DESK
Published:2025-01-28 11:00:59 BdST
রোগীকথন"নারীর মুক্তি আসলে কোথায়: দু'তিনটা ঘটনায় মনটা খুব খারাপ"
ডা. ছাবিকুন নাহার
__________________
নারীর মুক্তি আসলে কোথায়?
দুতিনটা ঘটনায় মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। কোনো মতেই ঠিক হচ্ছে না।
এক.
ইংলিশে মাস্টার্স এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে মাত্র ছয় মাস। তিন মাসের মতো এক সাথে থাকার সুযোগ হয়েছে। মাসিক কেনো নিয়মিত হয় না? তাহলে বাচ্চা কাচ্চা কেমনে হবে? এসব বলে নাকি ক্যাচাল করে স্বামী শশুরবাড়ির লোকজন!মাসিক ঠিক না হলে মাইয়ারে নিব না, বলেই মেয়ের মা কান্না করে দিলো! জামাই কী করে? বিদেশ থাকে। পড়াশোনা? মেট্রিক পা..আআআ..শ। কথার ধরনে মনে হলো মেট্রিক পাশ করেছে কি না শিউর না। রাগ লাগলো শুনে! মেয়েটারে একটু কঠিন করেই বললাম, তুমি মাস্টার্স করা মেয়ে। কী মনে করে মেট্রিকরে বিয়ে করলে? আত্মসম্মানে লাগে নাই?বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে তিন মাসও কাটে নাই। এরমধ্যে এর মধ্যে একবার কনসিভও করেছিলো। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। তারপরও বাচ্চা কাচ্চা হবে না নিয়ে ক্যাচাল করে! জীবন তো শুরুই হলো না। এরমধ্যেই এই!
তাহলে বাকি জীবন কাটবে কি করে?
দুই.
অনার্স করা এক মেয়ে। দেখতে বেশ সুন্দর। শশুর শাশুড়ি দেখতে এসেই বিয়ে পড়িয়ে নিয়ে গেলো। জামাই প্রবাসে থাকে। শেফ। দেড়মাস থেকে চলে গেছে। এই মেয়ের পিরিয়ডে সমস্যা। ডাক্তারের কাছে গেছে শাশুড়িকে নিয়ে। ডাক্তার বলেছে তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেওয়ার ট্রাই করতে। কেননা পিসিওএস রোগে সহজে বাচ্চা হতে চায় না। ও মায়া মায়া গো, শাশুড়ি একটা উসিলা পেলো। বাড়িতে গিয়ে ছড়ালো বউয়ের বাচ্চা হবে না। ফলাফল স্বামী খোঁজ নেয় না। মা বলেছে বাচ্চা হবে না। খোঁজ নিয়ে কী হবে? মেয়েটি বলল, ম্যাডাম আমার সংসারটা বাঁচান। আমি বললাম, আদৌও তোমার সংসার হয়েছে! দেড়মাসের যৌথ জীবনে সংসার বোঝার মতো সময় কী পেয়েছো পরস্পর?
দুটো মেয়ে। একজন মাস্টার্স করা। তাও আবার ইংলিশে। আরেজন অনার্স করা। দুজনেই বিয়ে করল তাদের চেয়ে কম যোগ্যতার লোকজনকে। তো যে যেমন সে তো সেই লেভেলেরই বুঝবে। ঘটনায় উল্লেখিত জামাইদ্বয় এমনি যোগ্যতাহীন যে, এটুকু বোঝে না রোগ শোক মানুষের থাকেই। রোগ যেমন থাকে আবার চিকিৎসা করলে সুস্থও হয়।
আর বাচ্চা কাচ্চা হতে হলে পর্যাপ্ত সময় একসাথে থাকা লাগে। সেটুকু সময় তো দিতে হবে, নাকি? কারো হয়তো একদিন থাকলেও বাচ্চা হয়। সেটা ভিন্ন কথা।
এক দুই মাস সংসার করে বিদেশ বিভূঁইয়ে থেকে মা বোনের কথা শুনে এই যে বউগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করা, এগুলো কোনো ভালো মানুষ করে না। অবশ্য সবাই এমন তাও বলছি না। আমি অসংখ্য প্রবাসী ভাইদের কথা জানি যারা সংসারের জন্য সবটুকু করে। একজন ইতালিয়ান প্রবাসী ভাইকে চিনি যিনি ইতালি থেকে বউয়ের জন্য অনলাইন এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে গ্রুপ কলে বাংলাদেশে থাকা বউসহ আমার সাথে কনসাল্ট করেছেন। আরও অনেক অনেক প্রবাসী ভাইদের পরিবারের চিকিৎসা নেওয়ার খবরে আমার ইনবক্স ভরা। এই যে, জীবন যুদ্ধে দূরে থেকেও পরিবারের ভালো থাকার জন্য চিন্তা। এটা আমাকে মুগ্ধ করে। স্যলুট তাদের।
আজকের লেখায় ফিরি। মেয়ে দুটোর ঘটনায় মনটা খুব খারাপ হয়েছে। এমন বিয়ে কেনো দিলেন? উত্তরে একজনে মা বললেন, মেয়ে পঁচিশ বছর হয়ে গেছে। গ্রাম এলাকা। বোঝেন ই তো। মানুষ নানা কথা কয়। আরেকজনের। দেখতে এসেই বিয়ে হয়ে গেছে ম্যাডাম। চিন্তা করার সুযোগ পাইনি।
কমবয়সী, পড়াশোনা না করা হল কথা ছিলো। দুটো মেয়েই পড়াশোনা করা। এখনো লোকে কী বলবে এই ভয়ে যেনতেন বিয়ে দিয়ে দিতে হবে? আর মেয়েরাও বিয়েই একমাত্র সমাধান এটা সেটা যেমনি হোক মানতে হবে?
এই যে, আমরা বলি নারী স্বাধীনতা। পড়াশোনা করলে নারীরা স্বাধীন হয়, স্বাবলম্বী হয়। আসলেই কী তাই? আদতে নারী সেই আগের লুপেই আঁটকে আছে। সমাজ তো আছেই। যতই শিক্ষিত হোক। স্বকীয়তা নিজেকে লালনপালন করার মতো শক্তি সামর্থ্য আত্মসম্মানবোধ না গড়ে না উঠা পর্যন্ত নারীর মুক্তি নাই। আসলেই বোধহয় নাই।
#Lady_in_Red
আপনার মতামত দিন: