Ameen Qudir

Published:
2019-06-16 00:09:44 BdST

একজন অভিজ্ঞ সনোলজিস্টের ১২ পেশাগত পরামর্শ : নবীনদের অবশ্য পাঠ্য


 

ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান

_________________________

সনোলজিস্ট হিসেবে আমার ১৯ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ উপলব্ধিগুলো লিখে ফেলতে মন চাইল হঠাৎ করেই। চাইলে নবীনরাও অনুসরণ করতে পারেন!

১। সনোগ্রাফীর রোগীকে চিকিৎসা বিষয়ে কোন পরামর্শ দিলে রেফারিং ফিজিশিয়ান অসন্তুষ্ট হন। খুবই স্বাভাবিক। রোগীকে আমার কাছে পাঠানো হয়েছে সনোগ্রাফী করার জন্য, চিকিৎসার পরামর্শ যা দেয়ার, তার ফিজিশিয়ান দেবেন। এটা মনে রাখা উচিত সব সনোলজিস্টের।

২। রোগীকে বা তার এটেন্ডেন্টকে সনোগ্রাফীর মনিটর দেখিয়ে ধারাবাহিক বিবরণ দেয়া আমার মতে অপ্রয়োজনীয় এবং ভুল একটা কাজ। এতে সনোলজিস্টের মনোযোগ নষ্ট হয়, অনেক খুটিনাটি বিষয় চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। এমন কি, দেখতে পেলেও রিপোর্ট লেখার সময় সেটা মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগী দেখার সময় রোগী বা এটেন্ডেন্টের সাথে কথা বলতে থাকায় অসংখ্যবার এ'ধরনের মিসটেক হয়েছে আমার। প্রয়োজনীয় লিডিং কোয়েশ্চন ছাড়া অন্য কোন কথা না বলাই ভাল স্ক্যান করার সময়।

৩। স্ক্যান শেষ করে সাথে সাথেই রিপোর্ট লেখা শুরু করা উচিত। তা না করে রোগী বা এটেন্ডেন্টের সাথে কথা বলতে গেলে অনেক খুটিনাটি এমন কি গ্রস ভুলও হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে গত ১৯ বছরে অসংখ্যবার এ'ধরনের মিসটেক হয়েছে।

৪। যুক্তির কথা হচ্ছে, রোগী সনোগ্রাফী করাতে এসেছে, রিপোর্ট লিখে সেটা তাকে বুঝিয়ে দেয়ার কিংবা সেটা নিয়ে বিশ্লেষন করা কি সনোলজিস্টের দায়িত্ব? আমি সেটা মনে করি না। কই, এক্সরে, প্যাথলজি বা অন্য কোন রিপোর্ট তো রিপোর্টদাতাকে বিশ্লেষন করে বুঝিয়ে দেয়ার প্রশ্ন বা দাবী কোন রোগী বা তার লোকজন করে না! আসলে আমাদের কিছু সনোলজিস্ট এটা করে করে অভ্যেস খারাপ করে দিয়েছেন আমাদের দেশের মানুষের। সবাই মিলে এই চর্চা বন্ধ করা যায়। হ্যা, কথা বলবেন, সংক্ষিপ্ত, শুধু প্রয়োজনিয় কথা বলবেন। যেমন, প্রেগন্যান্সীর রোগী দেখার পর রোগী যদি জেন্ডার জানতে চায়, শুধুমাত্র তখনই তা বলে দেবেন। অনেক রোগী কিন্তু জেন্ডার জানতে চায় না। জানতে না চাইতেই জেন্ডার বলে দেয়ায় আমার এক রোগী ও তার স্বামী প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছিল আমার ওপর। এরপর থেকে জানতে না চাইলে জেন্ডার বলি না আমি। রিপোর্টে জেন্ডার ম্যানশন কিরে দেই আমি। আমাদের দেশে এটা করতে কিংবা রোগীকে জানাতে কোনরূপ আইনগত বাধা নেই। দেখেছি, তাহলে লিখবো না কেন? সবচে বড় কথা ৯৯.৯৯% রোগীই এটা জানতে চায়। পরবর্তী/ফলোআপ স্ক্যানে সুবিধার জন্যও এটা সংক্ষেপে ম্যানশন করে রাখা ভাল। রোগীর সবকিছু ভাল থাকলে বলবেন বাচ্চা ভাল আছে, আপনার ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখান। যদি পজিশন, ফ্লুইড ইডিডি বা অন্য কিছু জানতে চায় ( অনেকেই এমন কি প্ল্যাসেন্টাল পজিশনও জানতে চায়) তাহলে সেটা বলে দেবেন। তবে, আমি মনে করি, আগ বাড়িয়ে কিছু বলার দরকার নেই।

৫। যদি খারাপ কিছু হয়, তাহলে বলে দেবেন একটু সমস্যা আছে, তাড়াতাড়ি আপনার ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখান। রোগী বা এটেন্ডেন্ট জানতে চাইলে সেটা তাদেরকে জানান, তবে এমনভাবে জানাবেন, যাতে রোগী আতংকগ্রস্ত না হয়।

৬। ইমারজেন্সীর ক্ষেত্রে, যেখানে জীবন সংশয় আছে বলে মনে হবে, সেখানে রোগীর এটেন্ডেন্টকে একা ডেকে সেটা জানিয়ে দিন। তবে বলার সময় "আমার মনে হয়" কথাগুলো যোগ করে বলাটা ভাল। কারন রেফারিং ফিজিশিয়ান দ্বিমত পোষন করতে পারেন আপনার মতের সাথে কিংবা আপনার ধারনা ভুলও প্রমানিত হতে পারে পরবর্তিতে।

৭। রোগী প্রিপেয়ার করার সময়েই রোগীর হিস্ট্রি নেয়া শুরু করবেন। হিস্ট্রি না নিয়ে রোগী দেখাটা একদমই উচিৎ না। তাছাড়া রোগীর স্ক্যানিং চলাকালেও প্রয়োজনে আরও তথ্য জেনে নিতে হবে।

৮। স্ক্যানিং চলাকালে রোগীর এটেন্ডেন্টকে ঘাড়ের পেছনে দাঁড়িয়ে উকিঝুকি মারা এলাও করবেন না। প্রয়োজনে এক্সট্রা একটা মনিটর রোগীর পায়ের দিকে কোনাকুনি বসিয়ে রোগী ও এটেন্ডেন্টের লাইভ মনিটরিং এর ব্যাবস্থা করে দিন। একটা মিনিটরের দাম ৫৫০০/- -৮০০০/- মাত্র। ল্যাবকে বলে এটা করিয়ে নিন। আমার ল্যাবে আমি এটা করার পর থেকে উপদ্রব অনেক কমে গেছে।

৯। রেফারিং ফিজিশিয়ান অসন্তুষ্ট হন, এমন কোন কথা বা মন্তব্য করবেন না। এতে নিজের রিজিকে কুড়াল মারবেন আপনি।

১০। রোগী যদি সেলফ এডভাইসে স্ক্যান করাতে আসে, এবং রোগীর মারাত্মক কোন সমস্যা বা জীবন সংশয়ের সন্দেহ কিংবা কোন সমস্যা, যার ইমার্জেন্সী ট্রিটমেন্ট দরকার বলে মনে হয় আপনার, তাহলে এটেন্ডেন্টকে একা ডেকে সেটা জানিয়ে দিন। প্রয়োজনে জরুরী ভিত্তিতে হাদপাতালে ভর্তির কিংবা প্রযোজ্য বিশেষজ্ঞকে দেখানোর কথা বলে দেয়া উচিৎ। তবে, রোগী বা এটেন্ডেন্ট যেন আতংকিত না হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। তবে আপনার বক্তব্যটাকে সে যেন গুরুত্ত্ব দেয়, সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

১১। একটা কথা খেয়াল রাখবেন, রোগীরা কিন্তু বিশ্বস্ত নয়। এটা আমার ১৯ বছরের পর্যবেক্ষন। আপনার বলা যে কোন নেতীবাচক কথা কিন্তু রোগীরা গোপন রাখে না; সেটা যথাস্থানে জানিয়ে দেয়। ধরুন, আপনি বললেন, ইনার চেয়ে তো উনি ভাল। উনাকে দে খালেন না কেন? অথবা বললেন, এই ঔষধটা কেন দিল, এটা তো দেয়া ঠিক না! নিশ্চিত থাকেন, রোগী আপনার যতউ পরিচিত হোক, সে সোজা "ইনা"কে জানিয়ে দেবে সেটা। রেফারিং ফিজিশিয়ান অবশ্যই এটা জানলে অসন্তুষ্ট হবেন। এমনও দেখেছি প্রেসক্রিপশনে আল্ট্রাসনোগ্রাম এডভাইস করে কন্স্যালটেন্ট লিখে দিয়েছেন- by any sonologist, except Dr." X"!

১২। শেষ, তবে সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা, অন্য সনোলজিস্টের করা আগের কোন রিপোর্ট যদি রোগী দেখায় বা দেখাতে চায়, সেটা দেখবেন। অবশ্যই যেটা করবেন না, সেটা হচ্ছে, সেই রিপোর্ট বা সেই ল্যাব সম্পর্কে কোন নেতীবাচক মন্তব্য করবেন না। এই ভুলটা কিন্তু আমাদের অনেকেই করে থাকেন!

★এগুলো একান্তই আমার অভিজ্ঞতালব্ধ উপলব্ধি। এগুলোকে কেউ মেডিকেল ইথিক্স বা অন্য কোন যুক্তি দিয়ে বিচার করবেন না।_________________

-ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান
কন্স্যালটেন্ট সনোলজিস্ট
মৌলভীবাজার

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়