DESK

Published:
2024-08-10 13:15:42 BdST

প্রথম পর্বরেসিডেন্টদের সুখ দু:খ কষ্ট-বেদনার কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদলেন মেধাবী ডা. রাবিয়া


ডা. সুমাইয়া সুহিতা
___________________________

সংসারের হিসাব বলুন, বাবা মার দায়িত্ব পালন বলুন, কোন কিছুই মিলাতে পারি না একদম। সব এলোমেলো। সব উল্টা পাল্টা।
মিডল ক্লাস পরিবারের মেয়ে আমি । বাপ মা অল্প খেয়ে, না খেয়ে কষ্ট করে পড়িয়েছেন। আমাকে পড়াতে গিয়ে মেঝ বোনটাকে কম বয়েসে বিয়ে দিয়েছেন। সেও মেধাবী ছিল। কিন্তু আমার মত ব্রিলিয়ান্ট নয়। তারপরও সে বোনটি ঢাকা বা রাজশাহী ভার্সিটিতে সহজেই চান্স পেত। আমার পড়ার খরচ মেটানোর পর বাবামার আর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সাধ্য ছিল না।


তাই যখন রাজশাহী মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করলাম। তারপরও বিয়ে করার কথা চিন্তা করি নি। ভেবেছি , আগে ভাল ডাক্তার হই। বড় ডাক্তার হই। বাবা মার পাশে দাড়াই।

কম বয়েসে ছোট ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে হওয়া মেঝ বোনটার মেয়েটা বড় হচ্ছে। খুব মেধাবী। ওকে ভাল পড়ানোর সাধ্য বোনটার নেই। এই পড়ানোর দায়িত্ব আমি নেব। কত স্বপ্ন । কত বড় বড় ইচ্ছে।
রাজশাহীতে একটা ক্লিনিকে চাকুরি নিয়েছিলাম। মালিকটা একটা চামার। নিজে ডাক্তার। বউ ডাক্তার। দুজনেই গাইনি। তারপরও যা বেতন দিত। তাতে কিছু হত না। ওটি টোটি করতে সহায়তা করতাম। সব টাকা স্বামী স্ত্রী নিত। কোন কিছু দিত না। খালি রাজশাহীর মিষ্টি মিষ্টি কথা।


মাস শেষে বেতন পেলে বাবা মার হাতে তুলে দিতাম। প্রথম কয়েক মাস বাপ মা খুব খুশি। সামান্য টাকা। তাতেও খুব খুশি।
তবে একদিন মায়ের কথা কান কথার মত শুনলাম। মা নিজেই চুপি চুপি বাবাকে বলছে। এই টাকার জন্য মাইয়ে ডাক্তার বানিয়ে কি লাভ হয়েছে বলেন তো। এই টাকার চেয়ে পিওন দারোয়ানও বেশি বেতন পায়। মাইয়ের বেশি লেখা পড়া আসলেই ভাল না। বিয়েই ভাল ছিল।


বাবা মাকে কড়া ধমকই দিলেন। বললেন, বেশি লোভ করিও না। আল্লায় তোমার মেয়েকে বড় ডাক্তার বানালে তখন সব কষ্ট দূর হবে রাবেয়ার মা ।
কয়েক দিন পরে বাবাজী তার আসল চেহারা দেখালেন। সংসারের নানা সুখ দু:খ কষ্ট-বেদনায় বাবাজী ধুঁকছেন। কি করে যে মেয়ের সামান্য বেতন আর নিজের আয়ে সংসার চালাতেন, তা তিনিই জানতেন।
তারপরও তিনি আসল বাপের চেহারা দেখালেন। তার সেই চেহারা দেখেও আমিও চমকে গেলাম। এই না হলে কিসের বাপ।
মলিন একটা মানুষ। আমাকে ডাক্তারি পড়াতে গিয়ে সারা জীবনে একটা ভাল জামা , ভাল পাঞ্জাবি পরেন নি।
প্রথম বেতন পেয়ে একটা ভাল পাঞ্জাবি কিনে দিতে চেয়েছিলাম। বাবা রাজি হন নি। বললেন, আমি এখন ভাল পোষাক পরবো না। এতদিন পরি নাই। এখনও পরব না মা।
তার কথা শুনে আমি অঝোরে কেঁদেছিলাম। এই সব আপনি কি কথা বলেন বাবাজী। কোনদিন পরবেন না কেন। তাহলে আমাকে ডাক্তার বানালেন কেন। কেন স্কুলে থাকতেই নাইন টেনে রাজিয়ার মত বিয়ে দিলেন না ! আমার ডাক্তার হওয়ার লাভ কি বাবাজান।
বাবা শান্তনা দিলেন। বললেন, অবশ্যই মা একদিন ভাল একটা সুন্দর নকশা করা পাঞ্জাবি পরবো মা।
কবে পরবেন বাবা ?
যেদিন তুই অনেক বড় ডাক্তার হবি, সেই দিন।
ফেরেশতার চাইতেও ভাল আমার বাবা । সেই বাবা আসল চেহারা দেখালেন মাত্র কয়েকদিন পরে। তার সেই কঠিন আসল চেহারা দেখে আমি দু:খ কষ্ট-বেদনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম।


চলবে ( বাকি অংশ আগামী কাল)
শিরনাম: বাবাজি, তুমি দেখে যাও , তোমার মেয়ে অনেক বড় ডাক্তার হয়েছে!

বি দ্র: প্রতিকী ছবি: মূল চরিত্র ছবি দিতে রাজি হন নি

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়