Ameen Qudir

Published:
2019-03-10 06:56:57 BdST

অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোম এন্ড ডেথ:এই মৃত্যুর সিংহভাগ ঘটে চল্লিশ বা পঞ্চাশে


 

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
______________________________

যে কোন মৃত্যুই নিঃসন্দেহে বেদনা ও দুঃখজনক, বিশেষত তা যদি অকালে হয়। এর মধ্যে অবশ্যই পড়ে দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু।
এ ভিন্ন আরেকটি মৃত্যু খুব বিরল নয়। এটি সংক্রমণ জনিত নয় আদৌ। এই মৃত্যুর সিংহভাগ ঘটে চল্লিশ বা পঞ্চাশের দশকে। পুরুষ রাই সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য রকম বেশি। এর ডাক্তারি নাম Sudden global myocardial infarction and death. ( সাডেন গ্লোবাল মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন অ্যান্ড ডেথ।)
যাঁরা দূর্ভাগ্যক্রমে এর শিকার হচ্ছেন তার অধিকাংশই স্বাস্থ্য সচেতন - আদৌ স্থূল নন, ধূমপান বা মদ্যপান করেননা, অনেকেই আবার নিয়মিত ব্যায়াম ও করেন। আবারো লিখি, এই দলে চিকিৎসক, অ্যাডভোকেট, অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং ব্যবসায়ী দের ই আধিক্য। পূর্ণ সময়ের নিয়মিত চাকুরিজীবি দের সংখ্যা নিতান্ত কম বা আদৌ উল্লেখযোগ্য নয়।

কারণ খুঁজে পেতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আক্ষরিক অর্থেই মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে। কি এমন ঘটছে তাহলে?

এঁদের বেশিরভাগেরই রক্তচাপ, রক্তে লিপিড বা চর্বির ও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর্থিক অবস্থা আশানুরূপ ভালো। ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এমনকি TMT ইসিজি ও প্রায় স্বাভাবিক।

আমার পরিচিত স্থানীয় এক ব্যবসায়ী, বয়স তখন ৫২ বা ৫৩, ভেল্লোর গিয়েছিলেন, ' হোল বডি চেক আপ' এর জন্য। সেখানে তাঁর সবরকম পরীক্ষা করে এক নামী কার্ডিওলজিস্ট রায় দিলেন যে সব ই প্রায় ঠিকঠাক ই আছে এবং চিন্তার কারণ নেই। যথারীতি সেই ভদ্রলোক ফিরে আসেন, মানসিক শান্তি নিয়ে এবং আবার ব্যবসার কাজকর্ম শুরু করেন। অতি দূর্ভাগ্যক্রমে তাঁর কাজ আরম্ভ করার পরের দিন ভোরে ভয়ংকর হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন হয়, এবং বমি, বুকে ব্যথা নিয়ে তিনি নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং দুপুরের আগেই তাঁর হৃদযন্ত্র চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায়। কি কষ্টের আর কি দূঃখের! এটি কয়েক বছর আগের কথা।

২০১৮ সালে একজন প্রতিষ্ঠিত সার্জেন, যিনি এলাকায় অন্যতম ব্যস্ত এবং অতি পারদর্শী, তাঁর ও প্রায় একই ঘটনা ঘটে গেল। তাঁর পিতা মাতা এখনো দিব্য কর্মঠ আছেন।

কোথাও কি একটি বা একাধিক ভুল হচ্ছে? আমরা কি কিছু বাদ দিচ্ছি? এমন উদাহরণ কিন্তু দেশ কাল ভেদে বেড়েই চলেছে। স্কটল্যান্ডের একজন অতি স্বাস্থ্য সচেতন বিশেষজ্ঞ চিকিসকেরো প্রায় একই ঘটনা। আলোড়িত হচ্ছেন, শুধু চিকিৎসক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানী রাই নন, আগ্রহী অন্য আনুষঙ্গিক পেশার উচ্চশিক্ষিত মানুষরাও।

দেখা গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লিপিড প্রোফাইল, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এমনকি ট্রেডমিল ইসিজি ও স্বাভাবিক। এবারে চিকিৎসক বিজ্ঞানীদের নজর পড়লো আরেকদিকে, আর একটি পরীক্ষায়, যার নাম Coronary Artery Calcium Scoring ( করোনারি আর্টারি ক্যালসিয়াম স্কোরিং) এর দিকে। তাঁরা দেখলেন, যাঁদের এই স্কোর ১ থেকে ১০০ র মধ্যে, তাঁদের আগামী দশ বছরে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। যাদের ১০০ র যতগুণ বেশি, তাদের সম্ভাবনাও ততগুণ বেশি।

প্রথমে আমার অক্ষম লেখনী তে মূল ত্রুটি ও কেন ক্যালশিয়াম হার্টে আসবে ( Basic pathology and relation to Calcium) সম্বন্ধে লিখে পরে প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে যা জানা গেছে জানানোর চেষ্টা করবো।

হার্টের রক্তবাহী ধমনীর এন্ডোথেলিয়াম বা একেবারে ভিতরের স্তরে যখন প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন শুরু হয়, সেই এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। আমাদের শরীরের প্রতিবর্ত ক্ষতিপূরণ পদ্ধতিতে সেখানে পৌঁছয় ১।শ্বেত রক্তকণিকা, ২। লিপোপ্রোটিন, কারণ ওই ক্ষত মেরামতের কাজ চলতে থাকে, এবং অতি ধীরে কিন্তু অভ্রান্তভাবে ধমনী টির ল্যুমেন বা ব্যাস সংকীর্ণ হতে থাকে,৩। এতেও যথেষ্ট না হলে আমাদের শরীরের হাড় থেকে ক্যালশিয়াম রক্তে পরিবাহিত হয়ে ঐ ক্ষতস্থান মজবুত করতে যায়। এ সবই অভিযোজন জাত আমাদের শরীরের নিজেকে সুস্থ করে তোলার প্রচেষ্টা। যত বেশি দীর্ঘ ক্ষত, তত বেশি ক্যালশিয়াম এর উপস্থিতি।

এটি পরিমাপের উপায় তুলনামূলক ভাবে সহজ। অস্ত্রোপচার লাগে না। বিশেষভাবে প্রস্তুত সি টি স্ক্যান ( Computerised Topographic Scan) যন্ত্রে হার্টের ক্যালশিয়ামের উপস্থিতি খোঁজ করা এবং খুঁজে পেলে তার পরিমাপ করা।

চিকিৎসা -- ইদানীং হার্টের অসুখকেও মূলতঃ ইনসুলিন রেজিস্ট্যানস এবং রক্তে বেশি মাত্রায় ইনসুলিনের ফল বলে ভাবা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে আমেরিকার ৪০ + জনগণের প্রায় ৬৫% বা আরো বেশি হয় প্রি ডায়বেটিক বা ডায়বেটিক বলে নির্ণীত হয়েছে। অধিক ইনসুলিন এর মাত্রাই প্রদাহ বা inflammation, ইনফ্লামেশন শুরু করে৷
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগী কে যথাসম্ভব কম কার্বোহাইড্রেট, ও বেশি পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও হাই কোয়ালিটি প্রোটিন সমৃদ্ধ ডায়েট ( একেই কিটোজেনিক ডায়েট বলে) এ রেখে ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করে কম মানসিক চাপ পূর্ণ পরিবেশে রেখে প্রথমে অধিক ইনসুলিনের মাত্রা কম করা এবং ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কে রিভার্স করা বা ঠিক করার চিন্তাই করা হচ্ছে। কোন ওষুধের তেমন কোন কার্যকারিতা র খবর এখনো মেলেনি।
ক্রনিক স্ট্রেস ( Chronic stress) এর জন্য ও অনেক মানুষ ধূমপান, মদ্যপান বা তথাকথিত কম্ফোর্ট ফুড (Comfort food) বা অধিক কার্বোহাইড্রেট জাতীয় সুস্বাদু খাদ্যে এই প্রবল মানসিক চাপ নিবারণের পথ খোঁজেন এবং তাতে ইনসুলিন রেজিস্টেন্স ও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা আরো বাড়তেই থাকে। এ ছাড়াও ক্রনিক স্ট্রেস অ্যাড্রেনালিন এর ক্ষরণ বাড়িয়ে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়, যা আবার পরিবর্তে ইনসুলিনের ক্ষরণ ও বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি।

এই লো কার্ব ডায়েটে এবং দিনেরাতে অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমিয়ে একবছর পরে আবার ক্যালসিয়াম স্কোরিং দেখা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ক্যালশিয়ামের মাত্রা কমতে থাকে। কমে ১০০ র নীচে এলে এই একই জীবনশৈলী পদ্ধতি বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়। যাদের এই ক্যালশিয়াম স্কোর ০ বা ৫০ এর নীচে, তাদের প্রতি ২ কি ৫ বছর অন্তর এই ক্যালশিয়াম স্কোর দেখা হয়।

দেখা গেছে পঞ্চাশের দশক পার হয়ে গেলে এই ধরণের ঘটনার সংখ্যাও ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে।
যত কম বয়েসে ক্যালশিয়াম স্কোর বেশি হবে, তার ক্ষেত্রে সাবধানতা ও চিকিৎসা আরো বেশি প্রয়োজন।।
_________________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়