Ameen Qudir

Published:
2017-03-04 17:06:53 BdST

আশংকা করছি মেডিকেলেও পুরুষ দ্বারা নারী: নারী দ্বারা পুরুষ শব ব্যবচ্ছেদ বন্ধের দাবী উঠবে


 

 

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ
________________________________


চিকিৎসকের পাশাপাশি আমি একজন শিক্ষকও। সাইকিয়াট্রির স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্লাস নিই। এছাড়া আরো নানান প্রতিষ্ঠানে আমাকে ক্লাস নিতে হয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ট্রেনিং স্কুল, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ সহ নানা প্রতিষ্ঠানে আমি বিষয়ভিত্তিক ক্লাস নিই- রোগী দেখার চাইতে ক্লাস নিতে বেশি আগ্রহ বোধ করি যদিও আর্থিক প্রণোদনা নাই বল্লেই চলে।


বলা যায় ভালো লাগা থেকেই ক্লাস নেই- যারা আমার ক্লাসে থাকেন তারা কতটুকু উপভোগ করেন জানিনা কিন্তু আমার ক্লাস নিতে ভালো লাগে এবং আমি প্রতিটি লেকচার নিজের মত করে তৈরি করি। কখনো ফাকিঁবাজী করে আমার লেকচার তৈরি করিনা-প্রয়োজনে ক্লাস পিছিয়ে দেই।


আমি যখন এমবিবিএস এ পড়তাম তখন মানব শরীর পড়তে হয়েছে- শব ব্যবচ্ছেদ করতে হয়েছে- মানব শরীরের সকল অংগ প্রত্যংগ জানতে হয়েছে- কখনো সেখানে অশ্লীল কিছু মনে হয়নি। এনাটমি -সার্জারির শিক্ষকদের কখনো অশ্লীল মনে হয়নি। পরবর্তীতে চিকিৎসার প্রয়োজনে সকল নৈতিকতা মেনে নারী পুরুষ সকল রোগীদের শারীরিক পরীক্ষা করতে হয়েছে- সংবেদনশীল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হয়েছে- কখনো বিব্রতবোধ করিনি- এবং বিষয়গুলোকে কখনো অশ্লীল মনে হয়নি। সাইকিয়াট্রি পড়তে যেয়ে আরো বেশি করে সংবেদনশীল বিষয়গুলো জানতে হয়েছে- হর হামেশা যৌনতা, সমকামীতা, যৌন সমস্যা বিষয়গুলো একাডেমিকভাবে এবং চিকিৎসার জন্য প্রাসঙ্গিকভাবেই সামনে চলে এসেছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর সময় এবং রোগী দেখার সময় এই বিষয়গুলো আমাকে কখনো ব্রিবত করেনি।- কখনো অশ্লীল মনে হয়নি। আমার বড় ভাই Jamal Ahmed একজন চিত্রশিল্পী- পারিবারিকভাবেই চিত্রকলা বিষয়ে আমার আগ্রহ আছে- দেশে বিদেশে বহু জাদুঘরেমানব-মানবীর শরীরকেন্দ্রীক অনেক চিত্রকর্ম আর ভাস্কর্য দেখেছি- সেগুলোর আর্টওয়ার্কস আর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি- কখনো অশ্লীল মনে হয়নি।


আজ আমার বন্ধু রিয়াজ এর বিষয়ে এই সংবাদটি দেখে মনে হচ্ছে সারাজীবন কতইনা "অশ্লীল কর্ম" করেছি- এরজন্য আমাকে কয়েকশতবার বরখাস্ত হতে হবে।


সভ্যতা নাকি আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়- আমরাও এগোচ্ছি- কিন্তু এই অগ্রযাত্রা কেবলই অন্ধকারের দিকে। আমাদের এই অন্ধকার যাত্রার আরেক শিকার ড. রিয়াজ। প্রাচীন ইউরোপে চার্চের দোহাই দিয়ে শব ব্যবচ্ছেদ এর মাধ্যমে মেডিকেল শিক্ষা বাধাগ্রস্থ করা হয়েছিল। ড. রিয়াজের বিষয়টি জেনে আমি আশংকা করছি অচিরেই আমাদের হেফাজতকারীরা মেডিকেল কলেজেগুলোতে পুরুষ শিক্ষার্থী দ্বারা নারী শব ব্যবচ্ছেদ আর নারী শিক্ষার্থী দ্বারা পুরুষ শব ব্যবচ্ছেদ বন্ধের দাবী তুলবেন- সেই দিন বেশি দূরে নয় যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আর মেডিকেল কলেজ সহ সকল বিদ্যায়তন নারী-পুরুষ এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে- নারী ক্যাম্পাস আর পুরুষ ক্যাম্পাস হবে- পুরুষ শিক্ষকরা নারীদের আর নারী শিক্ষকগণ পুরুষদের ক্লাস নিতে পারবেন না- পুরুষ চিকিৎসকরা নারী চিকিৎসকের নাড়ী দেখতে হলে মোটা পর্দার আড়াল থেকে চোখ বন্ধ করে রোগী দেখবেন ! স্কুলের পাঠ্য পুস্তকগুলোকে হেফাজতিকরণের পর এখন তাদের লক্ষ্য উচ্চ শিক্ষাকে ধ্বংস করা- ড. রিয়াজের বিষয়টি সেটিরই পূর্বাভাস।


ড. রিয়াজ কোনো বিশেষ ছাত্র-ছাত্রীকে গোপনে তার রুমে ডেকে এই ক্লাসটি নেননি- তিনি প্রকাশ্যে লেকচার গ্যালারিতে এই ক্লাস নিয়েছেন। একজন উচ্চ শিক্ষিত অধ্যাপক হিসেবে তিনি যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়েই আলোচিত চিত্রটি লেকচারে সংয়োজন করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিৎ আলোচিত চিত্রটি লেকচারের সাথে সম্পর্কিত বা প্রাসঙ্গিক কিনা (যদি কর্তৃপক্ষের সেটুকু বোঝার মত সক্ষমতা থাকে!!) । সেগুলো বিবেচনা না করে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়াটা হেফাজতের মন রক্ষাকারী পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমাদের এই ক্রমাগত অন্ধকার-যাত্রা রুখবে কে ?

__________________________________

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ । দেশের জনপ্রিয় কলামিস্ট। কথাসাহিত্যিক ।
সহকারী অধ্যাপক, চাইল্ড এডলোসেন্ট এন্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ।

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়