Dr. SAYEED ENAM
Published:2022-06-25 06:40:03 BdST
'সামসুর স্যার ইজ কারেক্ট, এই দেখুন ২/৩ টা লিম্ফনোড'
ডা. সাঈদ এনাম
_____________________
বেশ কয়েক বছর আগে এক প্রকার নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিয়ে কুলাউড়ার বাসা থেকে আমার মেয়ে'কে সিলেট নিয়ে যাই এপেনডিসেকটমি করার জন্যে। তিন দিন হয়ে গেলো তার পেটে ব্যাথা কমছেই না।
শিশু সার্জারীর অধ্যাপক (এসোসিয়েট) ডা. ময়না স্যারের নাম্বারটি কোনমতে পাই। উনাকে ফোন করি। তখন বেলা দুইটা, মেয়ে তিন দিনের পেটে ব্যাথায় প্রায় কাতর। NPO করা হয়েছে সকাল থেকে।
ডাক্তার পরিচয় পেয়ে স্যার বললেন, 'আপনি এখন কোথায়?'।
আমি বললাম, 'সিলেট রিকাবী বাজার আসছি মাত্র'।
তিনি বললেন, 'আশে পাশে কোন একটা ক্লিনিকে অপেক্ষা করুন। ও আপাতত NPO থাক। আমি একটু পরই আসছি। বাসায় যাবার আগে আপনার মেয়েকে দেখে যাবো'।
আমি আইডিয়াল ক্লিনিকে মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষারত।
সবার ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস ওর এপেন্ডিসাইটিস। আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, যাই হোক এপেন্ডিসেকটমি'টা করেই ফেলবো।
হাসপাতাল থেকে স্যার দুপুরের খাবার খেতে বাসায় গেলেন না, ক্লিনিকেই আসলেন। ডিউটি ডাক্তার দ্রুত স্যারকে নিয়ে ইমার্জেন্সি ওয়েটিং রুমে। অনেকক্ষণ ছোট মেয়েকে দেখলেন।
এরপর বললেন, 'এটা এপেন্ডিসাইটিস না। সম্ভবত ভাইরাল ইনফেকশন এ লিম্ফনোড বড় হয়েছে। হাতে এমনই লাগছে'।
ভিজিট নিলেন না। একটা আল্ট্রাসাউন্ড করানোর জন্যে বললেন।
সিলেটের সবচেয়ে অভিজ্ঞ একজন সনোলজিস্ট স্যারের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত আলট্রাসনো করলাম।
সনোলজিস্ট ডেকে নিয়ে বললেন, 'এটা এপেন্ডিসাইটিস না'।
আমি বললাম, 'আমাদের সবার ধারণা এপেন্ডিসাইটিস কিন্তু প্রফেসর ময়না স্যার ভিন্ন মত দিলেন। তিনিও আপনার মতোই বলছেন'।
সনোলজিস্ট স্যার বললেন, 'সামসুর স্যার ইজ কারেক্ট, এই দেখুন ২/৩ টা লিম্ফনোড'। আমি কালার ছবি দিয়ে দিচ্ছি আপনি স্যার কে নিয়ে দেখান'।
সনোলজিস্ট স্যার ও ভিজিট নিলেন না। বরং ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ম্যানেজার সাহেব'কে ডেকে নিয়ে সনো ফিটা ফেরত দিতে বললেন।
রিপোর্ট নিয়ে আমি স্যারের চেম্বারে ওয়েট করছি। সন্ধ্যা ৭ টা। মেয়েটির পেটে তখন ও ব্যাথা। স্যার সব রিপোর্ট দেখলেন এবং বললেন, 'যা ভেবেছিলাম তাই। টেনশনের কোন কারন নেই'।
আমার মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে জিগ্যেস করলেন, ' মা'মনি ক্ষিধে পেয়েছে তাইনা? বাবা খেতে দিচ্ছেনা সারাদিন ?'
মেয়ে মাথা নেড়ে ইশারা করলো 'হ্যা'। ব্যাথায় তার চোখ ছলোছল।
তিনি বললেন, 'যাও এখন থেকে তোমার যা ইচ্ছে খাও'। মেয়ে বেজায় খুশি।
আমি মেয়েকে নিয়ে সোজা একটা রেস্ট্রুরেন্ট এ।
মেয়েটি সকাল থেকে NPO. সাথে আমিও NPO. মেয়ে খাচ্ছেনা, বাবা কি করে খাবেন।
দু'জনে পেট ভরে খেলাম।
সাথে আমার শ্বশুর ছিলেন, তাঁর হাতে তাসবীহ। তিনি বললেন, 'বড় ভালো ডাক্তার সাহেব'।
সেই থেকে আমরা সবাই স্যারের ভীষণ ভক্ত।
দীর্ঘদিনের চাকুরির সুবাধে আমি আমার এলাকায় কিছুটা পরিচিত। শিশু সার্জারী বিষয়ক কিছু পেলেই আমি সোজা ডা. ময়না স্যারের কাছে পাঠিয়ে দিতাম।
ময়না স্যার আমাদের না বলেই চলে গেলেন। তার করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। হঠাৎ কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়েছে।
আমার মেয়ে স্যারের খুব ভক্ত।
মেয়েকে এখনোও জানাইনি স্যারের মৃত্যু সংবাদ কারন বাচ্চা মানুষ, সইতে পারবেনা। কি করে জানাই বুঝতেও পারছিনা।
ডা. সাঈদ এনাম
(ডিএমসি-কে ৫২, বিসিএস -২৪)
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি
সিওমেক।
আপনার মতামত দিন: