে, উপবাস করলে অথবা লো কার্ব ডায়েট খেলে, LDL বাড়ে। এটিও অভিযোজন জাত, এবং অতি স্বাভাবিক ও।

এমনকি দেখা গেছে, বেশ টানা কয়েকদিনের উপবাস, ( একে লো কার্ব ডায়েটের চূড়ান্ত উদাহরণ বলাই যায়) তে আমাদের শরীর প্রথমে জমা গ্লাইকোজেন ( লিভার এবং মাংসপেশিতে জমা থাকে) ব্যবহার করে, কিন্তু এই সঞ্চয় ৬-৮ ঘন্টার মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যায়। তখন প্রথমতঃ শরীর কিছু পরিমাণ গ্লুকোজ, প্রোটিন থেকে Neoglucogenesis পদ্ধতিতে উৎপাদন করে বটে, কিন্তু পরে শরীর যখন ফ্যাট কে কাজে লাগিয়ে শক্তি পেতে শিখে নেয়, তখন এই নতুন করে গ্লুকোজ তৈরীর হার বিষম ভাবে কমতে থাকে,কারণ এই গ্লুকোজ তখন অপ্রয়োজনীয়।

আমাদের মস্তিষ্ক তার চাহিদার ২/৩ ভাগ শক্তি ফ্যাট থেকে অর্জন করতে পারে, কিন্তু বাকি ১/৩ ভাগের জন্যে মস্তিষ্ক কার্বের ওপরই নির্ভর করে। সেজন্য লম্বা উপবাস অপেক্ষা কম সময়ের উপবাস বা Low বা কিছু ( দিনে ৭০ বা ৮০ গ্রাম অবধি) কার্ব গ্রহণ ই উত্তম ।

উপবাস বলতে এখানে জলপানে বাধা দেওয়া হয় নি, কারণ জলের কোন ক্যালরি মান (Value) নেই। বরং এখনকার মতো প্রচণ্ড আবহাওয়ায় নির্জলা উপবাস, নিয়মিত হলে ক্ষতিকারক ই বেশি।

মনে রাখবেন আমাদের জীবনকালের একেবারে শুরুতে আমরা সবাই ই ফ্যাট কে ব্যবহার করেই বড় হয়েছি।
যেমন এক নবজাতকের ( জাতিকার ও)ও প্রথম জীবনে আহার্য হলো মাতৃদুগ্ধ যার প্রথম দিক টি শুধুই কলোস্ট্রাম বা ফ্যাট, এমনকি সামান্য ল্যাকটোজ বা মিল্ক সুগার ও থাকে না প্রথমে। অর্থাৎ আমরা পৃথিবীতে আসার পর থেকেই ফ্যাট কেই ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করি, এবং মাতৃদুগ্ধ এর ৯২- ৯৫% জল বলে একটি শিশুর শরীরে জমা ব্রাউন বা বাদামি ফ্যাট ব্যবহার করেই শরীরের বিকাশ, বিকাশ মস্তিষ্কের ও।

৫- ৬ মাস বয়সের আগে ইদানীং কালের শিশুচিকিৎসক মাতৃদুগ্ধ ছাড়া অন্য সব ই বারণ করছেন।

আবার মস্তিষ্ক ১/৩ ভাগ কার্ব ব্যবহার করে, যা আসে আমাদের মাতৃদুগ্ধের ল্যাক্টোজ থেকে।

এবারে আমাদের শরীর ফ্যাট থেকেই হোক বা গ্লুকোজ থেকেই হোক তৈরী করে ক্রেব চক্রের মাধ্যমে Acetyl CoA , যা মিটোকন্ড্রিয়ার তে ATP বা শক্তি অথবা Energy র যোগান দেয়।
Acetyl CoA আবার অধিক হলে কোষের বাহিরে এসে HMG CoA তে পরিবর্তিত হয়, এবং এই HMG CoA, হয় কিটোন অথবা LDL cholesterol এ পরিবর্তিত হয়, যখন যেমন প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে এই HMG - CoA কেই বাধা দেয় স্টাটিন গোষ্ঠীর ওষুধ এবং কোলেস্টেরল , বিশেষভাবে LDL cholesterol এ পরিবর্তন হওয়া আটকায় ও। তাতে একঝুড়ি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া আর তেমন কিছু লাভ হয় না। ( ওষুধ কোম্পানি দের বিলক্ষণ লাভ হয় বৈকি) ।

ঠিক এত সহজ নয় তবে আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া উপনিবেশের ও কোলেস্টেরল তৈরীর ক্ষমতা তো আছেই, তদোপরি আছে কোন রকম সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা ও।

দেখা গেছে বিভিন্ন স্টাডি তে যে স্টাটিন দিয়ে কোলেস্টেরল জোর করে কমালে মস্তিষ্কের ধীশক্তি ( সিদ্ধান্ত নেওয়ার বা নতুন করে ভাবার ক্ষমতা) ও স্মৃতিশক্তি,উভয়েই যথেষ্ট হ্রাস পায়, কিন্তু তার বিপরীতে সুফল লাভ কিছু হয় না বললে অত্যুক্তি হবে না।
বরং যাদের কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেশি তাদের অসুখ কম, ভোগান্তি কম এবং আয়ু তুলনামূলক ভাবে বেশি।

আর মানব মস্তিষ্ক উত্তুঙ্গ কার্যকারী হয় যখন তা কিটোন কেই ব্যবহার করে, এবং পর্যাপ্ত ব্যবহার করে।

কিছু কোলেস্টেরল মলে র সঙ্গেও নিষ্কাশিত হয়, যা লো কার্ব জনিত মলের অধিক শুষ্ক হয়ে যাওয়াকেও অনেকাংশে প্রতিরোধ করে।।

______________
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
লোক সেবী চিকিৎসক, লেখক

CONSULTANT DIABETOLOGIST& ENDOCRINOLOGIST,
OBESITY CONSULTANT& REVERSAL OF T2D ,OBESITY & PCOD
Studied M.D. at University of Madras
M.D.
Studied at Madras Medical College (MMC)

Studied Honors in Chemistry at Presidency College, Calcutta

Studied MBBS (University of Calcutta) at Calcutta National Medical College

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়