Dr. Aminul Islam

Published:
2024-03-20 08:12:36 BdST

পর্ব-১স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নয়নের জন্য কিছু পরামর্শ


ডা. আজাদ হাসান ;বাংলাদেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন বিশেষজ্ঞ লেখক

 

ডা. আজাদ হাসান
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন বিশেষজ্ঞ লেখক
__________________

সময়ের সাথে সাথে মেডিক্যাল সাইন্সের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। সেই সাথে একদিকে যেমন নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটেছে তেমনি চিকিৎসা পদ্ধতিরও উন্নতি সাধিত হয়েছে।

বিগত ২৫ - ৩০ বছরে আমাদের দেশে প্রাইভেট সেক্টরে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এবং রোগ নির্নয়ের ক্ষেত্রে ইনভেস্টিগেশন ফ্যাসিলিটিজ ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশে কর্পোরেট হাসপাতাল কার্যক্রম করিচালনা করায়, কিউরেটিভ চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরে বেশ উন্নত চিকিৎসা এবং জটিল অপারেশন সম্পন্ন হচ্ছে।

এখন নির্ভুল ভাবে রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসার জন্য, এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ল্যাবরেটরী পরীক্ষা, রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, এন্ডেস্কোপিক্যাল টেস্ট, এনজিওগ্রাম পরীক্ষার সাহায্য নেয়া হয়। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশের জনগণের মাঝে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকদের কাছে তাদের প্রত্যাশাও অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।


কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সরকারী চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘ সূত্রীতা এবং গোষ্ঠী স্বার্থের কারণে সরকারী হাসপাতালে দক্ষ জনবল থাকলেও এক্ষেত্রে তেমন দৃশ্যমান উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এক্ষেত্রে রোগীদের প্রত্যাশা এবং সরকারী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা এবং তা নিরসনে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

বর্তমানে জনগণের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং বর্তমান বিশ্বায়নের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে আমাদের দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য খাতকে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত করতে হবে~
১) প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সেন্টার,
২) সেকেন্ডারী স্বাস্থ্যসেবা সেন্টার, এবং
৩) টারশিয়ারি স্বাস্থ্যসেবা সেন্টার।

প্রথমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র (Primary Health care centre) বলতে কি বুঝায় তা আলোচনা করছিঃ
আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রবেশদ্বার হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

বর্তমানে আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তিন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে যেগুলো "প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র" হিসেবে সার্ভিস প্রদান করে যাচ্ছে।
১) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,
২) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহ এবং
৩) কমিউনিটি ক্লিনিক সমূহ এর আওয়াতাভুক্ত হবে।

তবে এর বাহিরে প্রতিটি ইউনিয়নে "পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র" সমূহ "পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের" অধীনে একটি করে প্রতিষ্ঠান পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।

তবে বর্তমানে আমাদের দেশের সকল উপজেলায় "উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স" থাকলেও জেলা সদরে কোন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। কিন্তুএখানে প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যসেবা খাতে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশদ্বার হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সুতরাং আমি প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে "সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স" প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছি।

এবার আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা কেমন ভাবে সাজানে প্রয়োজন তা উপস্থাপন করছি।

১) কমিউনিটি ক্লিনিকঃ
তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক এর কাজ হবে প্রতিরোধ মূলক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা। যেমন: এটা বাচ্চাদের সাপ্তাহিক বা মাসিক টীকাদান কেন্দ্র, খাবার স্যালাইন বিতরণ, কৃমির ঔষধ ও ভিটামিন-এ কসাপ্সুল খাওয়ানো, মাস (Mass) পোলিও ভ্যাক্সিনেশন (এনআইডি-ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন ডে) হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। তাছাড়া সাধারণ জ্বর কিংবা সর্দি হতে যে সব ড্রাগ ওটিসি (ওভার দ্যা কাউন্টার) ড্রাগ পাওয়া যায়, সে সব ঔষধ বিতরণ করতে পারবে।
অধিকতর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে উক্ত রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ (রেফার্ড) করবেন।

প্রশাসনিক ভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক ইউএইচএন্ডএফপিও-র নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে।

২) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র: বর্তমানে গ্রাম্য জনগোষ্ঠীর জন্য এসব ক্লিনিক মূলত আউটডোর কেয়ার বেসিসে রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। এসব ক্লিনিক সমূহে একজন মেডিক্যাল অফিসারের অধীনে একজন মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট, একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন এমএলএসএস রয়েছে / থাকবে।

স্থানীয় রোগীরা যে কোন অসুস্থতার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসবেন। উক্ত হেলথ কেয়ার সেন্টারের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিবেন প্রয়োজন হলে রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করতে পারবেন।

প্রশাসনিক ভাবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ইউএইচএন্ডএফপিও-র নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে।

৩) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স:
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যে কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রথম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসবেন। তাছাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র অথবা কমিউনিটি ক্লিনিক হতে রেফার্ডকৃত রোগীরাও চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ব্যবস্থাঃ

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এডমিনিস্টেটিভ হেড হবেন ইউএইচএন্ডএফপিও। এবং ওনাকে এডমিনিস্ট্রেশন পরিচালনায় সহযোগিতা করবেন (ক)আরএমও (খ) এসএমও।

(৩) (ক) আরএমও মূলতঃ ক্লিনিক্যাল স্টাফ যেমনঃ ইনডোর, আউটডোর এবং ইমার্জেন্সিতে ডিউটিরত চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট, ফার্মাসিস্ট এবং অন্যান্য স্টাফদের দৈনন্দিন ডিউটি রোস্টার, ছুটি, উপস্থিতি ইত্যাদি বিষয় তদারকি করবেন এবং ইউএইচএন্ডএফপিও-কে অবহিত করবেন।
★ তাছাড়া হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তদারকি করবেন।
★ রোগীদের খাদ্য সরবরাহ তদারকি করবেন।
★ মেডিক্যাল স্টোর এবং ফার্মেসী তদারকী করবেন।

৩) (খ)সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার (এসএমও) হিসেবে একটি পোস্ট তৈরী করতে হবে।

★ উক্ত এসএমও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত ফিল্ড স্টাফ এবং টিএইচএন্ডএফপি-র মাঝে সমন্বয় করবেন
★ এপিডেমিওলজিকাল ও হেলথ ইনফরমেশন এর জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।
★ ইপিআই কার্যক্রম তদারকি করবেন।
★ টিবি - ল্যাপ্রসি ক্লিনিক পরিচালনা করবেন এবং চিকিৎসা প্রাপ্ত রোগীদের মনিটরিং করবেন।

মানব সম্পদ

এখানে আমি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ম্যানপাওয়ার কেমন হওয়া উচিৎ সেটা তুলে ধরছি।

মান সম্মত চিকিৎসা সেবা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে সব বিষয়ে স্পেশালিষ্ট (জুনিয়র কনসালটেন্ট) থাকবেনঃ
১) সার্জারী-০১ জন।
২) অবস্ এন্ড গাইনী-০১ জন।
৩) মেডিসিন- ০১ জন।
৪) এনেস্থিসিয়া -০১ জন।
৫) শিশুস্বাস্থ্য -০১ জন।
৬) ডেন্টাল -০১ জন।
৭) কার্ডিওলজি -০১ জন
৮) অর্থোপেডিক্স -০১ জন
৯) চক্ষু -০১ জন।
১০) ইএনটি -০১ জন।
১১) চর্ম এবং ভেনেরাল ডিজিজ -০১ জন।
[উল্লেখ্য জেলা সদর হাসপাতালের পদ পূরণ সাপেক্ষে ০৭ থেকে ১১ নং ক্রমিক নম্বরের পদে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।]

ইনডোর মেডিক্যাল অফিসারঃ
১) সার্জারী - ০১জন।
২) অবস্ এন্ড গাইনী -০২ জন।
৩) মেডিসিন -০১ জন।
৪) এনেস্থিসিয়া -০২ জন
৫) শিশুস্বাস্থ্য -০১ জন

আউটডোর মেডিক্যাল অফিসারঃ
১) সার্জারী - ০১ জন।
২) অবস্ এন্ড গাইনী- ০১ জন।
৩) মেডিসিন -০২ জন (পুরুষ, মহিলা ওপিডি)
৪) শিশুস্বাস্থ্য -০১ জন
৫) ডেন্টাল সার্জন=০১ জন

ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার=৪জন।

অন্যান্যঃ
১) মেডিক্যাল অফিসার- এনেস্থেসিয়া -০২ জন।
২) মেডিক্যাল অফিসার- রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং - ০২ জন।
৩) মেডিক্যাল অফিসার- প্যাথলজি -০১ জন।
৪) মেডিক্যাল অফিসার (জেনারেল)-০৩ জন

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সঃ ক্লিনিক্যাল সেবা।।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজ প্রাপ্য বা এক্সিজিবল করার লক্ষ্যে যে কোন ব্যক্তি অসুস্থ হলে প্রথমেই তাঁকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র তথা "উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে" আসতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা মূলত তিন (০৩) ধরনের চিকিৎসা সেবা পাবেন।
(১) ইমার্জেন্সী সার্ভিস।
(২) আউটডোর সার্ভিস।
(৩) ইনডোর সার্ভিস।

(১) ইমার্জেন্সি বিভাগঃ সিরিয়াসলি অসুস্থ রোগীরা যেমন~ রোড ট্রাফিক এক্সিডেন্টের রোগী, অন্যান্য এক্সিডেন্টের রোগী, মারামারিতে জখম বা আহত রোগী, ডেলিভারির রোগী, সিভিয়ার ডিজিজ, একিউট এজমা, সিভিয়ার নিউমোনিয়া, পয়জনিং, অজ্ঞান রোগী, কনভালশন বা খিচুনী, আন- কন্ট্রোল হাইপারটেনশন, আন- কন্ট্রোল ডায়বেটিস উইথ কিটোএসিডোসিস ইত্যাদি "ইমার্জেন্সি রোগীরা"
সরাসরি ইমার্জেন্সিতে আসবেন।

ইমার্জেন্সি বিভাগে ম্যান পাওয়ার কেমন হওয়া উচিৎ?

তিন (০৩) শিফটে ইমার্জেন্সী বিভাগ পরিচালনার জন্য তিনজন মেডিক্যাল অফিসার,তৎসংগে তিনজন মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট অথবা নার্স এবং তিনজন এমএলএসএস ডিউটিতে থাকবেন। তবে যেখানে জেলা সদরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সীতে বেশী রোগীর চাপ সেক্ষেত্রে প্রতি শিফটে দু'জন করে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দিতে হবে।

ইমার্জেন্সী বিভাগের কাজের ধরন কেমন হবে?

ইমার্জেন্সি বিভাগে আনীত রোগীকে "মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট" প্রথম এটেন্ড করবেন এবং রোগীর ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস রেকর্ড করে ইমার্জেন্সিতে দায়িত্বরত চিকিৎসককে ইনফর্ম করবেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক ঐ রোগীকে এটেন্ড করবেন এবং প্রথমে রোগীকে রিসাসিটেশন করবেন (প্রয়োজন সাপেক্ষে), প্রাথমিক চিকিৎসা দিবেন। এরপর রোগীর নিড বেসিসে (প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী) ক্যাটাগরাইজ করবেন। এবং এসব রোগীকে তিন ভাগে ভাগ করবেন।

(অ) যে সব রোগী লাইফ থ্রেটেনিং কন্ডিশনে তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কনসাল্টেন্টকে কল দিবেন অথবা সরাসরি জেলা সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে রেফার্ড করে দিবেন।
(আ) যে সব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন তাদেরকে হাসাপাতালে ভর্তি করে নিবেন।
(ই) একিউট কেসগুলো ম্যানেজমেন্ট দেয়ার পর রোগীর কন্ডিশন স্যাটেল করলে রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে ডিসচার্জ করবেন অথবা পরবর্তী চিকিৎসার জন্য ওপিডে আসার পরামর্শ দিবেন।

(২) আউটডোর সার্ভিসঃ

একজন রোগী আউটডোর রিসিপশন কাউন্টার হতে ওপিডি টিকেট সংগ্রহ করার পর মূলত মেডিসিন, সার্জারী, অবস্ - গাইনী বিভাগে ভাগ হয়ে নির্দিষ্ট ট্রায়েজ এরিয়ায় যেয়ে দায়িত্বরত নার্স দ্বারা প্রথমে ভাইটার ডাটা সমূহ পরীক্ষা করবেন এবং নার্স রোগীকে একটি সিরিয়াল নম্বর দিবেন, তবে সিরিয়াসলি সিক রোগীর ক্ষেত্রে নার্স সংশ্লিষ্ট ডক্টরকে ইনফর্ম করবেন এবং সেক্ষেত্রে উক্ত রোগীর ক্ষেত্রে সিরিয়ালের বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন নেই। অন্যান্য রোগীরা সিরিয়াল অনুয়ায়ী মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষে যাবেন।

ক) এমও ক্লিনিক।
খ) স্পেশালিষ্ট ক্লিনিক।

ক) এমও ক্লিনিকঃ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের "আউটডোর মেডিক্যাল অফিসার" ওপিডিতে আগত সকল রোগীকে ইভাল্যুয়েট করতঃ
(অ) ওনাকে প্রয়োজনী শারীরিক পরীক্ষা এবং ল্যাব টেস্ট করে চিকিৎসা দিবেন অথবা
(আ) প্রয়োজন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট স্পেশালিষ্ট এর কাছে রেফার্ড করবেন অথবা
(ই) রোগের ধরণ এবং রোগের সিভিয়ারিটি বিবেচনা করে রোগীকে উচ্চতর চিকিৎসা কেন্দ্রে রেফার্ড করবেন।

খ) স্পেশালিষ্ট ক্লিনিকঃ
স্পেশালিষ্টগণ প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ড রাউন্ড দিবেন এবং ইনডোরে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা দিবেন। তাঁকে এই কাজে একজন ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার, এবং উক্ত ওয়ার্ডে কর্মরত নার্সরা সহযোগিতা করবেন। ওয়ার্ড রাউন্ড শেষে তিনি ওপিডিতে যাবেন এবং ওপিডির এমও কর্তৃক রেফার্ড কৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিবেন।

সংশ্লিষ্ট স্পেশালিষ্ট ওপিডির রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিবেন, প্রয়োজন হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করবেন অথবা উন্নত চিকিৎসার জন্য উচ্চতর চিকিৎসা কেন্দ্রে রেফার্ড করবেন।

রেফারাল সিস্টেমঃ


রোগের ধরণ এবং রোগীর সিভিয়ারিটির উপর নির্ভর করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সেন্টার হতে অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য অধিকতর সুবিধা সম্বলিত উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা সেন্টারে বা সেকেন্ডারী হেলথ কেয়ার সেন্টারে রোগীকে রেফার্ড করতে হবে।
আবার সেকেন্ডারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হতে প্রয়োজন সাপেক্ষে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে অধিকতর উন্নত চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত টারশিয়ারি হেলথ কেয়ার সেন্টার বা স্পেশালিষ্ট হাসপাতালে রেফারাল সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে।

আর এজন্য একটি স্বচ্ছ রেফারাল সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে।
রেফারাল সিস্টেম প্রধানতঃ দুই (০২) ধরনের হবে।
১) ইমার্জেন্সিঃ
তাৎক্ষণিক (ইমিডিয়েট) ভাবে রোগী উচ্চতর সেন্টারের ইমার্জেন্সিতে রোগী রেফার্ড হয়ে যাবে।
২) রুটিনঃ
রুটিন রেফারাল আবার দুই (০২) ধরণের হবে।
ক) আর্জেন্টঃ এই ক্ষেত্রে রোগীরা রেফারালের দিন হতে এক সপ্তাহের মধ্যে এপয়েন্টমেন্ট পাবেন।
খ) রেগুলারঃ এই ক্ষেত্রে রোগীরা রেফারালের এক সপ্তাহ হতে চার (০৪) সপ্তাহের মধ্যে এপয়েন্টমেন্ট পাবেন।

স্বাস্থ্যবীমাঃ

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই মধ্যবিত্ত সমাজের। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ও মুদ্রাস্ফীতির সাথে তাদের আয়ের কোন সামঞ্জস্য না থাকায়, মাসিক খরচ নির্বাহ করতেই তাদের নাভীশ্বাস হতে হচ্ছে। এমতাবস্থায়, মধ্যবিত্ত পরিবারে সংসারের খরচ মিটিয়ে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করার মত সঞ্চয় কিংবা বাজেট আর থাকে না। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবা মানুষের একটি জরুরী সার্ভিস এবং ক্ষেত্র বিশেষে "লাইফ সেইভিং"-ও বটে। ফলশ্রুতিতে দেখা যাচ্ছে, রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য যেতে বাধ্য হচ্ছে এবং ক্লিনিকের বিল মেটাতে যেয়ে অনেক পরিবার সর্বশ্রান্ত হয়ে পড়ছেন।

আর এই কারণে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হেলথ ইন্সুইরেন্স সিস্টেম চালু করার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।

ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নঃ
এখানে আমি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ভৌত অবকাঠামো প্রসংগে কিছু কথা বলবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জন্মলগ্ন থেকে এগুলো ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ছিল। পরবর্তীতে সরকার এগুলো ৫০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মিত হলেও বিভিন্ন স্থানে দেখা গিয়েছে যে, ভবন নির্মাণের পর ওটির ইন্সট্রুমেন্ট ঠিক মত সাপ্লাই না দেয়ায় অথবা বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন টেন্ডার মোতাবেক যথাযথভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় বিল্ডিং হ্যান্ড ওভার হওয়া আটকিয়ে আছে। আর এসব বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসকদের কিছুই করণীয় নেই। এমতাবস্থায় সমস্ত হাসপাতাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন রিভিও করে যেগুলো এ ধরনের জটিলতায় আটকে আছে সেগুলো সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়েজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

আউটডোরের চিকিৎসা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রত্যেক জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং মেডিক্যাল অফিসারের জন্য স্বতন্ত্র রুমের ব্যবস্থা করতে হবে।

মেডিসিন, সার্জারী এবং অবস্-গাইনী রোগীরা মেডিক্যাল অফিসারের রুমে প্রবেশের আগে নার্স কর্তৃক ট্রায়েজ (বিপি, উচ্চতা, ওজন, তাপমাত্রা) কমপ্লিট করে ওপিডিতে প্রবেশ করবেন।

চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফসহ অন্যান্য হেলথ স্টাফদের বাসস্থান/কোয়ার্টার এর ব্যবস্থা করতে হবে।

জুনিয়র কনসালটেন্টদের জন্য হায়ার পারচেজ ভিত্তিতে ১৫০০ সিসির কার লোন, ড্রাইভার এলাউন্স এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ফুয়েল এলাউন্সের ব্যবস্থা করলে কর্মক্ষেত্রে গতিশীলতা আসবে বলে মনে করি।

আধুনিক ইনভেস্টিগেশন সুবিধা সম্বলিত ল্যাবঃ
ল্যাব. সুবিধা তথা ইনভেস্টিগেশন সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাব. টেকনিশিয়ান পদ সৃষ্টি ও পদায়ন করতে হবে। সেই সাথে একজন প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ এবং একজন মেডিক্যাল অফিসার (প্যাথলজি) পদায়ন করতে হবে।

রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের জন্য একজন স্পেশালিষ্ট, একজন এমও এবং অন্ততঃ ৫ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান এর পদ সৃষ্টি করতে হবে।

অফিস টাইমের পর ইমার্জেন্সি রোগীর জন্য ইমার্জেন্সি ব্লাড টেস্ট, এক্স-রে, আল্ট্রসনোগ্রাম করার ব্যবস্থা করতে হবে।

স্টাফ নেই কিংবা যন্ত্রপাতি নষ্ট কিংবা রিএজেন্ট নাই তাই টেস্ট করা সম্ভব নয় ~ জনগণ এখন আর এ জাতীয় কথা আর শুনতে চায় না। তাই সে জন্য লজিস্টিক সাপ্লাই বাড়াতে হবে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

পরিশেষে বলবো, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং নার্সসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।। তাহলেই কেবল মান সম্মত স্বাস্থ্য সেবা ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হবে।
চলবে

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়