Ameen Qudir

Published:
2018-08-07 18:08:02 BdST

ডিপ্রেশন একটি সাধারণ এবং সবচেয়ে বেশি , চিহ্নিত না হওয়া মানসিক অসুখ




 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
____________________________________


শ্রীমতী মোহর ভট্টাচার্য লিখলেন, আজকের জেট যুগের অন্যতম মানসিক ব্যাধি, যা ছড়িয়ে পড়ছে প্রায় দাবানলের মতো, যার পোষাকি নাম ডিপ্রেশন, বাংলায় বলা চলে অবসাদ, তা নিয়ে। প্রথমেই লিখি ডিপ্রেশন একটি সাধারণ এবং সবচেয়ে বেশি , চিহ্নিত না হওয়া মানসিক অসুখ।

দুটি প্রকার আছে -- অ্যাকিউট ডিপ্রেশন, ও এন্ডোজেনাস ডিপ্রেশন। এদেরো মাত্রা আছে। সামান্য থেকে অসামান্য পর্যন্ত -- যা ডেকে আনতে পারে আত্মহনন পর্যন্ত।
অ্যাকিউট ডিপ্রেশন খুব স্বাভাবিক একটি প্রতিবর্ত প্রক্রিয়া। পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ তে বা প্রেমে সফল না হলে, অথবা কোন প্রিয়জনের হটাৎ চরম অসুস্থতা বা মৃত্যু হলে এমন হতেই পারে। সাধারণত কিছু কাউন্সেলিং বা কখনো সিলেক্টভ সেরোটোনিন রিসেপ্টর ইনহিবিটর বা SSRI গোত্রের ওষুধ কিছুদিন ডাক্তারের অধীনে থেকে খেলে এই অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আর একটু যোগ করি, এই অবসাদে ভোগেন স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে উচ্চ বুদ্ধ্যাঙ্কের সবাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বার বার ভুগেছেন। যারা সংবেদী, বা Sensitive, তারাই ভোগেন বেশী।

আরেকটি প্রকার আছে, যার নাম এন্ডোজেনাস বা ক্রনিক ডিপ্রেশন। এর তৎক্ষণাৎ কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, কিন্তু অসুখ টি চলতেই থাকে। তুলনা করা যায় অনেক টা এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন এর সঙ্গে, যার চিকিৎসা চালাতে হয় বহুকাল, এখনো পর্যন্ত অনন্তকাল। এই অসুখের কোন ধার্মিক বা পুরুষ নারী ভেদাভেদ নেই, সমস্ত রকম আর্থিক বা আর্থসামাজিক ভেদাভেদের ও খবর জানা যায় না।
এই ভূমিকা টুকু আমার নিজের, বাকিটা শ্রীমতী মোহর ভট্টাচার্যের লেখা।

ক্রনিক ডিপ্রেশনের পেশেন্ট হিসেবে কয়েকটা জরুরি কথা বলা দরকার। যদি মনে হয় একটানা দিনের পর দিন মন খারাপ থাকছে, সুইসাইডাল চিন্তাভাবনা আসছে মাথায়, দৈনিক কাজকর্ম তো বটেই, জরুরি ব্যক্তিগত প্রাত্যহিক কাজ যেমন জল খাওয়া, স্নান করা, ওষুধ খাওয়ার ইচ্ছেটুকুও হচ্ছে না, ঘাড়ে-পিঠে-কোমরে একটানা নাম্বিং পেইন হচ্ছে যার কোনো বিশেষ কারণ নেই, সবসময়েই ক্লান্ত লাগছে, রাতে ঘুম আসছে না ইত্যাদি, তাহলে সম্ভবতঃ আপনার ডিপ্রেশন হয়েছে। আশেপাশে কোনো কনসাল্টিং সাইকোলজিস্ট/ কাউন্সেলর/ সাইকায়াট্রিস্ট থাকলে একবার দেখিয়ে নেওয়া উচিত। ডিপ্রেশন একটা অসুখ, রোগ। অন্য আর পাঁচটা ক্রনিক রোগের মতোই। গান শুনলে, মেডিটেশন/ যোগব্যায়াম করলে বা জোর করে পজিটিভ থিংকিং করলে, শপিং করলে, ডিপ্রেশন সারে না। যারা এসব করতে বলেন, বা বলেন যে তোমাকে তো খুব স্ট্রং মেয়ে/ছেলে বলে মনে হয়, তুমি নিজেই মনের জোরে এসব দুঃখবিলাস কাটিয়ে উঠতে পারবে, তাদের যথাসম্মানে এড়িয়ে চলাই ভালো।

আসলে কী কী করলে কাজ দেয়?

১ ভালো কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলা, থেরাপি। এটা লাকের ব্যাপার।

২ ওষুধ। কিন্তু ওষুধ খুব ভালো ক্লিনিকাল সাইকায়াট্রিস্ট না হলে ভুলভাল হতে পারে। রিস্ক বেশি। ডিপ্রেশনের প্রাথমিক স্টেজে ওষুধ, বিশেষ করে যেগুলো হ্যাবিট ফরমিং সেগুলো না খাওয়াই ভালো। এটাও লাকের ব্যাপার।

৩ কুকুর/ বিড়াল জাতীয় প্রাণী পোষা। এদের সঙ্গ অসম্ভব ভালো ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ লোকজনের জন্য।

৪ নিয়মানুবর্তী জীবনযাপন। জোর করে হলেও রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমনো। দরকারে হোয়াইট নয়েজ প্লে করে (বৃষ্টির শব্দ, সমুদ্রের শব্দ), ক্যামোমিল টি ধরণের হার্বাল নার্ভ সুদার খেয়ে। ভুলেও গ্রিন টি/ গ্রিন কফি খাবেন না। ক্যাফিন এবং নিকোটিন কমিয়ে দিলে ভালো।

৫ ডিটক্সিফাই। অসম্ভব জরুরি। ঘন্টায় ২০০ মিলি করে জল, যতোক্ষণ জেগে থাকবেন। লেবুর রস, টক ফল, দই, ভিটামিন সি। অ্যালো ভেরা + আমলকির রস ইত্যাদি। রোজ ভালো করে স্নান। প্রচুর সবুজ শাকপাতা সব্জী, আর সামুদ্রিক মাছ, চুনো মাছ খেতে হবে।

৬ ব্লাড টেস্ট করিয়ে দেখা উচিত হর্মোন (থাইরয়েড, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরন) এবং এসেনশিয়াল এলিমেন্টস যথা ক্যালসিয়াম সোডিয়াম ফস্ফরাস জিংক ভিটামিন ডি ইত্যাদির মাত্রা ঠিক আছে কি না। যা কম আছে, সেটা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে খেতে হবে, বিশেষ করে খাবারের মাধ্যমে।

৭ বিশেষ করে খাওয়া উচিত পালং আর পুঁই শাক, লাল/ সবুজ নটে-শাক (রাজগিরা/ অ্যামারান্থাস), মাশরুমস, সজনে ডাঁটা এবং ফুল, এমনকী কচি সজনে পাতা। দিশি গাজর। ফলের মধ্যে কালোজাম জামরুল ফলসা পিয়ারা বৈঁচি র‍্যাস্পবেরি। নুন একেবারে কম খাওয়া দরকার, পারলে আয়োডাইজড নুন পুরোই বন্ধ। রিফাইনড সাদা চিনি পুরো বন্ধ। আসল মধু সিয়োর না হলে মধুও খাবেন না।

৮ অ্যাড্রেনালিন ক্ষরিত হয় এমন কোনো খেলা। ব্যাডমিন্টন, টেনিস, ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কি, প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার, সাইকল রেসিং। কিছু না হলে বাচ্ছাদের সঙ্গে বা কুকুর নিয়ে ছুটোছুটি করুন পার্কে। বল/ ফ্রিসবি খেলুন।

৯ ডার্ক চকোলেট। ডিমেন্টরদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য হ্যারি পটারকে রেমাস লুপিন কী দিয়েছিল মনে আছে? ডার্ক চকোলেট। হার্টের পক্ষেও ভালো। দুর্দান্ত মুড লিফটার। তবে খেলে এমন চকোলেট এক টুকরো খাবেন যাতে >৫৫% কোকো আছে। ৮০% কোকো-ওয়ালা তেতো চকোলেট এক টুকরো যথেষ্ট সারাদিনে।

১০ লাস্টলি, বেড়াতে যাওয়া। নতুন জায়গায়। অসম্ভব ভালো কাজ দেয় দেশ দেখা।

ভালো থাকুন সবাই।।
______________________________

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়