SAHA ANTAR

Published:
2022-08-31 20:02:15 BdST

চিরতরুণ মুখ ডা.সাইফুদ্দিন আহমেদের অকাল মৃত্যুতে শোক ও কান্নাভরা স্মৃতিচারণ


প্রিয়তম সন্তানের সঙ্গে প্রয়াত ডা. সাইফুদ্দিন আহমেদ

 


ডেস্ক
__________________

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তনী ও চিরতরুণ মুখ
ডা. সাইফুদ্দিন আহমেদের অকাল প্রয়াণে শোকের চাদরে মোহ্যমান সিএমসি ও বৃহত্তর নোয়াখালি ফেনী চট্টগ্রামের চিকিৎসক সমাজ। তাদের লেখা স্মৃতি চারণে শোক কষ্ট ও কান্না।

ডা. সুমন চৌধুরী লিখেছেন ,
·

গতকাল থেকেই মনের ভেতরটায় বেশ অস্থির লাগছে। যার সাথেই আলাপ করি, সবার অবস্থা একই। নিজের মাঝের স্ট্রেস কমাতে, জমে থাকা কিছু কথা, কিছু টুকরো স্মৃতি ভাগ করার তাগিদ অনুভব করছি।
আজ মনে পড়ে, সেই বহুবছর আগের কথা, যখন সাইফদের ব্যাচ ক্যাম্পাসে আসলো। আমরা তখন চতুর্থ বর্ষে। একসময় যথারীতি ওদের নবীন বরণের আয়োজন শুরু হলো। বিভিন্ন ব্যাচের নবীন বরণ ছাড়াও, বছরজুড়ে সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন চলত।
তখন ক্যাম্পাসের গুটিকতক দালানে থাকা ফাঁকা জায়গায় রিহার্সাল হত, তার মাঝে ছিল ছাত্রসংসদের ভেতরটা, আপার লেকচার গ্যালারির সামনের জায়গা, তার দু'পাশে এনাটমি ও অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের সামনের করিডোর ইত্যাদি।
সেখানে দেখতাম সাইফ আসত, সংগঠকের মত নিজ ব্যাচের বাকিদের আসা-যাওয়া তদারকি করত। সাথে ছিল ওরই ব্যাচমেট হিমেল; পুনম, পুলক এদেরকেও দেখতাম। ওরা গানের দিকে ছিল। আমরা কয়েকজন সিনিয়রের তত্ত্বাবধানে তখন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিভিন্ন দিকগুলো পরিচালিত হত; আমার দায়িত্ব ছিল নাটকের দিকটা দেখা।
অগ্রজ ব্যাচ হিসেবে আমাদের তারা অনুসরণ করত, আমদের সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা তাদের অনুপ্রাণিত করত---এসবই তখন ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার।
তখন থেকেই সাইফের মাঝে ব্যাচ, নিজের মেডিকেল কলেজের সুনাম, ইত্যাদির ব্যাপারে নেতৃত্বসুলভ আচরণ লক্ষ্য করেছি। সে সিনিয়রদের বেশ শ্রদ্ধা করত; কথায়, আচরণে অন্য অনেকের মত কোনও ঔদ্ধত্য ছিল না।
এর বেশ অনেক বছর পর, সাইফ ইনবক্সে নক দেয়। ওর ইচ্ছে, চমেক পোস্ট গ্রাজুয়েট এসোসিয়েশন থেকে একটা সায়েন্টিফিক ম্যাগাজিন বের করা। তাতে আমি যেন লেখা দেই, তাকে সাহায্য করি। প্রথম সংখ্যার ডিজাইন, লেখা ইত্যাদি নিয়ে সে বেশ চিন্তিত ছিল। ওর কথায়, "ভাই, আপনাদের হেল্প চাই। ভাই, বুদ্ধি দেয়ার মানুষ কম, টাইনা ধরার মানুষ বেশী"। আমাকে ডিজাইন পাঠানোর কথাও বলল।
এরপর, নানান ব্যস্ততায় সময় কেটে যায়। একসময় চলে আসে কোভিড মহামারী। হয়ত চাপা পড়ে যায় তার ইচ্ছের বাস্তবায়ন।
জাতীয় নানান দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে গেলে ওর সাথে দেখা হত। মুখে হাসি নিয়ে সালাম দিত, আশাপাশে থাকত আরেক স্নেহভাজন বাদল। বাদল ফেইসবুকে আমার লেখালেখি নিয়ে উচ্ছ্বসিত কথাবার্তা বলতোই, একেবারে নিয়ম করে। আর তাতে স্মিত হেসে সায় দিত সাইফ।
সাইফ আমার দেখা অন্যতম প্রাজ্ঞ, সাহসী, বিচক্ষণ, আধুনিক, প্রগতিশীল মানসিকতা আর প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এক নেতা। সমসাময়িক অনেকের মাঝে একইসাথে এসব গুনের উপস্থিতি বিরল। চমেক নিয়ে তার ছিল অনেক স্বপ্ন, দূরদৃষ্টি। খুব কাছাকাছি না থেকেও যেখানে আমি তা টের পেতাম, সেখানে ওর আরও ঘনিষ্ঠদের কথা সহজেই অনুমেয়।
৬০ তম সিএমসি ডে'র পর আর বড় পরিসরে কোনও আয়োজন না হওয়ায় দু'জনেই ছিলাম হতাশ। এ নিয়ে ইনবক্সে আলাপ করতাম। এই প্রসঙ্গে সে আরও সিনিয়র নেতাদের ভূমিকা ঘিরে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করত।
জুনিয়রদের নানান সমস্যায় নেতৃত্বসুলভ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসাটাই ছিল ওর স্বভাবজাত। অনেকেই তাদের লেখায় সেটা উল্লেখ করছে।
জীবতকালে একেবারে শেষের দিকে, নিজের ক্যারিয়ার অর্থোপেডিক সার্জারি নিয়ে সসবকিছু গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছিল, তা বুঝতে পারতাম। ব্যক্তিগত জীবনের নানান চাপ সামলে, ক্যাম্পাস রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা, চারটেখানি কথা নয়। পোস্ট গ্রাজুয়েট ডাক্তারদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাববার মত সংগঠন অন্যান্য মেডিকেল কলেজে তেমন দেখাই যায় না। আর সে ছিল সেই এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, যা অন্যান্য ক্যাম্পাসের জন্য অনুকরণীয়।
ক্যাম্পাসের কোনও এক জায়গায় সৃজনশীল, নতুন কিছু হবে, আর তাতে সাইফ জড়িত থাকবে----যেন এমনটাই ছিল রেওয়াজ।
অগ্রজ ও সমসাময়িক তো বটেই, ক্যাম্পাসের অনাগত সকল ব্যাচ তার অনুপস্থিতি খুব তীব্রভাবে অনুভব করবে।



লোক সেবী ডা. সাইফ উদ্দিন আহমেদের অকাল প্রয়াণে গভীর শোক জানিয়েছেন ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর ডা সুলতানা আলগিন। তিনি প্রয়াতের
শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি

গভীর সমবেদনা জানান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে এক বার্তায় বলা হয়,
আমরা গভীরভাবে শোকাহত

অকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ৪৪তম প্রজন্ম এমবিবিএস ও স্নাতকোত্তর এম এস (অর্থোপেডিক্স) কোর্সের প্রাক্তন মেধাবী শিক্ষার্থী ডা. সাইফ উদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থপেডিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্টার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

ডা. সাইফ ছিলেন একজন প্রকৃত মহৎপ্রাণ সদা হাস্যজ্জল ও তরুণ মেধাবী অর্থোপেডিক সার্জন । তাঁর মৃত্যু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অপূরণীয় ক্ষতি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সকল চিকিৎসক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে।

 

 

অধ্যাপক ডা. বিমল দাস লিখেছেন ,
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার কৃতিসন্তান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র, আমাদের প্রিয় ছোট ভাই, তরুণ চিকিৎসক ডাক্তার সাইফুদ্দিন আহমেদ এর অকাল অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত, বাকরুদ্ধ।
ফেনী বিএমএ,র পক্ষ থেকে উনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়