DESK

Published:
2024-04-21 13:08:31 BdST

কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সুরক্ষায় নিরাপত্তা আইন, বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী এবং হাসপাতাল নিরাপত্তা কমিটি



ডা. আজাদ হাসান

 বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য প্রশাসন বিশেষজ্ঞ লেখক


_________________

"কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা" নিশ্চিত করণ এখন একদিকে যেমন বার্নিং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে তেমনি নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জিং বটে। ক্রমাগত ভাবে হাসপাতাল সমূহে যে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণ প্রসংগে আলোচনা করছি। আলোচনার সুবিধার্থে আমি আমার লেখাটি ত্রিমুখী কর্মসূচী উপস্থাপন করছি।

প্রথমতঃ "বিশেষ নিরাপত্তা আইন" প্রণয়ন।
দ্বিতীয়তঃ "বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দান।
তৃতীয়তঃ "হাসপাতাল নিরাপত্তা কমিটি" গঠন।

প্রথমতঃ "বিশেষ নিরাপত্তা আইন" প্রণয়ন।।
♦♦♦
সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে শুরু করে জেলা হাসপাতাল কিংবা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কোথাও ডাক্তাররা আজ আর নিরাপদ নয়।
সামাজিক অস্থিরতা, সাধারণ মানুষের অসহিষ্ণুতার, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধ, সর্বোপরি ক্ষেত্র বিশেষে অসুস্থ রাজনৈতিক পৃষ্ঠ পোষকতা এই পরিস্থিতিকে দিন দিন আরো তিক্ত থেকে তিক্ততর করে তুলেছে। উপরন্তু ক্রমাগত চিকিৎসক পেশা নিয়ে মিডিয়ার অপপ্রচার এবং সে সব সংবাদ জোড়ালো ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে জনগণের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে ব্যর্থ চিকিৎসক সংগঠন সমূহ তথা চিকিৎসক নেতৃত্বের ব্যর্থতা এই পরিস্থিতিকে আরো বিষিয়ে তুলেছে।

এহেন পরিস্থিতি হতে উত্তরণের জন্য আমাদের ডাক্তার নেতৃত্বকে অনতিবিলম্বে কতিপয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিভিন্ন ফোরামে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ সুশীল সমাজ সর্বদা চিকিৎসকদের কেবল রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার করুন ছবক দেন, কিন্তু কেউ ডাক্তারদের নিরাপত্তার কথা বলে না। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে উপজেলা, জেলা এবং মেডিক্যাল কলেজের ও বিশেষায়িত হাসপাতাল সমূহে স্বাস্থ্য সেবার ভিন্নতা সম্পর্কেও রোগীদের সামনে স্পষ্ট ধারণা তুলে ধরতে হবে। মান সম্মত চিকিৎসা সেবা পেত হলে চিকিৎসক এবং পেসেন্ট কেমন সম্পর্ক হওয়া উচিৎ তা তুলে ধরে আলোচনা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

পরিতাপের বিষয়, সম্মানিত বক্তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, কেবল চিকিৎসকরাই হাসপাতালে ঘটে যাওয়া সব ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য দায়ী(!) কিন্তু চিকিৎসা সেবা একটি টীম ওয়ার্ক। চিকিৎসক সেই টীমের একজন সদস্য। আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি তা হলে দেখতে পাবো বিগত চার-পাঁচ বছরে সমগ্র দেশে সরকারী হাসপাতালে যতগুলো আক্রমন হয়েছে, চিকিৎসকরা শারীরিক ভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, মহিলা চিকিৎসকরা নিগৃহীত হয়েছেন, তার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো, হাসপাতালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত এসব ঘটনার একটি ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা বিচার হয়েছে বলে পত্রিকায় আসে নি। যা দূর্বৃত্তদেরকে আরো দূর্বিনীত আচরণ করতে উৎসাহিত করেছে। তা ছাড়া অত্যন্ত দুঃখের ও পরিতাপের বিষয় এক্ষেত্রে তথা কথিত সুশীল সমাজও রহস্য জনক ভাবে নিশ্চুপ। যা প্রকারান্তে সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডকে আরো উৎসাহিত করছে।

আর তাই "কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা"র বিষয়টিকে আইনী কাঠামোর ভেতর আনতে হবে এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে~
" কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা আমার অধিকার,
আর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা আমার পেশাগত অঙ্গীকার"।

অতীতে আমরা আমাদের এধরণের সমস্যা সমূহ বারবার কেবল লোকালি ম্যানেজ করেছি। তাই সাধারণত জনগনও জানেন না, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ এবং আমরা অর্থাৎ চিকিৎসকরা সার্বিকভাবে কতটা মানসিক যন্ত্রণায় আছি।

আর তাই আমার মতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ সমূহ নেয়া এখন সময়ের দাবী।
আইন প্রণয়নঃ
★হাসপাতালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী বা অমান্যকারীদের আইনের আওয়াতায় আনতে হবে এবং দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

★★"ভুল চিকিৎসার" অভিযোগে হাসপাতালে আক্রমণ, এ জাতীয় সংবাদ প্রচার করা যাবে না। কেননা, অভিযোগ উত্থাপনকারী রোগীর ক্ষেত্রে যে "ভুল চিকিৎসা" হয়েছে (?) এই জাজমেন্টটা কে দিল? কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন হওয়ার মানেই "তিনি অভিযুক্ত", এই ধারণাটি সঠিক নয়। হাইকোর্ট হতে উপযুক্ত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে কোন চিকিৎসক দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন চিকিৎসককে অভিযুক্ত বলা যাবে না।
★ মেডিকো-লিগ্যাল বিষয় সমূহ স্পেশাল কোর্টের মাধ্যমে ফয়সালা হতে হবে।
★ মেডিকো-লিগ্যাল বিষয়ে মামলা কখনো ক্রিমিনাল কেসের কোর্টে পরিচালিত হতে পারবে না। যদি কেউ মামলা করেন, তাহলে সে সব কেস বিএমডিসিতে রেফার্ড বা ট্রান্সফার করে দিতে হবে।
★ জনগণ যাতে মেডিকেল রিলেটেড্ সংবাদ হতে ভুল বার্তা (ইনফরমেশন) না পান সেই জন্য, সংবাদপত্রে মেডিকো-লিগ্যাল কেস বা রিপোর্ট প্রকাশ করার আগে তা এক বা একাধিক চিকিৎসক সমন্বয়ে গঠিত "এডিটরিয়েল প্যানেলের" এপ্রুভাল সাপেক্ষে প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
জনসংযোগঃ
★আমার মতে গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ইন্সিডেন্ট বা ঘটনা গুলো উল্লেখ করে, তথ্য উপাত্ত সহ, পেপার কাটিং, ভিডিও ফুটেজসহ প্রতিটি ঘটনা/ ঘটনা সমূহ প্রেস কনফারেন্স এর মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। এজন্য চিকিৎসক নেতৃত্বকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

★ সেই সাথে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সাথে মিটিং করে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে ওনার কাছে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব তুলে ধরে "কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা" নিশ্চিত করতে ওনার সাহায্য ও সহযোগিতা চাইতে হবে।

★ সর্বোপরি " কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিধান সম্বলিত আইন" বা "দ্রুত বিচার আইন" প্রণয়নের জন্য "স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় বিশেষ কমিটি"র সাথে মিটিং করে ওনাদেরকে বিষয় সমূহ অবহিত করতঃ এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য আহবান জানাতে হবে।

★ প্রসংগত উল্লেখ্য, যেহেতু বিষয়টি আইনের সাথে সম্পর্কিত তাই " নিরাপত্তার" বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল/কমিটি করে তাদের মাঝে উক্ত বিষয়টি যাচাই বাছাই সাপেক্ষে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।


দ্বিতীয়তঃ "বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী" নিয়োগ দান।
♦♦♦
প্রসংগত উল্লেখ্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারী নিরাপত্তা সংস্থার এবং সেক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী হাসপাতালের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাঁদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা যেতে পারে। ( যদিও এটিকে আমি অস্থায়ী ক্যাম্প বলছি কিন্তু এটা কাজে স্থায়ী ক্যাম্প হবে, যেমনটি ইউনিভার্সিটিতে থাকে।) সেই সাথে অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিটি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার নিয়োগ দিতে হবে।

পুলিশ সদস্যরা তাদের নির্দিষ্ট পুলিশ ব্যারাকের হোস্টেলে থাকবেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ক্ষেত্রে প্রতি শিফটে ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে হাসপাতালের চত্বরে ডিউটিতে থাকবেন। আর জেলা হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রতি শিফটে ২০-২৫ জন পুলিশ হাসপাতাল চত্বরে দায়িত্ব থাকবেন।
তাদেরকে সহযোগিতার জন্যে প্রতিটি হাসপাতালে তিন শিফটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। উভয় ট্রুপের সদস্যরা সমন্বয়ের/ কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।

আনসার বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালের আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হবে। যেমনঃ রোগীর সাথে এটেন্ডেন্স নিয়ন্ত্রণ করা, ভিজিটিং আওয়ার ব্যতীত রোগীর সাথে বাহিরের লোকের সাক্ষাৎ নিয়ন্ত্রণ করা। তবে সার্বিকভাবে পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা পারস্পরিক সমন্বয়ের (কো-অর্ডিনেশনের) মাধ্যমে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

প্রশাসনিক ভাবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সংশ্লিষ্ট থানার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবেন। আইন- শৃঙ্খলা জনিত কোনো সমস্যা হলে, হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সংশ্লিষ্ট থানায় ইনফর্ম করবে এবং আর্মড পুলিশ তখন দ্রুত প্রটেকশন টীম সহ আসবে, এবং পরিস্হিতির নিয়ন্ত্রণে আইনানুসারে ব্যবস্থা নিবে।

উক্ত "বিশেষ নিরাপত্তা পুলিশ টীমের" সদস্যরা ডিউটিতে এসে ইএমও সাহেবের কাছে রিপোর্ট করবে এবং ডিউটি শেষে যাওয়ার সময় ইএমও সাহেব-এর নিকট থেকে ডিপার্চারের খাতায় সাইন নিবে।

জেলা হাসপাতাল কিংবা হেলথ কমপ্লেক্স বা মেডিক্যাল কলেজ প্রশাসন শুধু তাদের একটি সেন্ট্রি বক্স-এর ব্যবস্থা করবে। উল্লেখ্য, পুলিশ সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থাও সংশ্লিষ্ট থানা করবে।

উক্ত নিরাপত্তা পুলিশকে সংশ্লিষ্ট থানা হতে তাদের নিজস্ব ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে ডিউটির শুরুতে পৌঁছে দিবে এবং ডিউটি শেষে নিয়ে যাবে।

তাদের আনা নেয়ার জন্য কোনো অবস্থাতেই বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও সাহেব বা
জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক কিংবা মেডিক্যাল কলেজ প্রশাসনের কাছে সরকারি ট্রান্সপোর্ট / গাড়ী চাইতে পারবে না।

 


তৃতীয়তঃ "হাসপাতাল নিরাপত্তা কমিটি" গঠন।
♦♦♦

প্রতিদিন ক্রমাগত ভাবে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটে চললেও স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয় এক প্রকার নির্লিপ্ত। এমতাবস্থায় আমি মনে করি আমাদেরকে স্থানীয় ভাবে নিজেদের "সেইফটি"র জন্য কি করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা করা উচিত এবং নিম্ন লিখিত পদক্ষেপ সমূহ নেয়া যেতে পারে।

এই মূহুর্তে করণীয়ঃ
১) প্রতিটি উপজেলায় / জেলায় একটি করে "হাসপাতাল নিরাপত্তা কমিটি" গঠন করুন।
ক)উপদেষ্টা/পৃষ্ঠপোষকঃ উপজেলা চেয়ারম্যান /স্থানীয় সংসদ সদস্য।
খ) সভাপতিঃ ইউএনও/ডেপুটি কমিশনার
গ) সদস্য সচিবঃ ইউএইচএন্ডএফপিও/ হাসপাতাল তত্বাবধায়ক।
ঘ) সদস্যঃ
★আরএমও
★স্থানীয় থানার ওসি/ এসপি।
তাছাড়া অন্যান্য সদস্য হিসেবে ~
ঙ) উক্ত মিটিং-এ একজন সাংবাদিক এবং
চ) একজন আইনজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে
এবং ওনাদের পরামর্শ চাওয়া যেতে পারে।

এরপর হাসপাতাল নিরাপত্তা কমিটি" নিয়ে হাসপাতালে মিটিং-এর এজেন্ডায় নিম্ন লিখিত বিষয় সমূহ তুলে ধরতে হবে।

♦বিগত বছরে অত্র হাসপাতাল কর্তৃক পরিচালিত সার্বিক সেবার পরিসংখ্যান তুলে ধরুন।
♦ বর্তমান অবস্থার পরিপ্রক্ষিতে হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরুন।

★হাসপাতালের আরএমও সাহেব বিগত বছরে হাসপাতালের সার্বিক সেবার পরিসংখ্যান তুলে ধরুন। যেমনঃ
১) গত বছর অত্র হাসপাতাল হতে ইনডোর এবং আউট ডোর মিলিয়ে কত রোগীর সেবা দিয়েছেন।
২) প্রসূতি সেবার ক্ষেত্রে কতজন মাকে "এন্টিনেটাল কেয়ার", কত জনকে "পোস্ট নেটাল কেয়ার" সেবা দেয়া হয়েছে।
৩) কতজন মায়ের "নরমাল ডেলিভারি" হয়েছে এবং কতজন মায়ের "সিজার" করতে হয়েছে।
৪) কতজন বাচ্চাকে ভেক্সিন দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে কতজন বাচ্চা (২ বছরের নীচে বয়স) সবগুলো রুটিন ভ্যাক্সিন কমপ্লিট করেছে।
৫) কতজন রোগীকে সার্জারী বহিঃবিভাগে এবং কতজন রোগীকে অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
৬) কতজন রোগীর "মাইনর" এবং কতজন রোগীর "মেজর অপারেশন" করা হয়েছে।
৭) বর্তমানে হাসপাতালে জনবল কতজন চিকিৎসক এবং প্যারা-মেডিক স্টাফ পোস্টেড আছেন। কতটি সেংশন্ড পোস্টের বিপরীতে কতজন পোস্টেড আছেন, কতটি পোস্ট শূন্য আছে। সুষ্ঠ ভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে আর কতজন ডাক্তার/ স্টাফ প্রয়োজন তা উল্লেখ করুন।
৮) হাসপাতালে রোগীদের জন্য অথরাইজড বেড / শয্যা কত, গড়ে কতজন রোগী ভর্তি থাকেন। বেড অকুপেন্সী রেট কত?
৯) এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফির একটিভিটিস্ এর উপরও তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারেন।
১০) উপজেলা এবং সদর হাসপাতালে রোগীদের কি কি স্বাস্থ্যসেবা প্রভাইড করা হয় তার একটি চার্ট টাংগিয়ে রাখতে হবে। সেই সাথে আপনাদের সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরুন।

★★ইউএইচএন্ডএফপিও সাহেব উক্ত মিটিং-এ আরএমও সাহেব কর্তৃক বিভিন্ন খাতে সেবার পরিসংখ্যান উপস্থাপন শেষে উনার বক্তব্যে
* বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বা সদর হাসপাতালে বিগত এক বছরে চিকিৎসকরা কি ধরনের নিগ্রহের শিকার হয়েছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরে আপনারাও যে "কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায়" ভুগছেন তা উপস্থাপন করুন।

মান সম্মত স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন হতে আপনারা কি ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তা উপস্থাপন করুন। উদাহরণ স্বরূপ হাসপাতাল প্রিমিশিসে পুলিশের একটি সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের ফান্ড হতে সহযোগিতা চাওয়া যেতে পারে অথবা জেলা প্রাশাসকের ফান্ড হতে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব রাখা যেতে পারে।
স্থানীয় থানায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য না থাকার কারনে যদি হাসপাতাল নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন পুলিশ মর্নিং, ইভিনিং এবং নাইট প্রতি শিফটে অন্ততঃ দুইবার হাসপাতালে এসে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রাউন্ড দিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি মনিটর করবেন বা নজরদারিতে রাখবেন।

* হাসপাতালের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারীভাবে কতজন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত আছে তার উল্লেখ পূর্বক এ ক্ষেত্রে অবস্থার উন্নয়ন কল্পে আর কি কি করণীয় আছে তা নিয়ে আলোচনা করুন।

প্রত্যেক চিকিৎসক সাহেব ওনাদের কাছে ইউএনও এবং ওসি সাহেবের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করুন। যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ওনাদের সাথে যোগাযোগ করে ওনাদের সাহায্য সহযোগিতা পেতে পারেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

তাছাড়া যদি হাসপাতালে কখনো কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে তখন কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে তার রোড ম্যাপ আলোচনা করুন।

এভাবে সম্ভব হলে প্রতি মাসে "হাসপাতালের নিরাপত্তা" বিষয়ে উক্ত কমিটি মিটিং করে সার্বিক পরিস্থিতির ইভালুয়্যেশন করবেন। আর প্রতি মাসে সম্ভব না হলে দুই মাস অন্তর অন্তর অবশ্যই একবার মিটিং-এ বসতে হবে এবং সামগ্রিক ভাবে হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি মনিটরিং এবং মূল্যায়ন করতে হবে।।

আমরা যদি এখনই হাসপাতালে চিকিৎসক বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে না পারি তাহলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন বিপর্যয় নেমে আসবে। ইতিমধ্যে অনেক মেধাবী এবং প্রতিশ্রুতিশীল চিকিৎসক বাহিরের দেশে চাকুরী নিয়ে চলে যাওয়া শুরু হয়েছে এবং দিন যতই গড়াচ্ছে চিকিৎসকদের মাঝে দেশ ত্যাগ করার লাইন ততই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিরাপত্তাহীনতার কারণ ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মেধাবী স্টুডেন্টরা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে মেধাবী চিকিৎসকদের সংকট সৃষ্টি হবে।

এই মূহুর্তে চিকিৎসকদের প্রাণের দাবী - "নিরাপদ কর্মস্থল চাই"। এমতাবস্থায়, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করতে সরকারকে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক ডা. আজাদ হাসান

সিওমেক
২১তম ব্যাচ।

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়