ডেস্ক

Published:
2021-05-05 17:59:02 BdST

জলবায়ু পরিবর্তন: চোখের সমস্যায় ৫ পরামর্শ


অধ্যাপক ডা: দীপক নাগ

—————————————

চোখ মানব দেহের একটি মূল্যবান অঙ্গ। সুস্হ্য চোখ আর স্বচ্ছ দৃষ্টি সবারই কাম্য। ক্রমাগত জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদেরকে ফেলছে যেমন বিবিধ স্বাস্হ্য ঝুঁকিতে, চোখও সেটা থেকে বাদ পড়ছে না কোনভাবেই। প্রতিনিয়ত পৃথিবীর তাপমাত্রা উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হচ্ছে, অন্যদিকে বায়ু দুষন দিন দিন বেড়েই চলছে।পরিবর্তনশীল এ পরিস্তিতিতে চোখে নিন্মলিখিত অসুবিধাগুলো দ্রুত চোখকে আক্রান্ত করছে।

১। বয়স্ক জনিত রেটিনার কেন্দ্রিয় অংশে অবক্ষয় (Age Related Macular Degeneration), এ রোগটির কারনে পৃথিবীতে শতকরা প্রায় ৫ জন অন্ধত্ব বরন করে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যাঁরা নাইট্রুজেন ডাই অক্সাইড এবং কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে উন্মুক্ত হয় তাঁদের এ রোগের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেশী। এ দুটি গ্যাসই মটরজান বা আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহ্নত যন্ত্রপাতি থেকে নির্গত হয়ে থাকে।

২।চোখের ছানি রোগ (Cataract) এখনও সারা পৃথিবীতে অন্ধত্ব বা কম দেখার মূল কারন। বায়ুর ওজোন স্তর আলোর অতিবেগুনি রশ্মিকে (UV Rays) শোষন করে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে ওজোন স্তর নস্ট হয়ে যায় বিধায় সূর্য্যের অতিবেগুনি রশ্মি চোখে এসে পড়ে এবং ছানি রোগের ঝুঁকি বাডায়। এ ছাড়াও এ ধরনের রশ্মি সানব্রান, চোখের সাদা অংশে এক ধরনের পর্দার মত টেরিজিয়াম বা পিংগুকুলাম নামক রোগ তৈরী করতে পারে।

৩। জলবায়ুর পরিবর্তন চোখের এলার্জি, চোখ চুলকানো বা লাল চোখের অন্যতম কারন। একসময় দেখা যেত বছরের একটা নিদৃষ্ট সময়ে চোখের এলার্জি হতো এবং একটা সময় পরে চলে যেত। কিন্তু, এখন অনেকেই প্রায় সারা বছর ধরে এবং দীর্ঘ সময় যাবত চোখ চুলকানো বা চোখ লাল হয়ে থাকার মত উপসর্গে ভোগে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, চোখ চুলকানো বা লাল হওয়ার জন্য অনেকেই দীর্ঘ দিন এন্টিহিস্টামিন, ডিকনজেসটেন্ট এবং স্টেরয়ড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করে থাকেন, যা পরবর্তীতে শুষ্ক চোখ এবং চোখের প্রেসার বাডিয়ে গ্লুকোমা নামক এক মারাত্বক রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

৪। অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রা এবং বন্যা কবলিত এলাকায় মশার প্রজনন বেশী হওয়ায়, অন্যান্য রোগের মত মশা বাহিত চক্ষু রোগেরও প্রাদূ্র্ভাব ঘঠছে দিন দিন। উদাহারন স্বরুপ, সম্প্রতিকালে ওয়েস্ট নীল ভাইরাস ও জিকা ভাইরাসের কথা বলা যায়।এ দুটি ভাইরাসের কারনে চোখের ইউভিয়া সহ রেটিনাতে মারাত্বক প্রদাহ হয় এমন কি রক্ত ক্ষরনও হতে পারে। বলা বাহুল্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে জলবায়ুর এসব পরিবর্তন বৃক্ষ নিধন (Deforestation) জনিত কারনে হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন যে বৃক্ষ নিধন ও অন্যায়ভাবে প্রানী ব্যবসা (Illegal animal trade) অনেক জনোটিক (zoonotic) রোগের জন্ম দিতে পারে। ধারনা করা হয় যে, করোনা ভাইরাসও (SARS-CoV-2) সর্ব প্রথম চায়নার উহান সিটির সিক্ত খোলা বাজারে বাদুরের (Bats) শরীর থেকে মানব দেহে সংক্রামিত হয়েছিল।

৫। এটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, চোখের পাতিতে বা তৎসংলগ্ন চামডায় ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সূর্য্যের অতিবেগুনি রশ্মি ক্ষতিকর ভূমিকা রাখে।

যেহেতু পৃথিবীর জলবায়ু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, উপরে উল্লেখিত চক্ষু রোগ হতে দৃষ্টি শক্তি রক্ষার জন্য সমক্ষ ধারনা এবং প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্হা গ্রহন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক ডা: দীপক নাগ
বিভাগীয় প্রধান রেটিনা বিভাগ
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল
[email protected]

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়