ডা. আহমেদ ইমরান কবির দিপু
Published:2022-07-04 18:46:38 BdST
ডিফিকাল্ট! নিজের ভুল ডায়াগনোসিসেই অটল থাকার মাশুল: এফসিপিএস পাশ করার কাহিনি
ডা. আহমেদ ইমরান কবির দিপু
ডা. আহমেদ ইমরান কবির দিপু
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার,
এন আই ডি সি এইচ,
মহাখালী,ঢাকা
__________________________
সিএমএইচ এ নামলাম সকাল ৮ঃ০০টায়।এর আগে কখনো এই হাসপাতালে আমি আসিনি।নাস্তা করার জন্য ক্যান্টিন খুঁজে পেতে সময় লাগলো।পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি ওই দিনের সব ফেভারিট ক্যান্ডিডেট আমার সেন্টারে এই এসে হাজির।দুই সুন্দরী আপুও আছেন।মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো।কথিত আছে সুন্দরী আপু থাকলে সাধারন ক্যান্ডিডেটদের নাকি পাস করা খুব ডিফিকাল্ট হয়ে যায়।যাই হোক পরীক্ষায় ডাক পড়লো।কিন্তু বিধি বাম।আমি প্রতিবার যে কারনে পরীক্ষা খারাপ দেই এইবারও লং কেইসে তার ব্যতিক্রম হলো না।এক্সামিনারের সাথে একমত না হয়ে নিজের ডায়াগনোসিসে অটুট থাকা।দুইবার ডায়াগনোসিস চেঞ্জ করার সুযোগ দেয়ার পরেও নিজের ভুল ডায়াগনোসিসেই অটল থাকার মাশুল দিতে হলো।দুই আপুসহ আমাদের কারো পরীক্ষা ভালো হয়নি।
এরপর দুপুর ২ টায় ভাইবা।সময় খুব বেশি নেই।এতো গরম পড়েছে!!মনে হচ্ছে ব্রেইনটা গলে বের হয়ে আসবে।কোন সিএনজি নেই।কোন কিছু চিনিও না এখানে।একটা রিক্সা ভাড়া করে বাসস্ট্যান্ডের খোঁজে নামলাম।দেরী হলে হোক।পরীক্ষা যা হয়েছে তাতে কোন আশা নেই।বিসিপিএসে আসতে আসতে ১০ মিনিট লেইট হয়ে গেল।কিন্তু এসে ভাইবা শুরু হতে এখনো অনেক বাকি।পেট ভরে ভাত খেলাম।আগামীকাল ইভিনিং নাইট টানা ডিউটি করতে হবে।মন আর পরীক্ষায় নেই।ক্যান্টিনে মহিউদ্দিন ভাই,শারমিনের সাথে কথা হলো।উনাদের পরীক্ষা ভালো হয়েছে।মনটা কেন যেন আরো খারাপ হয়ে গেলো।প্রতিবার আমার পরীক্ষা একই কারনে খারাপ হচ্ছে।আমি নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করে গিয়েছি।কিন্তু লাভ হচ্ছে না।আজ এনআইসিভিডি,কাল এনআইডিসি এইচ,পরশু ডি এম সি/মিটফোর্ড আর কতো??এক লং কেইস আমাকে বার বার ডুবাচ্ছে।আমার প্রেজেন্টেশন ভালো,দ্রুত ইংরেজী বলতে পারি, টাইম মেইন্টেন করতে সমস্যা হয়না।কিন্তু বার বার ক্রসিংয়ে সমস্যা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ভাইবার কল আসলো।আমাদের ৮ জনকে একটি আলাদা কনফারেন্স রুমে বসতে দেয়া হলো।এক্সামিনার দুজন কি ধরবেন আমি মোটামুটি আইডিয়া করতে পারছি।কিন্তু এখন দেখে আর লাভ নেই।যা হবার হয়ে গেছে। আমার সাথে সবার পরীক্ষা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও উনারা হাল ছাড়েননি।পিড়ছেন তো পড়ছেন!!আমার ভাইবাটা অসাধারন রকম ভালো হবার কারনে আরো খারাপ লাগছে।
মোবাইলটা বন্ধ করে রাখলাম।বের হয়ে কি মনে করে মহাখালী টু ফার্ম গেট একটা রিক্সা নিলাম।ভাবছিলাম আমার এফসিপিএস এর পেছনে ছোটা ঠিক হয়নি।ডিপ্লোমা, এম ফীলে এরকম পরিশ্রম করলে এতোদিনে ঠিকই বের হয়ে যেতাম।আরো একটি ভুল ছিলো মেডিসিনে পড়াশুনা করা। পাসের রেট কেন যেন বরাবরই কম।ফার্ম গেটে এসেই বাসে উঠে বসলাম।জ্যাম আর জ্যাম।বাসায় ফোন করবো।আসতে দেরী হবে।মোবাইল অন করতেই দেখলাম আমার মোবাইলে গোটা তিরিশেক মিসকল এলার্ট।এরা গত সেশনেও পরীক্ষার পর ফোন দিয়ে বিরক্ত করেছে।এটা খুবই খারাপ কাজ।রেজাল্ট হলেতো আমিই জানাবো।
এর মধ্যে দেখি বিসিপিএস থেকে একটি ম্যাসেজ এসেছে।আরে এ কিভাবে সম্ভব!!!নাহ, বিসিপিএস থেকেই এসেছে।মহিউদ্দিন ভাই এর ফোন আসলো।দিপু ভাই আপনি পাস করেছেন।বিসিপিএস থেকে যিনি আমাকে জানিয়েছেন তিনি কয়েকবার আপনাকে ফোন করেছেন।কিন্তু মোবাইল বন্ধ ছিলো বলে আপনাকে রিচ করতে পারেনি। আপনি এই নাম্বারে ফোন করেন।ততক্ষনে অবশ্য বিসিপিএস এর ওয়েবসাইটে রেজাল্ট চলে এসেছে।তার মানে এর মধ্য ৩০ জন আমাকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছে।
আমি বাসায় ফোন করলাম।হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করছি।পুরো রাস্তা।সে কান্না আর শেষ হয়না।বাসের সবাই মনে করছে আমার কোন নিকটাত্মীয় মারা গেছে।দুই সমবয়সী সহযাত্রী ভাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।কোন কারন ছাড়াই আমাকে স্বান্তনা দিতে লাগলেন।কাঁদতে কাঁদতে শাহবাগ চলে এলো।
আমি রাস্তায় বারডেমের সামনে ফুটপাত থেকে একটি মাম পানির বোতল কিনে চোখ মুখ ধুয়ে ডি এম সি লাইব্রেরীর দিকে ছুটে চললাম।
আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে সফলতা একেবারে কম নয়।কিন্তু কোন টাই এফসিপিএস এর মত নয়।প্রতিটি ফেলোর সফলতার পেছনে কত ত্যাগ আর আবেগ জড়িত আছে তা আরেকজন ফেলো ছাড়া কেউ বুঝবে না।
এরই মধ্য ৫টি বছর অতিবাহিত হয়েছে।কিন্তু অনুভুতিটা একটুও ফিকে হয়নি।কাল থেকে সমাবর্তন। সবার দোয়ার আবেদন রইলো।যেন এই পাস সবার কল্যাণ বয়ে আনে।
ডা. আহমেদ ইমরান কবির দিপু
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার,
এন আই ডি সি এইচ,
মহাখালী,ঢাকা।
আপনার মতামত দিন: