ডা শাহাদাত হোসেন
Published:2023-01-08 06:17:45 BdST
সরকারী চাকুরীর বিধান এবং নক্ষত্রের পতন
ডা. আজাদ হাসান
ডা. আজাদ হাসান
___________________________
গত মাসে আমাদের ব্যাচের অনেকেই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বলা যায় অনেকটা একসাথে কয়েকজন বয়স জনিত কারণে সরকারী চাকুরী হতে রিটায়ার্ড করেছে। এটাই সরকারী চাকুরীর নিয়ম।
এমন সময় সরকারী চাকুরী হতে আমাদের এসব বন্ধুদের বিদায়ের ঘন্টা বাজলো যখন আমাদের বন্ধুরা দেশ ও জাতিকে অনেক বেশী কন্ট্রিবিউট করার মত অবস্থানে পৌছালো তখনই অবসরে যাওয়া - এ যেন নক্ষত্রের পতনের মতো।
আমাদের দেশে চিকিৎসা পেশায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা, প্রমোশন পাওয়া এসব বিষয় গুলো বেশ দীর্ঘসূত্রীতার ব্যাপার। তাই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারী চিকিৎসক রিটায়ার্ড করলে তাতে একদিকে যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অপর দিকে মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রেও অপরিসীম শূন্যতার সৃষ্টি হবে। বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু রয়েছে। এই সব কোর্স সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের। বলা বাহুল্য মেডিক্যাল কলেজের জন্য একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক কখনো রাতারাতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মেডিক্যাল কলেজের এক একটি পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে বিভিন্ন ধাপে পিজি কোর্সের স্টুডেন্টরাও থিসিস এবং ডিজারটেশন ইত্যাদি একাডেমি একটিভিটিস নিয়ে এক একজন প্রফেসরের আন্ডারে সংযুক্ত থাকেন। তাই হঠাৎ করে একজন প্রফেসর রিটায়ার্ড করলে সংশ্লিষ্ট পিজি স্টুডেন্টকে বিরাট সংকটে পড়তে হয়। তাই মেডিক্যাল কলেজের পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স এর ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে এবং হেলথ ক্যাডার একটি টেকনিক্যাল ক্যাডার বিবেচনা করে এদেশের জনগণ যাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছ থেকে আরো অধিকতর স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে সেই বিবেচনা থেকে আমি চিকিৎসকদের অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা এবং চাকুরীকাল বিষয়ে কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করছি।
আমার মতে~
১) মেডিক্যাল কলেজের একজন প্রফেসর এর পেনশনের বয়স সীমা ৬৫ বছর হওয়া উচিৎ। অথবা একজন চিকিৎসক অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেলে তিনি পদন্নোতি প্রাপ্তির সময় হতে পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের জন্য চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবেন।
২) অনুরূপ ভাবে মেডিক্যাল কলেজের একজন এসোসিয়েট প্রফেসর এর পেনশনের বয়স সীমা ৬৪ বছর হওয়া উচিৎ। অথবা একজন চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেলে তিনি পদন্নোতি প্রাপ্তির সময় হতে পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের জন্য চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবেন।
৩) অনুরূপ ভাবে মেডিক্যাল কলেজের একজন এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এর পেনশনের বয়স সীমা ৬৩ বছর হওয়া উচিৎ। অথবা একজন চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেলে তিনি পদন্নোতি প্রাপ্তির সময় হতে পরবর্তী ৩ (তিন) বছরের জন্য চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবেন।
উল্লেখ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বা স্বাস্থ্য বিভাগে প্রশাসনিক ভাবে যারা দায়িত্বশীল পদে যেমন ডিজি হেলথ, ডিজি মেডিক্যাল এডুকেশন, এডিজি হেলথ, এডিজি মেডিক্যাল এডুকেশন, ডাইরেক্ট এডমিন (হেলথ, হেলথ এডুকেশন) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাকুরীর মেয়াদ অনুরূপ ভাবে যথাক্রমে ৬৫, ৬৪ এবং ৬৩ বছর হওয়া উচিৎ।
তাছাড়া সুপারস্পেশালিস্ট বিষয় যেমন নিউরো - সার্জারী, স্পাইনাল সার্জারী, নিউন্যানাল আইসিইউ স্পেশালিষ্ট, পেডিয়াটিক্স সার্জারী, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিশেষজ্ঞ, বিশেষায়িত বিষয়ে এনেস্থিসিয়া স্পেশালিষ্ট হিসেবে কর্মরত বা পদোন্নতি প্রাপ্ত কনসাল্টেন্টদের বয়স সীমাও ৬৩ বছর বয়স পর্যন্ত বৃদ্ধি করা উচিৎ।
এবার একটু ভিন্ন প্রসংগে আলোচনা করতে চাই। আমাদের দেশের অনেক চিকিৎসক আছেন যারা বাংলাদেশের বাহিরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় স্বীয় মেধা এবং যোগ্যতার গুণে উচ্চতর পদে আছেন। ওনারা দেশের বাহিরে থাকলেও বাংলাদেশের প্রতি সবারই রয়েছে নাড়ীর টান। উনি হয়তঃ এককভাবে কিংবা অ্যাট বেস্ট উনি হয়ত ওনার ফ্যামিলিসহ বাহিরে স্যাটেল করে থাকতে পারেন। কিন্তু ওনার আর সব আত্মীয় স্বজনরা কিন্তু এদেশে রয়ে গিয়েছেন। তাই এদেশের মেডিক্যাল শিক্ষার উন্নয়নে কন্ট্রিবিউট করার মাধ্যমে ওনি কিন্ত এদেশের জনগণের চিকিৎসা সেবার ভাগ্যোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। এবং দেশের প্রতিও দায়ভার হতে মুক্তি পেতে পারেন। তাই সবার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে তাঁদের প্রতি অনুরোধ, তাঁরাও বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে চেষ্টা করতে পারেন। যেমনঃ
(১) আমাদের দেশ হতে চিকিৎসকদের জন্য বিদেশে উন্নত ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে এই দেশে চিকিৎসা পেশায় এক্সপার্ট তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
(২) বিশেষায়িত বিষয়ে পিজি কোর্সে প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকদের জন্য পিজি স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
(৩) আমাদের দেশের পোস্ট - গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি বহিঃ বাংলাদেশে রিকগনিশন এর জন্য বিএমডিসি এবং বিসিপিএস কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে বিদেশী দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউন্টার পার্টের সাথে যোগাযোগ এবং আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
পরিশেষে বলবো, আমাদের দেশ ছোট, কিন্তু আমাদের রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদ। তাই আমাদের যে কোন পরিকল্পনা হওয়া উচিৎ সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা। তাই কেবল বয়সের বিবেচনায় একজন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষককে (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক) চাকুরী হতে অবসরে না পাঠিয়ে তাঁর থেকে কিভাবে ম্যাক্সিমাম সার্ভিস পাওয়া যায় তার উপায় খুঁজে বের করা।।
ডা. আজাদ হাসান
সিওমেক-২১
আপনার মতামত দিন: