ডেস্ক

Published:
2021-04-24 14:58:25 BdST

রমজানে চোখের যত্ন: ৭টি বিশেষ করণীয় পদক্ষেপ


 

 

অধ্যাপক ডা: দীপক নাগ
—————————————————-
যেহেতু মাহে রমজান গ্রীষ্মকালে গরমের মধ্যে পালন করতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে কিছুটা সচেতন ও যত্নবান হলে আমরা আমাদের চোখকে সুস্হ্য রাখতে পারি।এখানে বলে রাখা ভাল যে এই চোখকে সুস্হ্য রাখার বিষয়টাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এক, যাদের আগে থেকেই চোখের সমস্যা আছে তাদের চোখের পরিচর্যা এবং দুই, সাধারনভাবে চোখের সুস্বাস্হ্য রক্ষা করা।

অনেকেই আছেন যাদের আগে থেকেই চোখের সমস্যা আছে এবং নিয়মিত চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে কেউ কেউ রমজানে দিনের বেলায় চোখের ড্রপ ব্যবহার নিয়ে দ্বিধান্বিত থাকেন। উল্লেখ্য যে, অনেক ড্রপ আছে যেমন, এন্টিবায়োটিক, স্টেরওয়েড বা গ্লুকোমার ড্রপ যা কিনা দৈনিক ১/২ বার করলেই চলে। আবার কিছু চোখের ঔষধ আছে যা জেল আকারে পাওয়া যায়, যা দৈনিক একবার ব্যবহার করলেই চলে। এমতাবস্তায়, চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ক্রমে এই সকল ড্রপ বা জেল ইফতারের পর এবং সেহেরীর পূর্বে ব্যবহার করতে পারেন। প্রসংঙ্গত: বলা যেতে পারে যে, বিশ্বের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদরা চোখের ড্রপকে কোন খাদ্য বা পানীয় হিসাবে বিবেচনা করেন না।তাঁদের মতে আমরা যেমন রোজার সময় চোখ মুখ পানি দিয়ে ধুইতে পারি তেমনি চোখের ড্রপও ব্যবহার করতে পারি। তবে, অতি সাবধানতার জন্য ড্রপ ব্যবহারের পর কিছুক্ষন চোখ বন্ধ রাখলে (৫/৭ মিনিট) অথবা চোখ ও নাকের কোনে আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষন চাপ দিয়ে রাখলে চোখের ড্রপ গলায় যাবার সম্ভাবনা থাকে না।

এখন আসা যাক রমজানে কিভাবে চোখের স্বাস্হ্য সুস্হ রাখা যায়।

১। রমজানে গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় নিরাহার থাকার কারনে শরীরের ডিহাইড্রেশনের মত চোখেও শুস্কতা অনুভূত হতে পারে। অনেকে আবার পূর্ব থেকেই বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল বা ডিজিটাল স্কীন ব্যবহার করেন তারা শুস্ক চোখে (dry eye) ভোগে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে উপদেশ হলো, তারা ইফতারের পর এবং সেহরীর পূর্বে পর্যাপ্ত পানি পান করতে পারেন যেন সারাদিন নিরাহারে চোখের শুস্কতা অনুভূত না হয়।

২।ভিটামিন-সি, জিংক, ওমেগা-৩ ফেটি এসিড, লিউটিন সমৃদ্ধ খাবার চোখের ছানি, বয়স্ক জনিত চোখ ও রেটিনার রোগের জন্য খুবই উপকারী। তাই রমজানে এইসব পুস্টি সমৃদ্ধ খাবার যেমন, লেবু, ফলমুল, মাছ, তৈল বিহীন প্রোটিন ইত্যাদি ইফতার বা সেহরীতে রাখা ভাল।

৩।রমজানে শারীরিক ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে।ব্যায়াম চোখের স্নায়ু (optic nerve) এবং রেটিনার রক্ত সরবরাহ বাড়ায়। ফলে রেটিনা সহ গ্লুকোমা ইত্যাদি অনেক রোগের জন্য অতীব উপকারী।

৪। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি চোখের অনেক ক্ষতি করে থাকে। এগুলি নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং এ জন্য সঠিক খাবার ও পরিমিত ব্যায়াম অত্যাবশ্যক।

৫। ধূমপান শরীরের মত চোখের জন্যও ক্ষতিকর। অনেকে ইফতারের পর থেকে অন্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত ধূমপান করেন। এ অভ্যাস একদম পরিহার করতে হবে।মনে রাখতে হবে যারা অতীতে ধূমপান ত্যাগ করতে যেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, ধূমপান পরিহারের জন্য রমজানেই হতে পারে উৎকৃষ্ট সময়।

৬। রমজানে পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরী। অন্তত: ৬ ঘন্টা। বিশেষ করে যারা শুষ্ক চোখ এবং চোখ জনিত কারনে মাথা ব্যাথায় ভোগে থাকেন।

৭। পরিশেষে, প্রয়োজনে রমজানে চোখের চিকিৎসা নিতে ভুলবেন না। চোখের আঘাত, চোখে ব্যাথা, হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, চোখে আলোর ঝলকানো বা লাল/কাল কিছু দেখা অথবা অস্বাভাবিক কিছু অনুভূত হলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।

আপনার সুস্হ চোখ ও স্বচ্চ দৃষ্টির প্রত্যাশায়,

অধ্যাপক ডা: দীপক নাগ
বিভাগীয় প্রধান, রেটিনা বিভাগ
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল
[email protected]

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়