Ameen Qudir

Published:
2018-12-12 04:28:36 BdST

আপনার জমির দলিলের চেয়েও আপনার প্রেসক্রিপশনের মূল্য অনেক বেশি


 

 

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
______________________

রুগীর মুল সমস্যা,উপরের পেটে ব্যথা,বুকে জ্বালা পোড়া,পিঠে ব্যথা,দুর্বলতা।

একটা হালকা ব্যথার ঔষধ(মিক্সড) দিলাম,যার গ্যাস্ট্রিক ইরিটেশন কম,ভাল কম্পানীর ভাল একটা গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ দিলাম,আর কমদামী একটা ভিটামিন দিয়ে,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে আর পানি বেশি খেতে বলে পাঠায় দিলাম।ঔষধ গুলা ক্যাপিটাল লেটালে সিল দেয়া(হাইকোর্টে নির্দেশের পর কিছু সিল বানায় নিয়েছিলাম)।হাতের লেখা ছিল না।

দুইদিন পর রুগী আসলো,আগের চেয়েও তীব্র পেটের ব্যথা নিয়ে,সাথে শিক্ষিত মারমুখী ছেলে মেয়ে(প্রথম দিন রুগী একা এসেছিলো)আজ সাথে দুইজন।তাদের দাবী ঔষধ খাওয়ার পর রুগীর এই অবস্থা।আমি একটু অবাক হই।বললাম,'কি ঔষধ খেয়েছিলো, একটু দেখাবেন কি?'ভাগ্য ভাল ঔষধ তারা সাথেই আনছিলো।চেক করলাম।ব্যথার হালকা ঔষধ এর জায়গায় তীব্র ব্যথার(ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ঔষধ) ঔষধ যার গ্যাস্ট্রিক ইরিটেশন সবচেয়ে বেশি, গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের জায়গায়,নাম না জানা কম্পানীর ঔষধ, স্ট্রেন্থ দেখে বুঝলাম গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ, কিন্তু কম্পানী চিনিনা(অথচ এই ঔষধটাই তার জন্যে ভাল দরকার ছিল) ,আর ভিটামিনের জায়গায় দামী একটা ক্যালসিয়াম সকালে করে খেয়েছে।ক্যালসিয়ামের গ্যাস্ট্রিক ইরিটেসান বেশি এবং এইজন্যে বলা হয় দুপুরে ভরা পেটে খেতে।মোটকথা তার মুল সমস্যা গ্যাস্ট্রিক,আরও বহুগুনে বাড়ায় দেয়া হয়েছে।আমি শুধু এক্সামিন করে দেখলাম পারফোরেসান বা নাড়ি ফুটা হয়েছে কিনা?

এরপর টিকেট,রুগীর মেয়ের হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম পড়ালেখা জানেন?মেয়ে বিরক্তভাবেই উত্তর দিলো,"জানবোনা কেন?"বললাম "তাহলে ঔষধ গুলো মিলান,আমি যা দিয়েছি আপনারা যা কিনেছেন একই কিনা?"তারা মিলায়,তিনটার একটাও মিলে নাই।এখন বললাম,"এইখানে কার দোষ বলুন?"এমন নয় যে দোকানদার আমার হাতের লেখা বোঝেনি।"ব্লক লেটারে সিল মারা ঔষধের নাম এখনও স্পষ্ট।

এইবার তারা দোকানদারকে ধরতে রওনা দেয়।এই হইছে দায়িত্বশীল পুত্র কন্যা!যখন মায়ের সাথে এসে চিকিৎসা নিয়ে ঔষধ কিনে নিয়ে যাওয়ার কথা,তখন আসেনি। এখন আসছে ডাক্তার ধরতে, ডাঃএর ভুল না পেয়ে হতাশ হয়ে দোকানদার পিটাইতে গেলো।

একটা প্রেস্ক্রিপশন হওয়ার পর বিভিন্নভাবে কাটাছেঁড়া হতে পারে।অতএব এব্যাপারে সাবধান হবেন।কম্পানির লোক হোক বা দালালের পাল্লায় পরেই হোক,প্রেস্ক্রিপশনে আমি ডাক্তারের লেখা ছাড়াও অন্যের লেখাও দেখেছি।কাজেই হাসপাতালে প্রেস্ক্রিপশন কারো হাতেই দিবেন না সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ছাড়া।

এরপর যে দোকান থেকে ঔষধ কিনবেন,সেই দোকানে সেই ঔষধ না থাকলে দোকানদার ইচ্ছামত ঔষধ দিয়ে দেয় বা কোনও কম্পানি বেশি কমিশন দিলে তাদের ঔষধ দেয়।কাজেই দোকানদার যাই বুঝাক বোঝার চেষ্টাই করবেন না।যারা পড়ালেখা জানেনা তাদের পারলে সাহায্য করুন(এইক্ষেত্রে ডাক্তারদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে)।

এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডাক্তারদের হাতের লেখা।ডাক্তারদের হাতের লেখা নিয়ে অনেক ট্রল আছে।কিন্তু এর পিছনের ইতিহাস কেউ জানেনা।এত রুগী দেখতে হয়,চাইলেও লেখা ঠিক রাখা যায় না।আমি নিজে যেহেতু ভুক্তভোগী তাই সিল বানিয়ে নিয়েছি।সেদিন যদি লেখা বোঝার মত না হতো,রুগীর লোক আমাকেই ধরতে পারতো।কাজেই ডাক্তারদেকে সাবধান হতে হবে প্রেস্ক্রিপশনের ব্যাপারে।

আবার রুগী ওই ঔষধ আরও কয়দিন খেলে রুগীর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।তখন ডাক্তারকে ধরেও কিছুই হতো না।কাজেই রুগীর লোককেই প্রেস্ক্রিপশনের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে।

প্রেস্ক্রিপশন হবার পর প্রতিটা ধাপে আপনাকে সাবধান হতে হবে।প্রেস্ক্রিপশনে কাউকে লিখতে দিবেন না,প্রেস্ক্রিপশনের ঔষধ মিলিয়ে কিনুন,প্রেস্ক্রিপশন ৫/১০/৫০০/১০০০ যত টাকা ভিজিটের হোক না কেন তা সযত্নে রেখে দিন।মনে রাখবেন,আপনার জমির দলিলের চেয়েও আপনার প্রেস্ক্রিপশনের মুল্য অনেক বেশি।
_________________________________

 

©মিথিলা ফেরদৌস । লোকসেবী চিকিৎসক। কলাম লেখক।

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়