ডা শাহাদাত হোসেন
Published:2022-09-02 18:20:06 BdST
যুক্তি কথার মুক্ত মতঔষধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে দুটি কথা
ডা. আজাদ হাসান
ডা. আজাদ হাসান
__________________
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র জনাব ফজলে নূর তাপস বলেছেন, হাসপাতাল সংযুক্ত ঔষধের দোকান ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা
দেখছেন না।
এই কথার ব্যাখ্যাও দিতে যেয়ে মেয়র মহোদয় বলেছেন, '‘হাসপাতালে সংযুক্ত ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা আমরা দেখি না। কারণ, যেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবারে সুনির্দিষ্ট সময়ের পর, শুক্র-শনিবার এবং রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে? আগে তো চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই তো চিকিৎসা সেবার জন্য ওষুধের দোকান খোলা রাখতে হবে।’' [সূত্রঃ প্রথম আলো।। ৩০ আগস্ট ২০২২]
এ প্রসংগে আমি বলতে চাই, শুক্রবার এবং শনিবার এবং রাতে ডাক্তার পাওয়া যায় না কথাটা সঠিক নয়।
সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের ডিউটি সরকারী হাসপাতালের নিয়ম নীতির আলোকে মূল্যায়ন করতে হবে। বেসরকারী হাসপাতালের সাথে মিলালে চলবে না।
এখানে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রধানতঃ তিন (৩) ধরনের সার্ভিস প্রচলিত আছে।
১) ইমার্জেন্সী - ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এবং সার্বক্ষনিক চিকিৎসক এবং নার্স উপস্থিত থাকেন।
২) অন্তঃবিভাগ - অন্তঃবিভাগের রোগীদের চিকিৎসার জন্য ছুটির দিনগুলোতে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতা -লে এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার এবং আইএমও গণ দায়িত্ব প্রাপ্ত থাকেন। তবে জরুরী প্রয়োজনে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট বিভাগের কনসালটেন্ট কিংবা প্রফেসরের সাথে কন্সাল্ট করে থাকেন। সরকারী ছুটির দিনগুলোতে কনসাল্টেন্ট বা প্রফেসর সাহেবরা রুটিন রাউন্ড না দিলেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার কিংবা আইএমও গণ ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে ক্রটিক্যাল রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল কনসালটেন্ট বা প্রফেসর সাহেবদের সাথে আলোচনা করে থাকেন।
৩) বহিঃবিভাগঃ বহিঃবিভাগে মেডিক্যাল অফিসার, আরএস এবং ক্ষেত্রে বিশেষে কনসালটেন্ট বা এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর/ এসোসিয়েট প্রফেসর/প্রফেসর সাহেবগণ ওয়ার্কিং ডে-তে রুটিনলি রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বহিঃ বিভাগে সাধারণত কোল্ড কেস ট্রিটমেন্ট করা হয়ে থাকে। বিশ্বের সব দেশেই হাসপাতা -ল সমূহে সপ্তাহে একদিন বহিঃবিভাগ সরকারী ছুটি ভোগ করে, এমন কি সৌদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশে সপ্তাহে দুই দিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ছুটি পেয়ে থাকে।
তাছাড়া অবস্ এন্ড গাইনী বিভাগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা চালু থাকে। জেলা হাসপাতাল গুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সার্বক্ষণিক ভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সর্বদা সেখানে সার্বক্ষণি -ক চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
সুতরাং শুক্রবার এবং শনিবারে হাসপাতালে চিকিৎসক -রা হাসপাতালে থাকেন না। কথাটি সঠিক নয়। বরং সরকারী বিধি বিধান মেনেই জরুরী বিভাগ এবং অন্তঃ বিভাগের চিকিৎসা অব্যাহত রেখে চিকিৎসকরা শুক্র - বার সরকারী ছুটি কাটান এবং অন্যান্য পেশার লোকদের চেয়ে সপ্তাহে একদিন (শনিবার) অতিরিক্ত ডিউটি করেন এটাই বাস্তবতা।
এবার আশা যাক, হাসপাতালের বাহির হতে ঔষধ ক্রয় প্রসংগে।
প্রথম কথা হলো, হাসপাতাল এবং ফার্মেসী মানুষের জীবন মরণের সাথে সম্পর্কিত। তাই দেশ কাল পাত্র ভেদে হাসপাতালের মতো ফার্মেসীর সার্ভিসও জরুরী সেবা বা সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের দেশে সরকারী হাসপাতালে সব সময় সব ঔষধ সাপ্লাই থাকে না, আবার কখনো কখনো ঔষধের ইন্ডেন্ট পাঠানোর পরও সাপ্লাই প্রসেসের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ইমার্জেন্সী ভিত্তিতে রোগীকে বাহির হতে ঔষধ কিনতে হয়। সুতরাং কার যে কখন কোন ঔষধ প্রয়োজন হবে, তা বলা মুশকিল।
তৃতীয়তঃ সব ফার্মেসী কিন্তু ২৪ ঘন্টা চালু থাকে না। প্রতিটি হাসপাতালের সামনে হয়ত একটি বা দুটি নির্দিষ্ট ফার্মেসী আছে যেগুলো ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। সুতরাং এই দু' একটি ফার্মেসী খোলা থাকলে সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে না, সেটা বলা বোধ করি সঠিক হবে না।
অবশ্য মাননীয় মেয়র মহোদয় এ কথাও বলেছেন যে, নির্ধারিত সময়ের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন করতে হবে। সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রম কেন অত্যাবশ্যক, তার পক্ষে যথাযথ যুক্তি দেখাতে হবে। পরে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনী -য়তা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রমকে বর্ধিত সময় দেওয়া হবে।
সরকারী হাসপাতালে যেহেতু রোগীদের শতভাগ ঔষধ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না, সুতরাং যতদিন পর্যন্ত সরকারী হাসপাতাল হতে রোগীদের শতভাগ ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, ততদিন পর্যন্ত সীমিত সংখ্যক ফার্মেসী ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার অনুমোদন দান করার বিষয়টি পুনঃ বিবেচনা করার অনুরোধ রইলো।।
সেই সাথে আমি মাননীয় মেয়র মহোদয়কে অনুরোধ করবো, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আওয়াতাধীন যে সব বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আছে, সে সব হাসপাতালে ভর্তি কৃত রোগী যাতে সুলভ মূল্যে এবং কোন রকম হয়রানী ছাড়া সহজে ২৪ ঘন্টা ঔষধ পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে প্রতিটি হাসপাতাল প্রিমিসেস এর অভ্যন্তরে সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগে একটি করে ফার্মেসী স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারেন। এই প্রস্তাবটিও সক্রিয় ভাবে বিবেচনার অনুরোধ রইলো।।
আপনার মতামত দিন: